রামাযান মাসের মর্যাদা ও রোযার গুরুত্ব

কোন মন্তব্য নেই
১) মুসলমানদের জন্য রামাযানের
রোযা রাখা ফরয:
রামাযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার
সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ
ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ
ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর
রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ
করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন
তোমরা পরহেযগারী অর্জন
করতে পার।” (সূরা বাকারা: ১৮৩)
২) রামাযান মাসে রোযা রাখা ইসলামের
অন্যতম একটি স্তম্ভ:
ক) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা:)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন:
ﺑﻨﻲ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺧﻤﺲ :
ﺷﻬﺎﺩﺓ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺃﻥ
ﻣﺤﻤﺪﺍً ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ،ﻭﺇﻗﺎﻣﺔ
ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﻭﺇﻳﺘﺎﺀ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ ، ﻭﺍﻟﺤﺞ،
ﻭﺻﻮﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ )
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর
প্রতিষ্ঠিত। লা ‘ইলাহা ইল্লাল্লাহ
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ তথা এ কথার
স্বাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য
কোন উপাস্য নেই এবং নামায
প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা,
হজ্জ আদায় করা এবং রামাযান
মাসে রোযা রাখা।[বুখারী ও মুসলিম।]
খ) আবু হুরায়রা (রাহ.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মানুষের
সামনে ছিলেন এমতবস্থায় তাঁর নিকট
এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল: ঈমান
কী? তিনি উত্তরে বললেন:
ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺃﻥ ﺗﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ،
ﻭﻣﻼﺋﻜﺘﻪ ، ﻭﺑﻠﻘﺎﺋﻪ ، ﻭﺭﺳﻠﻪ،
ﻭﺗﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﺒﻌﺚ
“ঈমান হল, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্তাগণ,
তাঁর সাথে স্বাক্ষাৎ হওয়াকে এবং তাঁর
রাসূলগণকে বিশ্বাস করবে এবং সেই
সাথে বিশ্বাস করবে মৃত্যুর পর
পূণরুত্থানকে।” সে ব্যক্তি আবার
জিজ্ঞেস করল, ইসলাম কী?
তিনি বললেন:
ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺃﻥ ﺗﻌﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺗﺸﺮﻙ
ﺑﻪ ﻭﺗﻘﻴﻢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺗﺆﺗﻲ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ
ﺍﻟﻤﻔﺮﻭﺿﺔ ﻭﺗﺼﻮﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ
ইসলাম হল: এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর
এবাদত করবে যে, যেন
তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁর
সাথে শির্ক করবে না, নামায পড়বে,
ফরয যাকাত দিবে এবং রামাযান
মাসে রোযা রাখবে।”
লোকটি পূণরায় জিজ্ঞেস করল, ইহসান
কী? তিনি বললেন:
ﺃﻥ ﺗﻌﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺄﻧﻚ ﺗﺮﺍﻩ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ
ﺗﻜﻦ ﺗﺮﺍﻩ ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺮﺍﻙ
“ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহ
আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন
তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর
যদি তাকে দেখতে না পাও তবে (এ
মনোভাব রাখবে)
যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন…।
”[বুখারী ও মুসলিম।]
গ) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক
বেদুইনের কথোপকথন:
ত্বালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাহ:)
হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক
বেদুঈন আগমণ করল। তার মাথার চুল
ছিল উসকো-খুশ্কো। লোকটি বলল:
হে আল্লাহর রাসূল,
আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ
তাআলা আমার জন্য কী পরিমাণ নামায
ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “পাঁচ
ওয়াক্ত নামায। তবে কিছু অতিরিক্ত
নফল নামায পড়তে পার।”
লোকটি বলল: আপনি আমাকে বলুন,
আল্লাহ তাআলা আমার জন্য
কী পরিমাণ রোযা ফরয করেছেন?
তিনি বললেন: “রামাযান মাসের রোযা।
তবে কিছু অতিরিক্ত নফল
রোযা রাখতে পার।”
লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল:
আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ
তাআলা আমার উপর কী পরিমাণ যাকাত
ফরয করেছেন?
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
প্রশ্নকারীকে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-
বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দান করলেন।
অতঃপর লোকটি বলল: সে প্রভুর শপথ
করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য
দ্বারা সম্মানিত করেছেন,
আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই করব
না এবং আল্লাহ তাআলা আমার উপর
যা ফরয করেছেন তা থেকে কোন কিছুই
কমও করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্য
বলে থাকলে সফল হবে।”
অথবা তিনি বলছেন: “সে সত্য
বলে থাকলে জান্নাতবাসী হবে।”[বুখারী,
সাওম অধ্যায় ও মুসলিম, ঈমান
অধ্যায়।]
৪) রামাযান মাসে জান্নাতের
দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়
এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ
করে দেয়া হয়:
আবু হুরায়রা (রাহ:)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন
রামাযান আগমণ করে তখন জান্নাতের
দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়।” অন্য
বর্ণনায় রয়েছে: যখন রামাযান আগমণ
করে তখন আসমানের
দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের
দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়
এবং শয়তানদেরকে শিকল
দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।”[সহীহ বুখারী,
কিতাবুস সাওম। সহীহ মুসলিম কিতাবুস
সিয়াম।]
৫) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান
ছাড়া অন্য কখনো পুরো মাস
রোযা রাখতেন না:
আয়েশা (রাহ:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন:
ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻮﻡ ﺣﺘﻰ ﻧﻘﻮﻝ ﻻ
ﻳﻔﻄﺮ ، ﻭﻳﻔﻄﺮ ﺣﺘﻰ ﻧﻘﻮﻝ ﻻ
ﻳﺼﻮﻡ ، ﻭﻣﺎ ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺳﺘﻜﻤﻞ
ﺻﻴﺎﻡ ﺷﻬﺮ ﺇﻻ ﺭﻣﻀﺎﻥ ، ﻭﻣﺎ ﺭﺍﻳﺘﻪ
ﺃﻛﺜﺮ ﺻﻴﺎﻣﺎً ﻣﻨﻪ ﻓﻲ ﺷﻌﺒﺎﻥ ((
ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
নফল রোযা রাখা শুরু
করলে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর
রোযা বাদ দিবে না। আবার রোযা বন্ধ
করলে আমরা ধারণা করতাম হয়ত
তিনি আর রোযাই রাখবেন না।
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রামাযান
ছাড়া অন্য কখনো সারা মাস
ধরে রোযা পালন
করতে দেখিনি এবং শাবান মাসে তার
চেয়ে বেশি আর
কাউকে রোযা রাখতে দেখিনি।”[বুখারী ও
মুসলিম।]
৬) এক রামাযান অন্য রামাযানের
মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সংঘটিত
পাপরাশীর জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ:
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলতেন:
ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﺨﻤﺲ ، ﻭﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺇﻟﻰ
ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ، ﻭﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ،
ﻣﻜﻔﺮﺍﺕ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻬﻦ ، ﺇﺫﺍ ﺍﺟﺘﻨﺐ
ﺍﻟﻜﺒﺎﺋﺮ
“পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ
থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রামাযান
থেকে আরেক রামাযানের
মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ মোচন
হয়ে যাবে যদি কবীরাগুনাহ
থেকে বেঁচে থাকা হয়।”[সহীহ মুসলিম।
পবিত্রতা অধ্যায়।]
৭) মাহে রামাযানে অসংখ্য কল্যাণের
হাতছানি:
ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺃﻭﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ
ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺻﻔﺪﺕ ﺍﻟﺸﻴﺎﻃﻴﻦ ﻭﻣﺮﺩﺓ
ﺍﻟﺠﻦ ، ﻭﻏﻠﻘﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﻨﻴﺮﺍﻥ
ﻓﻠﻢ ﻳﻔﺘﺢ ﻣﻨﻬﺎ ﺑﺎﺏ ، ﻭﻓﺘﺤﺖ
ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻠﻢ ﻳﻐﻠﻖ ﻣﻨﻬﺎ ﺑﺎﺏ ،
ﻭﻳﻨﺎﺩﻱ ﻣﻨﺎﺩ ﻳﺎ ﺑﺎﻏﻲ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﺃﻗﺒﻞ ،
ﻭﻳﺎ ﺑﺎﻏﻲ ﺍﻟﺸﺮ ﺃﻗﺼﺮ ، ﻭﺍﻟﻠﻪ
ﻋﺘﻘﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻭﺫﻟﻚ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ
“রামাযান মাসের প্রথম রাতেই শায়তান
এবং উশৃংখল
জিনদেরকে শিকলবন্দী করে ফেলা হয়,
জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ
করে দেয়া হয়-যার একটিও
খোলা রাখা হয় না এবং জান্নাতের
সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়- যার
একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আর এক
আহবানকারী আহবান করতে থাকে,
হে কল্যাণ প্রাত্যাশী, অগ্রসর হও।
হে অন্যায়কামী, বিরত হও। আর
আল্লাহ তাআলা অনেক
জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর
তা রামাযানের প্রতি রাতেই।”[তিরমিযী,
রোযা অধ্যায়। মুসতাদরাক হাকেম।
আল্লামা আলবানী (রা.)
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ
তারগীব ওয়াত্ তারহীব। হাদীস
নং ৯৯৮।
৮) একই বছরে রামাযান এবং যিল হজ্জ
মাস একসাথে অপূর্ণ হবে না:
আবু বাকরা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
(( ﺷﻬﺮﺍﻥ ﻻ ﻳﻨﻘﺼﺎﻥ ، ﺷﻬﺮ ﻋﻴﺪ :
ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺫﻭ ﺍﻟﺤﺠﺔ (( ﻣﺘﻔﻖ
ﻋﻠﻴﻪ
“দুটি মাস (একই বছরে) অপূর্ণ হবে না।
সেগুলো হল: ঈদের দু মাস তথা রামাযান
এবং যুল হিজ্জা।”[সহীহ বুখারী, অধ্যায়:
রোযা। সহীহ মুসলিম অধ্যায়: রোযা।]
অর্থাৎ এ দুটি মাস একই বছরে এক
সাথে অসম্পূর্ণ হবেনা। একটি ২৯
দিনে হলে অন্যটি অবশ্যই ৩০
দিনে হবে। আরেকটি মত হল, হাদীসটির
অর্থ এ দুটি মাসে আমলের সাওয়াব কম
হবে না।[সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ
ফাত্হুল বারী। অধ্যায়: দু মাস এক
সাথে কম হবে না। ১৭৭৯ নং হাদীসের
ব্যাখ্যা।]

ব্লগ সম্পাদক ও এ্যাডমিনঃসৈয়দ রুবেল উদ্দিন
Next post "Next post "নবী (সাঃ)এর উপর দরুদ পাঠের ফজীলত।
ব্লগের প্রকাশিত পোস্ট গুলি ফেসবুকে শেয়ার করে আমাদের চলার পথকে আরো গতিময় করে তুলুন ।আমরা দিন রাত খাটিয়ে পোস্ট গুলি লেখি ।ব্লগে প্রকাশ করে আপনাদেরকে উপহার দেয় ।আপনারা যদি শেয়ার না করেন?তাহলে আমরা তো সামনে এগিয়ে যেতে পারবোনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :