বিবাহ পদ্ধতি -হযরত ফাতেমার বিবাহ

কোন মন্তব্য নেই
বিবাহ পদ্ধতি
উপযুক্ত প্রস্তাব এলে বিবাহ
সম্পাদনে বিলম্ব করা ঠিক নয়। এক
হাদীসে বলা হয়েছে যে,
ﻣﻦ ﺑﻠﻐﺖ ﺍﺑﻨﺘﻪ ﺍﺛﻨﺘﻲ ﻋﺸﺮﺓ
ﺳﻨﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﺘﺰﻭﺟﻬﺎ ﻓﺎﺻﺎﺑﺖ ﺍﺛﻤﺎ
ﻓﺎﻧﻤﺎ ﺍﺛﻤﻪ ﻋﻠﻲ ﺍﺑﻴﻪ
যার মেয়ের বয়স ১২ হয় আর বিবাহ
না দেয়, এতে যদি সে গোনাহে লিপ্ত হয়।
তাহলে সেই গোনাহের জন্য তার
পিতা সম্পূর্ণরূপে দায়ী। (মিশকাত
২/২৭১)
তিরমিযি শরীফের হাদীসে এসেছে যে,
হযরত আলীকে নির্দেশ
দিয়ে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে,
তিনটি কাজে বিলম্ব করবে না,
নামাযের সময় হলে, জানাযার জন্য মৃত
ব্যক্তির লাশ হাজির হলে আর
বালেগা মেয়ের জন্য কুফু মুতাবিক
উপযুক্ত বিবাহের প্রস্তাব এলে। এই
তিনটি কাজে বিলম্ব করতে নিষেধ
করা হয়েছে। অসংখ্য হাদীসে এ
ব্যাপারে বিশেষভাবে তাকীদ
করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়তে বিবাহ
সম্পাদন অত্যন্ত সহজ সরল
করে দিয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগ
সমূহে অতি সহজ-
সরলভাবে শরীয়তসম্মত উপায়েই
সাধারণত: বিবাহ সম্পাদিত হতো। সেই
যুগে কোন প্রকার যৌতুকের
সমস্যা ছিল না। বরং অনেক সময়
তো বিবাহ স্বাভাবিকভাবে সম্পাদন
হওয়ার পর লোকেরা বিবাহ
সম্পর্কে জানতে পারতো যে, অমুকের
সাথে অমুকের বিবাহ হয়েছে।
এমনকি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবগত
করা এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা বিবাহ
পড়িয়ে বরকত হাসিল করাও
জরুরী মনে করা হতো না। অথচ
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি এবং মুহাব্বত
সাহাবাদের অন্তরে যে কত অধিক
পরিমানে ছিল তা বলার
অপেক্ষা রাখে না। বড়ই পরিতাপের
বিষয় যে, আমরা ইসলামী শরীয়তের
বিশ্বাসী এবং অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও
বিধর্মীদের অনুকরণ
এবং অনুসরণে নিজেদেরকে এমন এমন
গর্হিত রেওয়াজ এবং প্রথার
জিঞ্জীরে আবদ্ধ করে ফেলেছি যে,
এখন বিবাহ কার্যক্রম এক ধরনের
ভয়াবহ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবাহ
ছিল এক প্রকার আনন্দের বিষয়।
কিন্তু এখন বিবাহের কথা এলে বিশেষ
করে মেয়েপক্ষের মাথার উপর যেন
সমস্যার পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে। অথচ
মেয়ে এবং মেয়ে পক্ষের উপর শরীয়ত
কর্তৃক কোন প্রকার
খরচপাতি এবং ব্যয় বহনের ভার
আরোপিত হয়নি। এ
ব্যাপারে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ,
যার জীবনাদর্শ পরিপূর্ণ, যার
জীবনাদর্শ সারা বিশ্ব মানবতার জন্য
পথ ও পাথেয়স্বরূপ। তাঁর জীবনাদর্শ
থেকে দিক নির্দেশনা গ্রহণ
করা একান্ত জরুরী। একথা সকলেরই
কমবেশি জানা আছে যে, রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয়
কন্যাদের বিবাহ কাজ সম্পাদন
করেছেন। সর্বাধিক স্নেহাস্পদ,
কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমাকেও
বিবাহ দিয়েছেন।
তাকে তিনি যেভাবে সহজ
সরলভাবে বিবাহ দিয়েছেন তার
বিস্তারিত বিবরণ ইচ্ছা করলে এখনও
পুরাপুরিভাবে জানা যায়।
যারা নিজেদেরকে মুসলিম এবং ইসলামের
অনুসারী হিসেবে পরিচয় পেশ করে,
যারা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি এবং মুহাব্বতের
দাবী করে, তারা যদি মুহাব্বতের লাজ ও
সম্মান রক্ষাহেতু প্রিয় রাসূলের পদাংক
অনুসরণ করে কেবল আখেরাতই নয়
বরং দুনিয়াবী জীবনকেও পরম শান্তি ও
আনন্দময় করে নিত,
তাহলে কতইনা ভাল হতো। নমূনাস্বরূপ
এখানে হযরত ফাতেমার বিবাহ
সম্পর্কে সামান্য বিবরণ পেশ
করা হলো।
হযরত ফাতেমার বিবাহ
হযরত ফাতেমাকে বিবাহ করার
উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম হযরত আবু বকর
সিদ্দীক এবং হযরত উমর ফারুক
প্রস্তাব পেশ করেন। হযরত ফাতেমার
বয়স কম বিধায় রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অসম্মতি প্রকাশ করেন। এরপর তাদের
দুজনের পরামর্শে হযরত
আলী স্বয়ং হাজির
হয়ে লজ্জাভরে প্রস্তাব পেশ করেন।
হযরত আলী বলেন-
ﺩﺧﻠﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻤﺎ ﺃﻥ ﻗﻌﺪﺕ ﺑﻴﻦ
ﻳﺪﻳﻪ ﺃﻓﺤﻤﺖ ﻓﻮﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻄﻌﺖ
ﺃﻥ ﺃﺗﻜﻠﻢ ﺟﻼﻟﺔ ﻭﻫﻴﺒﺔ ﻓﻘﺎﻝ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ" : ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﺑﻚ ﺃﻟﻚ
ﺣﺎﺟﺔ ؟ " ﻓﺴﻜﺖ ﻓﻘﺎﻝ: ﻟﻌﻠﻚ
ﺟﺌﺖ ﺗﺨﻄﺐ ﻓﺎﻃﻤﺔ، ﻓﻘﻠﺖ
ﻧﻌﻢ )ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ
ﺝ ৩ﺹ৩৪৬)
“আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খেদমতে হাজির হয়ে যখন
সম্মুখে বসলাম তখন আমি আমার
বাকশক্তি হারিয়ে ফেলি। মহত্ত্ব
এবং বড়ত্বের ভয়ে আমি একটি কথাও
বলতে সাহস পেলাম না। তখন
তিনি নিজেই আমাকে প্রশ্ন করলেন,
মনে হয় তুমি কোন বিশেষ
প্রয়োজনে এসেছো? মনে হয়
তুমি ফাতেমাকে বিবাহ করার প্রস্তাব
পেশ করতে এসেছ? আমি বললাম হ্যাঁ।
আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় প্রস্তাব গৃহীত
হলো। কথাবার্তার মাধ্যমে সবকিছু
ঠিকঠাক হয়ে গেলো। না লোকের সমাগম,
না কোন বিশেষ ব্যবস্থাপনা। তখন
হযরত আলীর বয়স ছিল একুশ বৎসর
আর হযরত ফাতেমার বয়স ছিল ১৫
বৎসর।
এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে,
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বয়সের অত্যধিক
পার্থক্য সমীচীন নয়। এরপর
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশেষ খাদেম
হযরত আনাসকে আদেশ করলেন যে,
উমর, উসমান, তালহা, যুবাইরসহ
আনসারী কতিপয়
সাহাবাদেরকে ডেকে নিয়ে এসো।
তাঁরা হাজির হলে সংক্ষিপ্ত
খুৎবা পড়ে বিবাহের কাজ সম্পাদন
করেন এবং হাজিরীনদের মধ্যে খেজুর
বণ্টন করেন। তারপর রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্বয়ং উম্মে আইমানকে সাথে করে
হযরত ফাতেমাকে হযরত আলীর
বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেন এবং নেহায়েত
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যৌতুক
হিসেবে নয় বরং প্রয়োজনের
তাকিদে হযরত আলীর
বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কেননা হযরত
আলীর বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিস
পত্র ছিল না। এর বড় কারণ ছিল এই
যে, হযরত আলীর অভিভাবক ছিলেন
স্বয়ং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর
তত্ত্বাবধানেই হযরত আলী ছোটকাল
থেকে এই পর্যন্ত লালিত পালিত হন।
তাছাড়া আর অন্য কেউ তার প্রয়োজন
মেটানোর মতো ছিল না। যখন
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হে আলী!
তোমার নিকট জিনিস পত্র কি আছে?
তখন হযরত আলী পরিস্কার ভাষায়
বলেন,
ﻣﺎﻟﻲ ﻣﻦ ﺷﻴﺊ )ﻣﺴﻨﺪ ﺍﺣﻤﺪ )
আমার জিনিস পত্র বলতে কিছুই নেই।


সূত্রঃ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তরদাওয়াতি সংগঠন মজলিসে দাওয়াতুলহক। এর মৌল উদ্দেশ্য মানব জীবনেসকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ওআদর্শের প্রতিফলন ঘটানো।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তিবা-অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলারইবাদত আনুগত্যের দাবি পূরণ করাই হলএকজন মুসলমানের ইহকালীন জীবনেরমূল উদ্দেশ্য।।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :