রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাম্পত্য জীবন ( প্রথম )

কোন মন্তব্য নেই
মাওলানা আহমাদ শফী
বিবাহ এবং দাম্পত্য জীবন
বলতে সাধারণত সুখ-স্বপ্ন
ঘেরা সংসার জীবনের যে রঙ্গীন
একটা চিত্র
মানসপটে ভেসে ওঠে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
বিবাহ এবং দাম্পত্য জীবনে সে ধরনের
কোন আবেগময় স্বপ্ন কিংবা সাধ
বাস্তবায়নের সামান্যতম কোন
প্রয়াসও দৃষ্টিগোচর হয় না। বরং তার
জীবনের ছোটবড় প্রতিটি পদক্ষেপই
ছিল একটা সুনির্দিষ্ট আদর্শ
বাস্তবায়নের লক্ষে পরিচালিত, তদ্রুপ
তার সংসার ও দাম্পত্য বন্ধনও ছিল
সেই একই লক্ষ্যপানে অগ্রসর হওয়ারই
একটা সুচিন্তিত প্রয়াসমাত্র। কোন
প্রকার ভোগবিলাস কিংবা মানুষের
চিরাচরিত জৈবিক তাগিদ যে এতে ছিল
না, এটা তার জীবনচরিত অধ্যয়ন
করলেই সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়।
তদানীন্তন আরব সমাজে নারী পুরুষের
মেলামেশা কিংবা যৌনাচারের অধ্যায়
শুরু হতো নারীর কৈশোরের
সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার বহু পূর্ব
থেকেই। তাছাড়া যৌবনে পদার্পণ করার
পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছিল
সে সমাজের প্রচলিত সাধারণ রেওয়াজ।
এমনকি অনেক গোত্রে বাল্যবিবাহ
কৌলিন্যের পরিচায়ক বলে গণ্য হত,
কিন্তু সে সমাজে প্রতিপালিত হয়েও
মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ে করেছিলেন
পঁচিশ বছর বয়সে চল্লিশ বছর বয়সের
মহিয়ষী খাদীজা রা. কে। তাও নিজের
তরফ থেকে
উদ্যোগী হয়ে নয়, বরং হযরত
খাদীজা রা.-এর পক্ষ
থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও স্বতঃস্ফ
‚র্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরবের
সর্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক
সুদর্শন, যুবক, তাঁর অতুলনীয় চরিত্র
মাধুরীর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল
আরবের প্রতিটি ঘরে ঘরে। ফলে তাঁর
সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য
বহু সম্ভ্রান্ত পরিবারের
কুমারী কন্যারা শত ব্যাকুল ও
উদগ্রীব ছিল। এ জাতীয় বহু চমকপ্রদ
বিবরণ হাদীস শাস্ত্র ও বিভিন্ন
নির্ভরযোগ্য সীরাত
গ্রন্থে সন্নিবেশিত রয়েছে। কিন্তু
হযরত খাদীজা রা.-এর সাথে বৈবাহিক
সম্বন্ধ স্থাপনের পূর্বে তিনি কোন
বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন
কিংবা পয়গাম পঠিয়েছেন এ ধরনের
কোন ঘটনার বর্ণনা কোথাও
পাওয়া যায় না।
অন্য দিকে আকীদাগত সংঘাতের
কারণে মক্কার কাফির-মুশরিক
তথা তাঁর দেশবাসীরা তাকে উম্মাদ ও
যাদুকর বলেছে, পূর্বপুরুষদের ধর্মের
প্রতি বিদ্রোহী ও বিকৃত মস্তিষ্ক
বলেছে; সম্ভাব্য সর্বপ্রকারের শক্ত
ভাষায় গালি দিয়েছে। এমনকি অনেক
সময় অভিসম্পাতও করেছে।
এতদসত্তে¡ও তাঁর চরম বিরুদ্ধাচারী ও
প্রাণের শত্র“রাও কোনদিন তাঁর
নৈতিক চরিত্রের প্রতি কটাক্ষ
করে কোন মন্তব্য করেনি। তাঁর
অনুপম ও নির্মল চরিত্র ও তাঁর
ব্যক্তিত্বের প্রতি কোনরুপ অপবাদ
আরোপ কিংবা কলঙ্ক লেপনের চিন্তাও
করত না বরং সততা ও
ন্যায়পরায়ণতার জন্য তাঁর চির
শত্র“রাও তাকে ‘আল আমিন’ অভিধায়
বিভূষিত করেছিল।
নবী-রাসূলগণ আ.কে আল্লাহ
তায়ালা জন্মকাল থেকেই সর্বপ্রকার
অন্যায়-অবিচার ও শালীণতা বর্জিত
সর্বপ্রকার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিশেষ
ব্যবস্থাধীনেই মুক্ত রাখেন। উল্লেখ্য,
আম্বিয়ায়ে কেরাম ও
অলী আল্লাহগণের মধ্যে এটা অন্যতম
পার্থক্য।
কোন ব্যক্তি জীবনের প্রথম
দিকে চরম অনাচারী হলেও এক
পর্যায়ে এসে তার জীবনে অমূল
পরিবর্তন সাধিত
হতে পারে এবং নিরলস সাধনা ও
মুজাহাদা করে সে প্রথম শ্রেণীর একজন
কামেল অলীতে পরিণত হতে পারেন।
অথচ কোন নবী কিংবা রাসূলের
জীবনে এরূপ ঘটনার কোন নযীর
পাওয়া যায় না। তাদের নবুওয়াত পূর্ব
জীবনও ছিল সর্বপ্রকার অনাচার ও
কদর্যতা মুক্ত পুত-পবিত্র।
মহান আদর্শ পৃথিবীর
বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য
তাঁদেরকে নবুওয়াতের মর্যাদায়
অধিষ্ঠিত করা হতো, সে কারণে তাঁদের
নবুওয়াতপূর্ব জীবন ছিল
দাওয়াতে নবুওয়াতের অনুকূল ক্ষেত্র
প্রস্তুত করার প্রয়াসে পূর্ণ। তাই
মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বৈবাহিক
জীবনের সূচনাতেই দেখা যায় তাঁর
চেয়ে বয়সে পনেরো বছর বড় একজন
বৃদ্ধা বিধবা নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ
করেছেন।
ইতঃপূর্বে যিনি পর্যায়ক্রমে দু’দু’জন
স্বামীর ঘর করেছেন ও একাধিক
সন্তানের মা হয়েছেন। এমন এক রমণীর
সাথেই মক্কার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভ্রান্ত
পরিবারের সন্তান, শত্র“ মিত্র
নির্বিশেষে সকলের নিকট
সমানভাবে প্রশংসিত, সমাদৃত সুদর্শন
ও সুঠামদেহের অধিকারী এক
তাগড়া যুবক হযরত মুহাম্মাদ
মুস্তফা সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এমন একজন
মহিলার সাথে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহ নিশ্চয়
কোন আবেগ তাড়িত হয়ে কেবল
দাম্পত্য জীবনের স্বাদ আহরণের
উদ্দেশ্যে ছিল না,
একথা আশা করি চোখে আঙ্গুল
দিয়ে বোঝানোর প্রয়োজন
হবে না কারো জন্যই।
এখন আসুন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাথে চল্লিশোর্ধ্ব মহিয়সী খাদীজা রা.-
এর এ অসম বিবাহের পিছনে কী রহস্য
লুকিয়ে আছে সে ব্যাপারে আলোচনা করা
যাক। সে গুঢ় রহস্য সম্পর্কে কুরআন
মাজীদের সূরা দোহার তিনটি আয়াত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে হযরত খাদীজা রা.-এর
বিবাহের মূল উদ্দেশ্য ও তাৎপর্যের
প্রতি ইঙ্গিত করে অবতীর্ণ
হয়েছে বলে তাফসীর বিশারদগণ
অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
নিম্নে আয়াতত্রয়ের অনুবাদ
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ উদ্ধৃত
করা হলো- (তরজমা)
“তিনি কি আপনাকে অনাথরূপে পাননি?
অতঃপর আপনাকে নিরাপদ আশ্রয়
প্রদান করেছেন? আপনাকে উৎকণ্ঠিত
ও দ্বিধাগ্রস্ত পাওয়ার পর সঠিক
পথে পরিচালিত করেছেন, আর
আপনাকে অভাবগ্রস্ত দেখে সম্পদের
অধিকারী করেছেন।” (সূরা দ্বোহা :
৬-৮)
প্রকাশ থাকে যে,
বিশ্বনবী রহমতে আলম বিশ্বমানবতার
মুক্তিদূত মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ
মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় তাঁর
পিতৃবিয়োগ ঘটে। অনাথ
হয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়ার পর
মাতা পরলোকগমন করলে এ অনাথ ও
অসহায় মুহাম্মাদ প্রথমে দাদা আব্দুল
মুত্তালিব ও তৎপর শ্রদ্ধেয়
চাচা মহামতি আবু তালেবের নিবিড়
স্নেহের ছায়ায় মহান আল্লাহ তার
আশ্রয়ের সুবন্দোবস্ত করেছিলেন।
বয়ঃপ্রাপ্তির পর তিনি তদানীন্তন
সমাজ ও পরিবেশের সার্বিক অবক্ষয়
দেখে নিদারুন উদ্বিগ্ন ও বিষণœ
হয়ে পড়েছিলেন এবং দেশ ও জাতিকে এ
পতন্মুখ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার
জন্য সর্বদা ব্যাকুল থাকতেন, জাতির
মুক্তিকামনায় তিনি হৃদয়ের গহীনে যেন
এক কঠিন মানসিক চাপ অনুভব
করছিলেন। এ প্রতিকুল পরিবেশ ও
সমাজকে নৈরাজ্যের গভীর
অমানিশা থেকে উত্তরণের জন্য
মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তরে মহান
আল্লাহর পক্ষ থেকে নানারূপ
সমাজকল্যাণমূলক কর্মপ্রচেষ্টার
প্রেরণা সৃষ্টি করা হয়েছিল।
যৌবনের প্রারম্ভেই তিনি ‘হিলফুল
ফুযুল’ নামক একটি সমাজকল্যাণ
সংস্থা গঠন করেন। ‘ফুজ্জার যুদ্ধ’
নামক দীর্ঘকালব্যাপী বিবদমান
গোত্রীয় কলহের অবসান ঘটিয়ে এ
সর্বনাশা অন্তর-কলহের
কারণে সর্বস্বহারা নিঃস্ব
মক্কাবাসী ও আশপাশের
গোত্রগুলোকে শান্তি ও নিরাপত্তার
পথে অগ্রসর করেছিলেন।
তৃতীয়ত, বহু পালিত সন্তানের
ভারে জর্জরিত পিতৃব্যের অভাব-
অনটনের সংসারে থেকে যে মানসিক
যন্ত্রণা ও অস্ব¯িÍর সম্মুখীন
তিনি হয়েছিলেন,
তা থেকে মুক্তি এবং ভবিষ্যত
জীবনে জীবিকা অর্জনের সকল
চিন্তাভাবনা দূরে নিক্ষেপ
করে নবুয়তের গুরু দায়িত্ব পালন করার
প্রাথমিক পর্যায়ের সঙ্কটময়
দিনগুলিতে জীবন জীবিকার দিক
থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত করে দেয়ার
ব্যবস্থা ছিল মক্কার
সর্বাপেক্ষা ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত
মহিলা হযরত খাদীজাতুল কুবরা রা.
সাথে বিশ্বনবী এর বিবাহ বন্ধনের মূল
রহস্য।
হযরত খাদীজা রা.-এর সাথে অতিবাহিত
দাম্পত্য জীবনের সুদীর্ঘ পঁচিশ বছরের
মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল নবুওয়াত
লাভ করার পূর্বের পাঁচ/ছয়টি বছর।
যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংসার ও পরিবার
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শহর থেকে প্রায়
তিন মাইল দূরে হেরা পর্বতের গুহায়
ধ্যানমগ্ন থাকতেন তখন
এবং নবওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে শুরু
করে এ মহাসত্য প্রচারের চরম
সঙ্কটময় দশটি বছর অর্থাৎ
মক্কা জীবনের সমাপ্তি পর্যন্ত
অকল্পনীয় ধৈর্য, সাহসিকতা,
সহমর্মিতা ও দৃঢ়তার সাথে পরম
মমতার বাধনে মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আগলে রাখার
কঠিন দায়িত্ব পালন করার বিরল
কৃতিত্ব ও সম্মান কেবল হযরত
খাদীজা রা.-এর একার।
এখানে মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য
পুণ্যাত্মা পতœীগণের কোন দখল নেই।
বিশ্বনবীর হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকার
সে ঐতিহাসিক সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নিয়মিত
প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় নিজে বহন
করে হযরত খাদীজা রা. উপস্থিত হতেন
নবীজীর সান্নিধ্যে এবং কিছুক্ষণ
সেখানে অবস্থান করতেন, প্রয়োজনীয়
কাজ কর্ম সম্পন্ন করে পুনরায়
ঘরে ফিরে আসতেন। দূরদর্শী বিচক্ষণ
নারী মহিয়সী খাদিজা রা.-এর মনে এ
কঠিন দায়িত্ব পালন করার
ব্যাপারে ছিল না কোন অমনোযোগিতা,
আর না ছিল সংসার জীবনের
প্রতি বিতৃষ্ণা আর না প্রিয়তম
স্বামীর প্রতি সামান্যতম কোন
অভিযোগ। বরং তিনি যেন
অন্তরদৃষ্টি দ্বারা স্পষ্ট
দেখতে পেয়েছিলেন যে, তার এ প্রিয়তম
স্বামী দ্বারা মহান আল্লাহ
মানবজাতির বৃহৎ কোন কল্যাণ সাধনের
ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। তাই
নিজেকে তিনি অনাগত সে মহাকল্যাণের
পথে একান্তভাবে সমর্পণ করার
মধ্যেই যেন খুঁজে পেয়েছিলেন পরম
তৃপ্তি।
আরো পড়ুন

Post by Dawtul Haq.
Blog eidtor_Syed Rubel.

ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু ,বৌদ্ধ, নাস্তিক ও দেশের নারীবাদীদের ইসলামের বিরুদ্ধে করা সকল অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গাঁ জবাব দেখুন এই পোস্ট টি থেকে

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :