বিশ্ববিখ্যাত আলেম শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছাইমীন (রঃ)এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

কোন মন্তব্য নেই
নাম: আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন
ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আত্-তামীমী।
জম্ম: তিনি হিজরী ১৩৪৭ সালের
২৭ রামাযানের
রাত্রিতে সঊদী আরবের আল ক্বাসীম
প্রদেশের উনাইযা শহরে জম্ম গ্রহণ
করেন।
শিক্ষা জীবনঃ শিক্ষা জীবনের
শুরুতে তিনি তাঁর নানার কাছ
থেকে কুরআন শিক্ষা করেন। অতঃপর
আরবী ভাষা ও অন্যান্য
বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর
মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি অতি অল্প
বয়সেই কুরআন মজীদ মুখস্থ করেন
এবং হাদীছ ও ফিক্হসহ কতিপয়
পুস্তিকাও মুখস্থ করেন।
অতঃপর তিনি তাওহীদ, ফিক্হ এবং নাহু
শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করার পর
শায়খ আবদুর রাহমান বিন নাসির আল-
সা’দী (রঃ)এর পাঠশালায় যোগদান
করেন। সেখানে তিনি তাফসীর, হাদীছ,
ফারায়েয, ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ
এবং আরবী ব্যকরণ অধ্যয়ন করেন।
যে সমস্ত শায়খদের ইলম, আকীদাহ
এবং পাঠদান পদ্ধতির
দ্বারা তিনি সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত
হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শায়খ আব্দুর
রাহমান বিন নাসের আল-সা’দী (রঃ)
সর্বপ্রথম।
উনাইযাতে থাকাবস্থায় তিনি শায়খ
আব্দুর রাহমান বিন আলী বিন আওদান
(রঃ)এর নিকট ইলমে ফারায়েয
এবং শায়খ আব্দুর রাজ্জাক
আফীফী (রঃ) এর নিকট ইলমে নাহু
এবং ইলমে বালাগাত শিক্ষা করেন।
রিয়াদ শহরে ইসলামিক
শিক্ষা ইন্সটিটিউট
খোলা হলে তিনি বন্ধুদের
পরামর্শক্রমে এবং তাঁর উস্তাদ শায়খ
আব্দুর রাহমান সা’দীর
অনুমতিক্রমে তথায় ভর্তি হন।
সেখানে তিনি দু’বছর অধ্যয়ন
কালে শায়খ মুহাম্মাদ আল-আমীন
শানকীতী, আব্দুল আজীজ নিব নাসের
বিন রাশীদ এবং শায়খ আব্দুর রাহমান
আল-আফ্রিকীসহ অন্যান্য উস্তাদদের
নিকট থেকে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ
পান। এ সময়ই আল্লামা ইবনে বায
(রঃ)এর কাছে উপস্থিত হয়ে ছহীহ
বুখারী এবং ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ)
এর লিখিত বিভিন্ন কিতাব অধ্যয়ন
করেন। তিনি তাঁর কাছ থেকে হাদীছ
এবং ফিকহী মাজহাব সম্পর্কে বিশেষ
জ্ঞান অর্জন করেন। ইলম অর্জনের
ক্ষেত্রে যাদের
দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছেন
ইবনে বায (রঃ) ছিলেন তাঁদের
মধ্যে দ্বিতীয়।
অতঃপর তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বিন
সঊদ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে
একাডেমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত
করে উনাইযায় ফেরত
এসে উনাইযা জামে মসজিদে পাঠ দান
শুরু করেন। তাঁর উস্তাদ আব্দুর
রাহমান সা’দী ইন্তেকাল করার পর
উন্য়াযা জামে মসজিদের ইমাম ও
খতীবের দায়িত্ব পালনসহ উস্তাদের
প্রতিষ্ঠিত উনায়যা কেন্দ্রীয়
লাইব্রেরীতে শিক্ষা দানের দায়িত্ব
পালন করেন। ছাত্রের
সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে লাইব্রেরীতে
স্থান দেয়া অসম্ভব হওয়ায় মসজিদেই
ক্লাশ নেওয়া শুরু করেন। এ
পর্যায়ে সঊদী আরবের বাইরে থেকেও
বিপুল সংখক ছাত্রের আগমণ
ঘটতে থাকে। জীবনের শেষ কাল
পর্যন্ত তিনি অত্র
মসজিদে শিক্ষা দানে ব্যস্ত ছিলেন।
সাঊদী সরকারের উলামা পরিষদেরও
তিনি সদস্য ছিলেন।
ব্যক্তিগত আমল-আখলাকঃ
শায়খ একজন উঁচু মানের আলেম হওয়ার
সাথে সাথে উন্নত চরিত্রের
অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন
অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল, বিনয়ী, নম্র
এবং আল্লাহ ভীরু।
জীবনের প্রতিটি কাজে তিনি রাসূল
(সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর
সুন্নাত বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকতেন।
ফতোওয়া দানের
ক্ষেত্রে তিনি তাড়াহুড়া না করে
ধীরস্থীরতা অবলম্বন করতেন।
তিনি মানুষের অভাব-অভিযোগের
কথা শুনতেন এবং সাধ্যানুসারে তাদের
প্রয়োজন পূরণ করতে সচেষ্ট
থাকতেন। বিভিন্ন সমাজ সেবা মূলক
সংগঠনকে তিনি বিশেষভাবে সহযোগিতা
প্রদান করতেন।
দাওয়াতী কর্মতৎপরতাঃ
তিনি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত একজন
আলেম এবং দাঈ। পৃথিবীতে এমন কোন
তালেবে ইলম পাওয়া যাবেনা, যে শায়খ
ইবনে উছাইমীন সম্পর্কে অবগত নয়।
প্রচন্ড রোগে আক্রান্ত অবস্থায়ও
তিনি মক্কা শরীফে দারস্
এবং তালীমের কাজ আন্জাম দিতেন।
মৃত্যুর ছয়মাস পূর্বে তিনি চিকিৎসার
জন্য আমেরিকা সফরে গিয়ে বিভিন্ন
ইসলামী সেন্টারে উপস্থিত হয়ে লেকচার
প্রদান করেন। তথায় তিনি জুমআর
খুৎবা দেন এবং ইমামতি করেন।
সাঊদী আরব আল কুরআন রেডিওতেও
তিনি নিয়মিত শ্রোতাদের প্রশ্নের
উত্তর প্রদান করতেন।
ইলমী খিদমতঃ
ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম নামে তাঁর
একটি প্রসিদ্ধ কিতাব রয়েছে। এই
কিতাবটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ হওয়ার
সাথে সাথে বাংলাভাষী মুসলিমগণের
মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
দেশে ও বিদেশে কিতাবটি বহুবার
ছাপা হয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর রচিত
কিতাব ও পুস্তিকার সংখ্যা অনেক।
তাঁর লেখনীর মধ্যে রয়েছেঃ-
১) শারহুল আকীদাহ আল-
ওয়াসিতীয়াহ।
২) কাশফুশ্ শুবহাত।
৩) আল কাওয়ায়েদুল মুছলা
৪) শারহুল আরবাঈন আন নাবুবীয়াহ।
৫) কিতাবুল ইলম।
৬) আশ্ শারহুল মুমতিউ (সাত ভলিওম)
৭) শারহু ছালাছাতুল উসূল
৮) আল উছূল মিন ঈলমিল উছূল।
এছাড়া রয়েছে তাঁর আরো অসংখ্য
ক্যাসেট ও ছোট ছোট পুস্তিকা, যা তাঁর
নামে প্রতিষ্ঠিত ইবনে উছাইমীন
কল্যাণ সংস্থা বিশেষ গুরুত্ব
সহকারে প্রচার করে থাকে।
বর্তমানে তাঁর ইসলামের খিদমত সমূহ
ওয়েব সাইটেও পাওয়া যায়।
ঠিকানাঃ
http://
www.ibnothaimeen.com/
index.shtml
পরলোক গমণঃ
এই স্বনামধন্য ও বিশ্ববরেণ্য
আলেমে দ্বীন দীর্ঘ দিন ইসলামের
খেদমত আন্জাম দেয়ার পর ১৪২১
হিঃ শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখ
মাগরিবের নামাযের সামান্য
পূর্বে ইন্তেকাল করেন। তাঁর
মৃত্যুতে সঊদী আরবের বাদশাসহ রাজ
পরিবারের সকল সদস্য, সে দেশের সকল
আলেম এবং সর্বস্তরের জনগণ
শোকাহত হন। বিশ্ব এক অপূরণীয়
ক্ষতি অনুভব করে।
আল্লাহর কাছে দু’আ করি তিনি যেন
শায়খের সমস্ত দ্বীনি খেদমত কবূল
করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল
ফেরদাউসে স্থান প্রদান করেন।
আমীন॥
আব্দুল্লাহ শাহেদ
Post on Dineralo.
Next post উমার (রাঃ) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন।

ব্লগ সম্পাদক ও এ্যাডমিনঃসৈয়দ রুবেল উদ্দিনব্লগের প্রকাশিত পোস্ট গুলি ফেসবুকে শেয়ার করে আমাদের চলার পথকে আরো গতিময় করে তুলুন ।আমরা দিন রাত খাটিয়ে পোস্ট গুলি লেখি ।ব্লগে প্রকাশ করে আপনাদেরকে উপহার দেয় ।আপনারা যদি শেয়ার না করেন?তাহলে আমরা তো সামনে এগিয়ে যেতে পারবোনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :