সিয়ামের ফজিলত

কোন মন্তব্য নেই
সিয়ামের ফজিলতসমূহ :
এক. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের
সাথে সিয়ামের সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন।
এমনিভাবে তিনি সকল ইবাদত-
বন্দেগি থেকে সিয়ামকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন।
যেমন তিনি এক হাদিসে কুদসিতে বলেন :

ﻛﻞ ﻋﻤﻞ ﺍﺑﻦ ﺁﺩﻡ ﻟـﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ،
ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻲ ﻭﺃﻧﺎ ﺃﺟﺰﻯ ﺑﻪ. ﺭﻭﺍﻩ
ﻣﺴﻠﻢ
মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য,
কিন্তু সিয়াম শুধু আমার জন্য, আমিই
তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম)
এ হাদিস দ্বারা আমরা অনুধাবন
করতে পারি নেক আমলের মাঝে সিয়াম
পালনের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কত
বেশি। তাই সাহাবি আবু হুরায়রা রা. যখন
বলেছিলেন -
ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺮﻧﻲ ﺑﻌﻤﻞ، ﻗﺎﻝ
ﻋﻠﻴﻚ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻋﺪﻝ ﻟـﻪ .
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ
হে রাসূলুল্লাহ ! আমাকে অতি উত্তম
কোন নেক আমলের নির্দেশ দিন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :
তুমি সিয়াম পালন করবে। মনে রেখ এর
সমমর্যাদার কোন আমল নেই। (নাসায়ি)
সিয়ামের এত মর্যাদার কারণ
কী তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভাল
জানেন। তবে, আমরা যা দেখি তা হল,
সিয়াম এমন একটি আমল যাতে লোক
দেখানো ভাব থাকে না। বান্দা ও আল্লাহ
তাআলার মধ্যকার একটি অতি গোপন
বিষয়। সালাত হজ, জাকাতসহ অন্যান্য
ইবাদত-বন্দেগি কে করল তা দেখা যায়।
পরিত্যাগ করলেও বুঝা যায়। কিন্তু
সিয়াম পালনে লোক দেখানো বা শোনানোর
ভাবনা থাকে না। ফলে সিয়ামের
মধ্যে এখলাস বা আল্লাহর
প্রতি একনিষ্ঠতা নির্ভেজাল ও
বেশি থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন :—
ﻳﺪﻉ ﺷﻬﻮﺗﻪ ﻭﻃﻌﺎﻣﻪ ﻣﻦ ﺃﺟﻠﻲ
সিয়াম পালনকারী আমার জন্যই পানাহার
ও যৌনতা পরিহার করে। তাই সিয়াম
পালনকারী আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত
অন্য কিছুর আশা করে না।
দুই. সিয়াম
আদায়কারী বিনা হিসাবে প্রতিদান লাভ
করে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-
বন্দেগি ও সৎ কর্মের প্রতিদান
বিনা হিসাবে দেয়া হয় না।
বরং প্রত্যেকটি নেক আমলের
পরিবর্তে আমলকারীকে দশ গুণ
থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত প্রতিদান
দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
ﻛﻞ ﻋﻤﻞ ﺍﺑﻦ ﺁﺩﻡ ﻳﻀﺎﻋﻒ
ﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺃﻣﺜﺎﻟـﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺳﺒﻊ
ﻣﺌﺔ ﺿﻌﻒ. ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ:
) ﺇﻻ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻲ ﻭﺃﻧﺎ ﺃﺟﺰﻯ
ﺑﻪ . . .
মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের
প্রতিদান দশ থেকে সাত শত গুণ
পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ
তাআলা বলেন-কিন্তু সিয়ামের
বিষয়টা ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধু
আমার জন্য আমিই তার প্রতিদান দেব।
বর্ণনায় : মুসলিম
সারা জাহানের সর্বশক্তিমান
প্রতিপালক আল্লাহ নিজেই যখন এর
পুরস্কার দেবেন তখন
কি পরিমাণে দেবেন ? ইমাম আওজায়ী র.
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ
যে সিয়াম আদায় কারীকে প্রতিদান
দেবেন তা মাপা হবে না, ওজন
করা হবে না।
তিন. সিয়াম ঢাল ও
কুপ্রবৃত্তি থেকে সুরক্ষা:
সিয়াম পালনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কু-
প্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার দিক
নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :—
ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﺸﺒﺎﺏ! ﻣﻦ ﺍﺳﺘﻄﺎﻉ
ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻟﺒﺎﺀﺓ ﻓﻠﻴﺘﺰﻭﺝ، ﻓﺈﻧﻪ ﺃﻏﺾ
ﻟﻠﺒﺼﺮ، ﻭﺃﺣﺼﻦ ﻟﻠﻔﺮﺝ، ﻭﻣﻦ ﻟﻢ
ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ، ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻪ
ﻭﺟﺎﺀ. ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ
হে যুবকেরা ! তোমাদের
মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ
করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও
লজ্জাস্থানের সুরক্ষা দেয়। আর
যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন
সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার
রক্ষা কবচ। বর্ণনায় : বোখারি ও
মুসলিম
এমনিভাবে সিয়াম সকল অশ্লীলতা ও
অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
ﻭﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺟﻨﺔ، ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ
ﺻﻮﻡ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻼ ﻳﺮﻓﺚ ﻳﻮﻣﺌﺬ ﻭﻻ
ﻳﺼﺨﺐ، ﻓﺈﻥ ﺳﺎﺑﻪ ﺃﺣﺪ ﺃﻭ ﻗﺎﺗﻠﻪ
ﻓﻠﻴﻘﻞ ﺇﻧﻲ ﺍﻣﺮﺃ ﺻﺎﺋﻢ. ﺭﻭﺍﻩ
ﻣﺴﻠﻢ
সিয়াম হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের
মধ্যে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন
অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত
থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ
কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায়
তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম
পালনকারী। বর্ণনায় : মুসলিম
সিয়াম পালনকারী যেমনি নিজের
অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ
করে থাকে তেমনি সকল অশ্লীল আচরণ,
ঝগড়া-বিবাদ, অনর্থক কথা ও কাজ
থেকে নিজের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গক
ে হেফাজত করবে।
চার. সিয়াম জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল।
যেমন হাদিসে এসেছে -
ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺟﻨﺔ، ﻭﺣﺼﻦ ﺣﺼﻴﻦ ﻣﻦ
ﺍﻟﻨﺎﺭ. ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ
সিয়াম হল ঢাল ও জাহান্নামের আগুন
থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ। বর্ণনায় :
আহমদ। বোখারি ও মুসলিমের
হাদিসে এসেছে -
ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﻳﻮﻣﺎ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ
ﺑﺎﻋﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺟﻬﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺳﺒﻌﻴﻦ
ﺧﺮﻳﻔﺎ. ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ
যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে সিয়াম
পালন করবে আল্লাহ তার
থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (সত্তুর
বছরের) দুরত্বে সরিয়ে দেবেন।
বর্ণনায়: মুসলিম
উলামায়ে কেরাম বলেছেন, আল্লাহর
পথে সিয়াম পালনের অর্থ হল : শুধু
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
সিয়াম পালন করা। এমনিভাবে আল্লাহ
তাআলা বহু সিয়াম
পালনকারীকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। যেমন
হাদিসে এসেছে -
ﺇﻥ ﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﺪ ﻛﻞ ﻓﻄﺮ
ﻋﺘﻘﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻭﺫﻟﻚ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ .
ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ
ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর
এটা রমজানের প্রতি রাতে। বর্ণনায় :
আহমদ
পাঁচ. সিয়াম হল জান্নাত লাভের পথ।
হাদিসে এসেছে -
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ
ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ: ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺮﻧﻲ ﺑﺄﻣﺮ
ﻳﻨﻔﻌﻨﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ، ﻗﺎﻝ: ﻋﻠﻴﻚ
ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻣﺜﻞ ﻟﻪ. ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত
যে তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল,
আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন
যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি।
তিনি বললেন : তুমি সিয়াম পালন করবে।
কেননা, এর সমকক্ষ কোন কাজ নেই।
বর্ণনায় : নাসায়ি
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম
থেকে মুক্তি লাভের জন্য সিয়ামের
সাথে কোন আমলের তুলনা হয় না। সিয়াম
পালনকারীদের উপর আল্লাহর
অনুগ্রহের আরেকটি দৃষ্টান্ত হল
তিনি সিয়াম পালনকারীদের জন্য
জান্নাতে একটি দরজা নির্দিষ্ট
করে দেন। যে দরজা দিয়ে সিয়াম
পালনকারীরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ
করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
ﺇﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺎﺑﺎ ﻳﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﺮﻳﺎﻥ،
ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ ﻏﻴﺮﻫﻢ، ﻳﻘﺎﻝ :
ﺃﻳﻦ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ؟ ﻓﻴﻘﻮﻣﻮﻥ ﻻ
ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ ﻏﻴﺮﻫﻢ، ﻓﺈﺫﺍ
ﺩﺧﻠﻮﺍ ﺃﻏﻠﻖ، ﻓﻠﻢ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ .
ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ
জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম
রইয়ান। কেয়ামতের দিন সিয়াম
পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ
করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ
সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।
সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম
পালনকারীরা কোথায় ? তখন
তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ
করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ
করবে দরজা বন্ধ
করে দেয়া হবে ফলে তারা ব্যতীত অন্য
কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম
ছয়. সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ
আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
ﻭﺍﻟﺬﻱ ﻧﻔﺲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻴﺪﻩ ﻟﺨﻠﻮﻑ
ﻓﻢ ﺍﻟﺼﺎﺋﻢ ﺃﻃﻴﺐ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ
ﺭﻳﺢ ﺍﻟﻤﺴﻚ. ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺸﻴﺨﺎﻥ
যার হাতে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন
সে সত্তার শপথ, সিয়াম পালনকারীর
মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার
কাছে মেশকের ঘ্রাণ হতেও প্রিয়।
বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম। মুখের
গন্ধ বলতে পেট খালি থাকার
কারণে যে গন্ধ আসে সেটাকে বুঝায়।
দাঁত অপরিষ্কার থাকার কারণে যে গন্ধ
সেটা নয়।
সাত. সিয়াম ইহকাল ও পরকালের
সাফল্যের মাধ্যম। যেমন
হাদিসে এসেছে -
ﻟﻠﺼﺎﺋﻢ ﻓﺮﺣﺘﺎﻥ: ﻓﺮﺣﺔ ﻋﻨﺪ
ﻓﻄﺮﻩ، ﻭﻓﺮﺣﺔ ﻋﻨﺪ ﻟﻘﺎﺀ ﺭﺑﻪ .
ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ
সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ :
একটি হল ইফতারের সময় অন্যটি তার
প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়।
বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম
ইফতারের সময় আনন্দ হল এ
কারণে যে সিয়াম পূর্ণ করতে পারল ও
খাবার-দাবারের অনুমতি পাওয়া গেল।
এটা বাস্তব সম্মত আনন্দের বিষয়
যা আমাদের সকলের বুঝে আসে ও
অনুভব করি। অপরদিকে আল্লাহর
সাথে সাক্ষাতের যে আনন্দ তা অনুভব
করতে আমরা এখন না পারলেও
কেয়ামতের দিন পারা যাবে। যখন সকল
মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহমুখী থাকবে।
আট. সিয়াম কেয়ামতের দিন সুপারিশ
করবে। হাদিসে এসেছে -
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ:
)ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﻭﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻳﺸﻔﻌﺎﻥ ﻟﻠﻌﺒﺪ
ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ، ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺃﻱ
ﺭﺏ: ﻣﻨﻌﺘﻪ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻭﺍﻟﺸﻬﻮﺍﺕ
ﺑﺎﻟﻨﻬﺎﺭ، ﻓﺸﻔﻌﻨﻲ ﻓﻴﻪ. ﻭﻳﻘﻮﻝ
ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ : ﻣﻨﻌﺘﻪ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ،
ﻓﺸﻔﻌﻨﻲ ﻓﻴﻪ. ﻗﺎﻝ: ﻓﻴﺸﻔﻌﺎﻥ .
ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ
আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত যে,
নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সিয়াম
ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের
জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম
বলবে হে প্রতিপালক ! আমি দিনের
বেলা তাকে পানাহার ও
যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার
ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর।
কোরআন বলবে হে প্রতিপালক !
আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত
রেখেছি তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার
সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন,
অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল
করা হবে। বর্ণনায় : আহমদ
নয়. সিয়াম হল গুনাহ মাফ ও গুনাহের
কাফফারা। সিয়াম হল অনেকগুলো নেক
আমলের সমষ্টি। আর নেক আমল
পাপকে মুছে দেয়। আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন বলেন :—
ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺎﺕِ ﻳُﺬْﻫِﺒْﻦَ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺎﺕِ
)ﺳﻮﺭﺓ ﻫﻮﺩ114: )
সৎকর্ম অবশ্যই পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়।
সূরা হুদ : ১১৪
বহু হাদিস রয়েছে যা প্রমাণ করে যে,
নেক আমলকে বিভিন্ন ছোট খাট পাপ
সমূহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
অর্থাৎ নেক আমলের কারণে গুনাহ সমূহ
আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। যেমন
হাদিসে এসেছে -
ﻓﺘﻨﺔ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻲ ﺃﻫﻠﻪ ﻭﻣﺎﻟﻪ
ﻭﺟﺎﺭﻩ ﺗﻜﻔﺮﻫﺎ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺼﻴﺎﻡ
ﻭﺍﻟﺼﺪﻗﺔ. ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ
মানুষ যখন পরিবার-পরিজন,
প্রতিবেশী ও ধন-সম্পদের কারণে গুনাহ
করে ফেলে তখন সালাত, সিয়াম,
সদকা সে গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়।
বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম
আর রমজান তো গুনাহ মাফ ও
মিটিয়ে দেয়ার
ক্ষেত্রে আরো বেশি সুযোগ দিয়েছে।
হাদিসে এসেছে -
ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ
ﻏﻔﺮ ﻟـﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ. ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺸﻴﺨﺎﻥ
যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের
সাথে সিয়াম পালন করবে তার অতীতের
গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় :
বোখারি ও মুসলিম
ইহতিসাবের অর্থ হল আল্লাহর পক্ষ
থেকে পুরস্কার পাওয়া যাবে এ দৃঢ়
বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার
সাথে সন্তুষ্টচিত্তে আদায় করা।
হাদিসে আরো এসেছে -
ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﻭﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺇﻟﻰ
ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ
ﻣﻜﻔﺮﺍﺕ ﻟﻤﺎ ﺑﻴﻨﻬﻦ ﺇﺫﺍ ﺍﺟﺘﻨﺒﺖ
ﺍﻟﻜﺒﺎﺋﺮ. ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এর মধ্যবর্তী সময়
ও এক জুমআ থেকে অপর জুমআও এক
রমজান থেকে অপর রমজানের
মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে সকল পাপ
হয়ে যায় তার কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত)
হিসেবে সালাতকে গ্রহণ করা হয়,
যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
সিয়াম ছোট পাপগুলোকে মিটিয়ে দেয় আর
তাওবা করলে কবিরা গুনাহ মাফ
করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
ﺇِﻥْ ﺗَﺠْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻛَﺒَﺎﺋِﺮَ ﻣَﺎ ﺗُﻨْﻬَﻮْﻥَ ﻋَﻨْﻪُ
ﻧُﻜَﻔِّﺮْ ﻋَﻨْﻜُﻢْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗِﻜُﻢْ ﻭَﻧُﺪْﺧِﻠْﻜُﻢْ
ﻣُﺪْﺧَﻠًﺎ ﻛَﺮِﻳﻤًﺎ) ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ 31: )
তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার
মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত
থাকলে তোমাদের লঘুতর
পাপগুলো ক্ষমা করে দেব।
এবং তোমাদের সম্মানজনক
স্থানে প্রবেশ করাব। সূরা নিসা : ৩১
এ আয়াত ও হাদিস দুটো দ্বারা প্রমাণিত
হল আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ক্ষমার
ওয়াদা করা হয়েছে তা তিনটি শর্ত
সাপেক্ষে।
প্রথম : রমজানের সিয়াম পালন
করতে হবে ঈমানের সাথে। অর্থাৎ
আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের
প্রতি ঈমান এবং সিয়াম যে একটি ফরজ
ইবাদত এর প্রতি বিশ্বাস। সিয়াম
পালনকারীকে আল্লাহ যে সকল পুরস্কার
দেবেন তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
দ্বিতীয় : সিয়াম পালন
করতে হবে ইহতিসাবের সাথে। ইহতিসাব
অর্থ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব
ও পুরস্কারের আশা করা, তাকে সন্তুষ্ট
করতেই সিয়াম পালন করা আর
সিয়ামকে বোঝা মনে না করা।
তৃতীয় : কবিরা গুনাহ
থেকে দূরে থাকতে হবে। কবিরা গুনাহ ঐ
সকল পাপকে বলা হয় যেগুলোর
ব্যাপারে ইহকালীন শাস্তির বিধান
দেয়া হয়েছে, পরকালে শাস্তির
ঘোষণা রয়েছে, অথবা আল্লাহর ও তার
রাসূলের পক্ষ থেকে লানত
(অভিসম্পাত) বা ক্রোধের
ঘোষণা রয়েছে। যেমন, শিরক করা, সুদ
খাওয়া, এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা,
ব্যভিচার করা, জাদু-টোনা, অন্যায়
হত্যা, মাতা-পিতার সাথে দুর্ব্যবহার,
আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ,
মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা মামলা, মাদক
সেবন, ধোঁকাবাজি, মিথ্যা শপথ, অপবাদ
দেয়া, গিবত বা পরদোষচর্চা,
চোগলখোরি, সত্য গোপন করা -ইত্যাদি।
কোন ধরনের সিয়াম এ সকল ফজিলত
অর্জন করতে পারে :—
যে সকল ফজিলত ও সওয়াবের
কথা এতক্ষণ আলোচনা করা হল তা শুধু
ঐ ব্যক্তি লাভ করবে যে নিম্নোক্ত
শর্তাবলি পালন করে সিয়াম আদায়
করবে।
(১) সিয়াম একমাত্র আল্লাহর জন্য
আদায় করতে হবে।
মানুষকে দেখানো বা শোনানো অথবা মানুষের
প্রশংসা অর্জন কিংবা স্বাস্থ্যের
উন্নতির নিয়তে সিয়াম আদায়
করবে না।
(২) সিয়াম আদায়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর
রাসূলের সুন্নত অনুসরণ করতে হবে।
সেহরি, ইফতার, তারাবীহসহ সকল বিষয়
রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী আদায়
করতে হবে।
(৩) শুধু খাওয়া-দাওয়া ও যৌনাচার
থেকে বিরত থাকলে যথেষ্ট হবে না।
মিথ্যা, পরনিন্দা, অশ্লীলতা,
ধোঁকাবাজি, ঝগড়া-বিবাদ সহ সকল
প্রকার অবৈধ কাজ হতে বিরত
থাকতে হবে। মুখ যেমন খাবার
থেকে বিরত থাকে, তেমনিভাবে চোখ
বিরত থাকবে অন্যায় দৃষ্টি থেকে, কান
বিরত থাকবে অনর্থক কথা ও গান-
বাজনা শোনা থেকে, বা বিরত থাকব
অন্যায়-অসৎ পথে চলা থেকে।
সিয়াম পালনে মহান উদ্দেশ্য এটাই যে,
সিয়াম পালনকারী শরিয়তের
দৃষ্টিতে সকল প্রকার অন্যায় ও গর্হিত
আচার-আচরণ থেকে নিজেকে হেফাজত
করবে। অতএব সিয়াম হল সকল ভাল
বিষয় অর্জন ও অন্যায়-গর্হিত কাজ ও
কথা বর্জন অনুশীলনের
একটি শিক্ষালয়।
তাইতো দেখা যায় রাসূলে করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন :—
ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺪﻉ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺰﻭﺭ ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ
ﺑﻪ ﻭﺍﻟﺠﻬﻞ ﻓﻠﻴﺲ ﻟﻠﻪ ﺣﺎﺟﺔ ﺃﻥ
ﻳﺪﻉ ﻃﻌﺎﻣﻪ ﻭﺷﺮﺍﺑﻪ. ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
যে মিথ্যা কথা ও কাজ
এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল
না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন
প্রয়োজন নেই। বর্ণনায় : বোখারি
তিনি আরো বলেছেন :—
ﺭﺏ ﺻﺎﺋﻢ ﺣﻈﻪ ﻣﻦ ﺻﻴﺎﻣﻪ
ﺍﻟﺠﻮﻉ ﻭﺍﻟﻌﻄﺶ، ﻭﺭﺏ ﻗﺎﺋﻢ
ﺣﻈﻪ ﻣﻦ ﻗﻴﺎﻣﻪ ﺍﻟﺴﻬﺮ. ﺭﻭﺍﻩ
ﺃﺣﻤﺪ
অনেক সিয়াম
পালনকারী আছে যারা তাদের সিয়াম
থেকে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা অর্জন করে।
আবার অনেক সালাত
আদায়কারী আছে যারা তাদের সালাত
থেকে শুধু রাত-জাগা লাভ করে থাকে। (এ
ছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন
প্রতিদান লাভ করে না) বর্ণনায় :
আহমদ
সমাপ্ত

ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু ,বৌদ্ধ, নাস্তিক ও দেশের নারীবাদীদের ইসলামের বিরুদ্ধে করা সকল অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গাঁ জবাব দেখুন এই পোস্টটি থেকে :

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :