ইসলাম যৌতুক সমর্থন করে না

কোন মন্তব্য নেই
ইসলামের দৃষ্টিতে যৌতুক একটি অবৈধ
ও ঘৃণিত প্রথা। কন্যাকে পাত্রস্থ
করার জন্য মোহরানা ব্যতীত
বরপক্ষের চুক্তিবদ্ধ
দাবি অনুযায়ী কন্যাপক্ষ উপহার
সামগ্রী যা প্রদান করেন তা-ই
যৌতুক। ইসলামে শর্তারোপ
করে যৌতুক গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে হারাম
বা নিষিদ্ধ। শরিয়তের বিধানে বিবাহের
শর্ত হিসেবে যৌতুক আদায় করা শুধু
নাজায়েজই নয়; বরং সুস্পষ্ট জুলুম
হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সমাজ
জীবনে এমন অনেক নব উদ্ভূত
রীতিনীতি বা আচার-অনুষ্ঠান
প্রচলিত
রয়েছে যা গোটা সমাজব্যবস্থার জন্যই
মারাত্মক ক্ষতিকর। যৌতুক আমাদের
সমাজে নতুন নয় বরং আবহমানকাল
ধরে চলে আসা এক অর্থনৈতিক
শোষণের হাতিয়ার। ঘৃণ্য
যৌতুকপ্রথা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল
বিবাহব্যবস্থার অন্তরায়
হিসেবে দেখা দিয়েছে। দাম্পত্য
সম্পর্কের সঙ্গে যৌতুক আদায় করার
হীন মানসিকতা মানুষ হিসেবে মানবতার
অবমাননা করার শামিল। ইসলামের
বিধান অনুসারে মানুষের জীবন
পরিচালনার
ক্ষেত্রে কোনো অমানবিকতার অবকাশ
রাখার সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.)
সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,
‘কারও সম্পদ হালাল হয় না, যতক্ষণ
না যে সন্তুষ্টচিত্তে তা প্রদান করে।’
যৌতুক প্রসঙ্গে ইসলামের
দৃষ্টিভঙ্গি এই যে অর্থনৈতিক
লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের
নীতিমালা হলো তা অবৈধভাবে বা
অনির্ধারিত পথে অর্জন
করা চলবে না। পবিত্র
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের
অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস
করো না।’ (সূরা আল-বাকারা,
আয়াত-১৮৮)
অন্যায়ভাবে বা যা ন্যায্যপ্রাপ্য নয়,
তা কোনোভাবেই গ্রহণ
বা দাবি করা যাবে না।
যদি তা জোরপূর্বক আদায় করা হয়
তবে তা কত বড় অন্যায় এবং তার
শাস্তি যে কী ভয়াবহ হতে পারে এ
সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ
হয়েছে, ‘আর যে কেউ সীমা লঙ্ঘন
করে অন্যায়ভাবে তা করবে তাকে
অগ্নিতে দগ্ধ করা হবে, এটা আল্লাহর
পক্ষে সহজ।’ (সূরা আল-নিসা,
আয়াত-৩০)
ধর্মীয় নীতিমালায় যৌতুকের
আদৌ স্থান নেই। ইসলামে বিবাহের
মধ্যে লেনদেনের যে বিধান
দিয়েছে বর্তমান যৌতুকপ্রথা এর
সম্পূর্ণ বিপরীত। বৈবাহিক
বিষয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের
নির্দেশনা হলো, স্বামীরাই
স্ত্রীকে কিছু অর্থ-সম্পদ ফরজ
তথা আবশ্যিকভাবে প্রদান করবে।
বিবাহকে বৈধ করার জন্য দেনমোহর
একটি অন্যতম মাধ্যম। ইসলামে বিবাহ
বন্ধনে মোহরানার গুরুত্ব অত্যধিক।
এটি ইসলামের আবির্ভাব থেকেই মুসলিম
সমাজে কড়াকড়িভাবে আরোপিত।
মোহরানা কন্যার ন্যায্য প্রাপ্য
অধিকার। বিবাহ
উপলক্ষে নারীকে সন্তুষ্টচিত্তে তার
মোহর প্রদান করার তাগিদ
দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ
তাআলা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন,
‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহর
স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান
করবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৪)
শরিয়তের দৃষ্টিতে মোহর প্রদান
স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব
এবং তা স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ অধিকার।
এভাবে বিবাহের
মাধ্যমে নারী তথা স্ত্রীর যাবতীয়
ব্যয়ভার স্বামীকেই বহন করতে হয়।
সুতরাং বিবাহসংক্রান্ত আর্থিক
লেনদেনে পুরুষের কোনোভাবে লাভবান
হওয়ার সুযোগ নেই। আর যৌতুকের
দাবিতে জোর-জবরদস্তি করা শুধু
অর্থনৈতিক শোষণ নয়,
বরং তা দণ্ডবিধির আওতাভুক্ত
অপরাধও বটে। তাই এর থেকে মুক্ত
থাকা প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুমিন
মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক।
যৌতুক তথা ধন-সম্পদ, সম্মান ও
মর্যাদা কোনো কিছুর লোভ
বা মোহে আকৃষ্ট হয়ে বিবাহ
করা যাবে না। মানুষের নৈতিক চরিত্র
পরিশুদ্ধ রাখা, আদর্শ পরিবার ও
সুশীল সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যেই বিবাহ
করা উচিত। যৌতুকের
বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান
করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সম্মান লাভের
জন্য কোনো নারীকে বিবাহ
করে আল্লাহ তার
লাঞ্ছনা বৃদ্ধি করে দেন।
যে তাকে সম্পদ লাভের আশায় বিবাহ
করে আল্লাহ তার
দরিদ্রতা বৃদ্ধি করে দেন। আর
যে তাকে বংশ গৌরব লাভের আশায়
বিবাহ করে আল্লাহ তার
অমর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর
যে তাকে দৃষ্টি অবনত রাখতে পুণ্য
অথবা অশ্লীলতা থেকে নিজেকে পবিত্র
রাখার জন্য বিবাহ
করে অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক
বজায় রাখার জন্য বিবাহ করে, আল্লাহ
তাকে ওই স্ত্রীর মাধ্যমে বরকত দান
করবেন এবং স্ত্রীর জন্যও
তাকে বরকতময় করে দেবেন।’
ইসলামী বিধান মতে,
বিবাহে কোনো যৌতুকের শর্ত ও
দাবি থাকে না,
তবে যদি বিনা শর্তে বিনা দাবিতে বর-
কন্যার অভিভাবক বা আত্মীয়স্বজন
যদি খুশি হয়ে স্বেচ্ছায় নিজেদের
সামর্থ্য অনুযায়ী ছেলেমেয়েকে কিছু
প্রদান করেন সেটা গ্রহণ আপত্তিকর
নয়। এরূপ উপহার দেওয়াকে হাদিস
শরিফে ‘তুহফা’ বা ‘হাদিয়া’ রূপে পবিত্র
বলে ঘোষণা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)
ও সাহাবায়ে কিরামের জীবদ্দশায়
যৌতুকের লেনদেনের
কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে বিবাহে খরচ
কম হয় সে বিবাহকে বরকতময় বিবাহ
আখ্যায়িত করে রাসুলুল্লাহ (সা.)
বলেছেন, ‘সর্বাপেক্ষা বরকতময়
হলো ওই বিবাহ যা কম খরচে নির্বাহ
করা হয়।’ (বায়হাকি)
জাহেলিয়াতের যুগে নারীকে বিনিময়ের
বদৌলতে বিবাহ দেওয়া হতো। মূলত এ
বিনিময় প্রথাই হচ্ছে যৌতুক। প্রাক-
ইসলামী যুগের এ ঘৃণ্য ব্যবস্থার
মূলোৎপাটন করে ইসলামের
আগমনে পণপ্রথা নামক জঘন্য রীতির
অপসারণ ঘটল। রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীর
অধিকার
সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন,
‘তোমরা নারীদের মোহরানার হক
আদায়ের মাধ্যমে জীবন
সঙ্গিনীকে হালাল কর।’ যৌতুকের
ক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য
যে অন্যের অর্থ বা সম্পদ তার
সন্তুষ্টি ছাড়া ভিন্ন পন্থায় গ্রহণ
বা ভোগ করতে ইসলাম
কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। যৌতুকের
সামগ্রী সম্পূর্ণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও
বাধ্য হয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত
পিতাকে দিতে হয়, তাই যৌতুক এ
নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে।
মহানবী (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ
করেছেন, ‘কোনো মানুষের জন্য তার
ভাইয়ের সম্পদ তার
সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে ভোগ করা বৈধ
নয়।’
ইসলামে যৌতুক প্রদান জায়েজ
তো নয়ই, উপরন্তু যৌতুক প্রদানের
ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে রিয়া বা লোক
দেখানো ও অহংকার প্রদর্শন
করা হয়ে থাকে, যা হারাম বা শরিয়তের
পরিপন্থী। ইসলামের
দৃষ্টিতে স্বাবলম্বী হয়ে বিনা যৌতুকে
স্ত্রীকে গ্রহণ করলে পাবে ভাগ্যবানের
মর্যাদা।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান:
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও
কলাম লেখক।
dr.munimkhan@
yahoo.com


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :