এতীমার বিবাহ

কোন মন্তব্য নেই
যারা একাধিক বিবাহের অনুমতির
পক্ষে নয় তাদের অনেকে আয়াতের
এমন অর্থ করে থাকে যা কোনভাবেই
যুক্তিযুক্ত মনে হয় না। যেমন
বলে থাকে যে, এতীম নাবালেগাদের
সাথে একাধিক বিবাহের
অনুমতি দেয়া হয়েছে, অন্যদের বেলায়
এর অনুমতি নাই, আর এর উদ্দেশ্য
হচ্ছে অভিভাবকদের সমস্যার সমাধান
করা।
অথচ স্বয়ং যার প্রতি ওহী নাযিল
হয়েছে, যাকে পবিত্র কুরআনের অর্থ
এবং হুকুম আহকাম বয়ান করার জন্য
আদেশ করা হয়েছে, তার নিকট
থেকে সরাসরি অর্থ ও
শিক্ষা গ্রহণকারিনী, তাঁর
জীবনসঙ্গীনী হযরত
আয়েশা সিদ্দীকা এই আয়াতের
শানে নুযুল বর্ণনা করেছেন যে,
জাহেলী যুগে এতীম
নাবালেগাদেরকে বিবাহ করে তাদের
উপর জুলুম করা হতো।
আসলে এতীমদের সহায় সম্পদ
আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যই তাদের
অভিভাবকগণ বাহানা স্বরূপ
এতীমদেরকে বিবাহ করে নিতো, আসল
উদ্দেশ্য বিবাহ নয়
কিংবা স্ত্রী হিসাবে তাদের অধিকার
আদায় করাও নয়। বরং এতিমদের পক্ষ
থেকে যেহেতু স্ত্রী হিসাবে অধিকার
আদায়ের ব্যাপারে কোন চাপ প্রয়োগ
বা শংকা নেই, তাই অতি সহজে বিবাহের
মাধ্যমে তারা এতিমদের সম্পদ
আত্মসাৎ করার পেছনে পড়তো। তাই
এই এতিমদের অধিকার সংরক্ষণের
জন্য কুরআন পাকে তাদেরকে নির্দেশ
করা হয়েছে যে, এ সমস্ত
এতীমদেরকে ছাড়াও পৃথিবীতে অনেক
নারী রয়েছে যাদেরকে বিবাহ
করা হালাল। তাদের
মধ্যে যাদেরকে পছন্দ হয়,
তোমরা তাদেরকে বিবাহ করে নাও।
তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কর।
অনর্থক এতীমদেরকে কষ্ট দিয়োনা।
তাদের অর্থ সম্পদ হস্তগত করার
লোভে নাম মাত্র বিবাহ করে এতীমদের
জীবনকে ধ্বংস করো না। এই আয়াতের
সঠিক অর্থ নিরূপনের জন্য নিম্নোক্ত
হাদীসটি উদ্ধৃত করা হলো, হযরত
ওরওয়া বলেন, আমি হযরত
আয়েশাকে এই আয়াতের অর্থ
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম-
ﻭﺍﻥ ﺧﻔﺘﻢ ﺍﻥ ﻻﺗﻘﺴﻄﻮ ﻓﻲ
ﺍﻟﻴﺘﻤﻲ
“যদি এতীমদের প্রতি ইনসাফের
ব্যাপারে তোমাদের আশংকা বোধ হয়”
এর উদ্দেশ্য কী? তখন হযরত
আয়েশা রা. বললেন যে হে আমার
ভাগ্নে!
ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻴﺘﻴﻤﺔ ﺗﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﺣﺠﺮ
ﻭﻟﻴﻬﺎ ﺗﺸﺮﻛﻪ ﻓﻲ ﻣﺎﻟﻪ ﻭﻳﻌﺠﺒﻪ
ﻣﺎﻟﻬﺎ ﻭﺟﻤﺎﻟﻬﺎ ﻓﻴﺮﻳﺪ ﻭﻟﻴﻬﺎ ﺃﻥ
ﻳﺘﺰﻭﺟﻬﺎ ﺑﻐﻴﺮ ﺃﻥ ﻳﻘﺴﻂ ﻓﻲ
ﺻﺪﺍﻗﻬﺎ ﻓﻴﻌﻄﻴﻬﺎ ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﻳﻌﻄﻴﻬﺎ
ﻏﻴﺮﻩ ﻓﻨﻬﻮﺍ ﻋﻦ ﺃﻥ ﻳﻨﻜﺤﻮﻫﻦ
ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﻘﺴﻄﻮﺍ ﻟﻬﻦ ﻭﻳﺒﻠﻐﻮﺍ ﻟﻬﻦ
ﺃﻋﻠﻰ ﺳﻨﺘﻬﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺪﺍﻕ
ﻓﺄﻣﺮﻭﺍ ﺃﻥ ﻳﻨﻜﺤﻮﺍ ﻣﺎ ﻃﺎﺏ ﻟﻬﻢ
ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺳﻮﺍﻫﻦ-ﺑﺨﺎﺭﻱ
ﺝ ২ﺹ২৮৫
অনেক সময় কোন এতীমদের
গায়রেমাহরাম মুরব্বী থাকে। এতীম সেই
মুরুব্বীর অর্থ সম্পদের অংশীদার হয়,
আর মুরুব্বীর নিকট এতীমার রূপ
পছন্দনীয় হয়, এমন
পরিস্থিতিতে মুরুব্বীর দৃষ্টি ঐ
এতীমার সম্পদের প্রতি হয়, তখন
সে ঐ এতীমাকে বিবাহ
করতে ইচ্ছা করে আর
পুরা মহরানা আদায় করার
এবং স্ত্রী হিসাবে অধিকার দেয়ার
ইচ্ছা রাখে না। অথচ অন্যের নিকট
বিবাহ হলে এই গুলো পুরা হতো। এই
কারণে এ ধরনের জুলুমের বিবাহ
থেকে মুরুব্বীদেরকে বিরত থাকার
নির্দেশ করা হয়েছে। হ্যাঁ,
যদি মুরুব্বীগণ এতীমদের সাথে ইনসাফ
করে এবং উপযুক্ত মহরানা আদায়
করে তাহলে বিবাহ করতে কোন প্রকার
বাধা নেই। অন্যথায় তাদেরকে হুকুম
করা হয়েছে যে, তারা যেন অন্য
নারীদেরকে বিবাহ করে। মুসলিম
শরীফের হাদীসে আরো অধিক বিশদ
বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে। সেখানে উক্ত
আয়াতের তাফসীর করে হযরত
আয়েশা বলেন-
ﻗﺎﻟﺖ ﺃﻧﺰﻟﺖ ﻓﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺗﻜﻮﻥ ﻟﻪ
ﺍﻟﻴﺘﻴﻤﺔ ﻭﻫﻮ ﻭﻟﻴﻬﺎ ﻭﻭﺍﺭﺛﻬﺎ ﻭﻟﻬﺎ
ﻣﺎﻝ ﻭﻟﻴﺲ ﻟﻬﺎ ﺃﺣﺪ ﻳﺨﺎﺻﻢ
ﺩﻭﻧﻬﺎ ﻓﻼ ﻳﻨﻜﺤﻬﺎ ﻟﻤﺎﻟﻬﺎ ﻓﻴﻀﺮ ﺑﻬﺎ
ﻭﻳﺴﻰﺀ ﺻﺤﺒﺘﻬﺎ ﻓﻘﺎﻝ ) ﺇﻥ
ﺧﻔﺘﻢ ﺃﻥ ﻻ ﺗﻘﺴﻄﻮﺍ ﻓﻰ
ﺍﻟﻴﺘﺎﻣﻰ ﻓﺎﻧﻜﺤﻮﺍ ﻣﺎ ﻃﺎﺏ ﻟﻜﻢ
ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ( ﻳﻘﻮﻝ ﻣﺎ ﺃﺣﻠﻠﺖ ﻟﻜﻢ
ﻭﺩﻉ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺘﻰ ﺗﻀﺮ ﺑﻬﺎ-.ﻣﺴﻠﻢ
ﺝ ২ﺹ৪২০
এই আয়াতটি এমন লোক
সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যার
তত্ত্বাবধানে সম্পদের
অধিকারী এতীম রয়েছে। আর এই লোক
ঐ এতীমার ওয়ারিছ এবং মুরুব্বীও
বটে। অপর পক্ষে এই এতীমার কোন
শুভাকাংখী এবং অধিকার
আদায়কারী কেউ নেই। এদিকে এই
মুরুব্বী সম্পদের লোভে এই
এতীমাকে অন্যত্র বিবাহ
দেয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকে।
বরং ঐ এতীমাকে নিজে বিবাহ করে তার
সাথে অসদাচরণ এবং জুলুম করে। তাই
আল্লাহ পাক হুকুম নাযিল করেছেন,
যদি এতীমাদের সাথে ইনসাফ না করার
আশংকা হয়,
তাহলে তাদেরকে ছাড়া তোমাদের
পছন্দমত অন্য নারীদেরকে বিবাহ
করো। আর এতীমাদের থেকে বিরত
থাক, তোমাদের বিবাহের কারণে যাদের
ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। হযরত
আয়েশার এই তাফসীর হাদীসের
কিতাবসমূহে তো আছেই
তাছাড়া (ইবনে কাসীর : ১/৪৪৯,
দুররুল মানছুর ১/১১৮,
মাজহারী ২/২৬৫, কাবীর ৩/১৬৩,
আহকামুল কুরআন জাসসাস ২/৫০,
আহকামুল কুরআন লি ইবনুল
আরাবী ১/১২৯, তাফসীরে খাযেন
১/৩০১)সহ প্রায় সমস্ত তাফসীরের
কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে।


সূত্রঃ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তরদাওয়াতি সংগঠন মজলিসে দাওয়াতুলহক। এর মৌল উদ্দেশ্য মানব জীবনেসকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ওআদর্শের প্রতিফলন ঘটানো।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তিবা-অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলারইবাদত আনুগত্যের দাবি পূরণ করাই হলএকজন মুসলমানের ইহকালীন জীবনেরমূল উদ্দেশ্য।।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :