অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা প্রসঙ্গে (শেষ কিস্তি)

কোন মন্তব্য নেই
মাওলানা সাদিকুল আমীন
মাসয়ালা : ঘা, খোঁড়ার রক্ত-পুঁজ
যদি নিজে নিজে গড়িয়ে না পড়ে এবং তা
চিপে বের করার
কারণে গড়িয়ে পড়ে তাহলে উজু নষ্ট
হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : বাহ্যত শরীরে যেখানে কোন
ক্ষত বা ঘা নেই কিন্তু
সেখানে ব্যথা অনুভব হয়
এবং সাদা পাতলা পানি বের হয়, এর
কারণেও উযু নষ্ট হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : কোন ক্ষতস্থান
বা ফোঁড়া থেকে যদি পোকা বা গোস্ত
পঁচে পড়ে যায়, তাহলে উজু নষ্ট
হবে না। এমনিভাবে কান থেকে কোন
পোকা পড়লেও উযু ভাঙ্গে না।
মাসয়ালা : ক্ষতস্থান
বা বা ফোঁড়া থেকে বের হওয়া রক্ত
বা পূঁজ
যদি গড়িয়ে না পড়ে সেটা কাপড়ের
কয়েক স্থানে লেগে যায়, তাহলে অনুমান
করে দেখবে যদি তার
সমষ্টি গড়িয়ে পড়ার পরিমাণ হয়
এবং একই মজলিস থাকা অবস্থায় বের
হয় তাহলে উযু ভেঙ্গে যাবে। আর
মজলিস ভিন্ন হলে ভাঙবে না।
মাসয়ালা : চোখের ভিতরাংশে যদি কোন
ছোট ফোঁড়া বা দানা হয়
এবং তা গলে পানি ভিতরাংশেই
গড়িয়ে পড়ে তাতে উযু ভাঙ্গবে না।
আর
যদি পানি গড়িয়ে বাহিরাংশে এসে পড়ে
তাহলে উযু ভেঙ্গে যাবে।
মাসয়ালা : কানের ভিতরাংশে ফোঁড়া,
ফুসুরী গলে যদি পানি বা পুঁজ
গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু বহিরাংশের এমন
স্থানে পৌছেনি যেটা গোসলের
মাঝে ধৌত করা ফরয তাহলে উজু
ভাঙবে না। উল্লেখ্য, কানের ছিদ্রের
ভিতরাংশে গোসলের
মাঝে পানি পৌঁছানো জরুরী নয়।
মাসয়ালা : কানের
অভ্যন্তরে যদি ব্যথা অনুভব হয়,
তাহলে এঅবস্থায় যে পানি কান
থেকে গড়িয়ে পড়বে তাতে উযু
ভেঙ্গে যাবে। অনুরূপ যখন
নাভীতে ব্যথা অনুভূত হয়
এবং পানি বের হয়, তাতেও উজু
ভেঙ্গে যাবে।
মাসয়ালা : দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত
বের হলে এবং তার
কারণে থুথুতে লালচে ভাব প্রকাশ
পেলে উযু নষ্ট হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : চিকিৎসার জন্য অনেক সময়
ইনজেকশন পুশ করতে হয়।
চামড়া বা মাংস পেশীতে পুশ
করলে যেহেতু রক্ত বের হয় না, তাই
উযু নষ্ট হবে না। আর রগে পুশ
করলে যেহেতু রক্ত বের হয় তাই উযু
ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে শরীরে রক্ত
ঢুকানো হলে উযুর ক্ষতি হবে না।
মাসয়ালা : রোগ নির্ণয় করার জন্য
এন্ডোসকপি করানো হয়। তখন
খাদ্যনালী দিয়ে পাকস্থলীতে পাইপ
প্রবেশ করানো হয়। এর দ্বারা উযু
ভেঙ্গে যায়। কারণ ঐ পাইপের
সাথে যুক্ত হয়ে নাপাক বের হয়ে থাকে।
মাসয়ালা : অপারেশনের রোগীর
পেশাবের রাস্তায় একটি পাইপযুক্ত
করা হয়। এর মাধ্যমে যে পেশাব বের
হয়, তাতে উযু ভেঙ্গে যায়। এরূপ
অবস্থায় যদি রোগীর পেশাব নিয়ন্ত্রণ
করা ও
অনুভূতি শক্তি না থাকে তাহলে সে মাজুর
বলে গণ্য হবে। তার জন্য
প্রতি ওয়াক্তে একবার উযু করাই
যথেষ্ট।
মাসয়ালা : অপারেশনের জন্য অজ্ঞান
করা হয়ে থাকে। এতে উযু ভঙ্গ
হয়ে যাবে। কখনও কখনও কোমর
থেকে নিম্নাংশ অনুভূতিহীন
করা হয়ে থাকে। এতেও উযু ভঙ্গ
হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : পাইলস আক্রান্ত রোগীর
যদি পায়খানার
রাস্তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন
গোস্তের টুকরা বের হয়ে আবার
নিজে নিজেই ভিতরে চলে যায়,
তাহলে উযু নষ্ট হবে না। কিন্তু
যদি সেটা হাত দিয়ে ভেতরে প্রবেশ
করানো হয়, তাহলে উযু নষ্ট হবে।
অনুরূপ যখন গোস্তের সাথে কোন
নাপাক বের হবে তখনও উযু নষ্ট হবে।
মাসয়ালা : পাইলস্ আক্রান্ত
ব্যক্তি যদি রুকু-সেজদায়
গেলে পায়খানা বেরিয়ে আসে কিন্তু
দাঁড়ালে এ অবস্থার সৃষ্টি হয় না,
তাহলে সে দাঁড়ানো অবস্থায় ইশরায় রুকু
সেজদা করে নামায পড়বে।
অথবা পায়খানার রাস্তা কাপড়ের
মাধ্যমে বন্ধ করে রুকু
সিজদা স্বাভাবিকভাবে আদায় করবে।
মানসিক রোগীর উযু
পবিত্রতা অর্জনের জন্য মানসিক
সুস্থতা একটি পূর্বশত। তাই মানসিক
রোগী তথা পাগল, বেহুশ,
মৃগীরোগী ইত্যাদি রোগীরা রোগাক্রান্ত
অবস্থায় উযু করলে তা শুদ্ধ
হবে না এবং সুস্থ অবস্থায় যে উযু
করে ছিলো সেটাও মানসিক
রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে ভঙ্গ
হয়ে যাবে।
মদসহ যে কোন ধরনের মাদকদ্রব্য
সেবনের কারণে যদি এতটুকু নেশাগ্রস্ত
হয় যে, স্বাভাবিকভাবে হাটতে পারে না,
হেলে-দুলে চলে তাহলে উযু নষ্ট
হয়ে যাবে।
বমি সংক্রান্ত মাসায়েল
যে সকল কারণে উযু নষ্ট হয়
তন্মধ্যে বমি একটি উল্লেখযোগ্য
কারণ। সাধারণত বমি কোন রোগের
কারণেই হয়ে থাকে। বমির দ্বারা উযু
ভাঙ্গার জন্য শর্ত হলো সেটা মুখ
ভরে হতে হবে। উল্লেখ্য যে, যখন
কারো বমি শুরু হয়, তখন তার
পক্ষে সেটা মুখে জমা রেখে মুখ
ভর্তি হলো কি না সেটা অনুমান
করা সম্ভব নয়। তাই ফুকাহায়ে কেরাম
মুখ ভর্তির পরিমাণ এভাবে নির্ধারণ
করেছেন যে, যখন বমির উদ্রেক এত
বেশি হয় যে, বমি মুখে চেপে রাখা যায়
না তখন সেই বমিকেই মুখ
ভরা বমি বলে গণ্য করা হবে এবং এরুপ
বমির দ্বারাই উযু ভেঙ্গে যাবে।
মাসয়ালা : যদি অল্প অল্প
করে কয়েকবার বমি হয় এবং সেটা একই
বমি উদ্রেকভাবের মাঝেই হয়,
তাহলে দেখতে হবে যে, কয়েক বারের
বমির সমষ্টি যদি মুখভরা পরিমাণ হয়,
তাহলে উযু নষ্ট হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : রক্ত বমি করলে এবং রক্ত
তরল হলে সামান্য বমিতেও উযু ভঙ্গ
হবে। আর জমাট রক্ত
বমি করলে যতক্ষণ
তা মুখভর্তি পরিমাণ না হবে ততক্ষণ
উযু নষ্ট হবে না।
মাসয়ালা : বমিতে যদি কোন পাক
জিনিস বের হয়, যেমন, পাথর, কীট
ইত্যাদি। এবং সেটা মুখভরা পরিমাণ
না হয়, তাহলে উযু ভঙ্গ হবে না।
মাসয়ালা : যে বমিতে উযু ভঙ্গ হয় সেই
বমিতে যা কিছু বের হবে তা নাপাক।
কোন কাপড় বা পাত্রে লাগলে তা ধৌত
করা জরুরী। উত্তম হলো এরূপ বমির
পর কোন পাত্রে সরাসরি মুখ
না দিয়ে হাতের
মাধ্যমে পানি উঠিয়ে কুলি করা। আর
যে বমিতে উযু ভাঙ্গে না তাতে যা বের
হয় তা পবিত্র। কাপড়ে লাগলেও
অসুবিধা নেই। উল্লেখ্য দুধের শিশুর
ক্ষেত্রে উল্লেখিত বিধানসমূহ
প্রযোজ্য হবে। অর্থৎ মুখ
ভরে হলে তার বমি নাপাক হিসেবে গণ্য
হবে।
অসুস্থ্য ব্যক্তির গোসল
ফিকহের পরিভাষায়
হুকমী নাপাককে দুইভাগে বিভক্ত
করা হয়েছে।
১. হদসে আছগার,
এটা থেকে পবিত্রতার নিয়ম হলো উযু
করা।
২. হদসে আকবর,
এটা থেকে পবিত্রতার নিয়ম হলো,
গোসল করা। অর্থাৎ দেহের সম্পূর্ণ
বাহ্যিক অংশকে পানি দ্বারা ধৌত
করা। গোসল ওয়াজিব হওয়ার জন্য
চারটি কারণ রয়েছে।
১. উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হওয়া।
২. সহবাস করা।
৩. হায়েয হওয়া।
৪. নেফাস হওয়া।
উক্ত কারণ থেকে যে কোন
একটি পাওয়া গেলে গোসল ফরয
হবে সুস্থ অসুস্থ নির্বিভেদে সকলের
ক্ষেত্রেই। অতঃপর অসুস্থতার
কারণে গোসল
করতে না পারলে শরীয়তে শর্তসাপেক্ষে
তার জন্য ছাড় রয়েছে।
ফিকহে ইসলামীতে জরুরতের সংজ্ঞা ও
শর্তাবলী
সুস্থতা প্রতিটি মানুষেরই কাম্য।
কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও মানুষ
রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
ইসলামী বিধানের মাঝে সাধারণ
অবস্থায় প্রযোজ্য বিধানের সংখ্যাই
বেশি। তবে অবস্থার ব্যতিক্রম
বা জটিলতার কারণে সাধারণ হুকুমের
মাঝে ছাড় ও পরিবর্তন ঘটতে পারে।
ফিকহের পরিভাষায় এই ব্যতিক্রম
বা জটিলতাকে জরুরত বলা হয়ে থাকে।
রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ে এই জরুরতের
সম্মুখীন হতে হয়। উল্লেখ্য যে, সব
ধরনের জটিলতার কারণেই সাধারণ
বিধানের ব্যতিক্রম করা যাবে না।
বরং জটিলতাটি শরীয়তের
মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে।
জরুরতের সংজ্ঞা
যে পরিস্থিতিতে একজন মানুষ
নিশ্চিতভাবে কিংবা প্রবল
ধারণামতে নিজের
প্রাণহানি বা অঙ্গহানির
আশংকা করে সেই
পরিস্থিতিকে ইসলামী ফিকহের
পরিভাষায় জরুরত নামে আখ্যায়িত
করা হয়।
জরুরতের শর্তাবলী
১.
জটিলতাটি ভবিষ্যতে হতে পারে এমন
কোন বিষয় না হওয়া বরং নিজ
অভিজ্ঞতা বা অভিজ্ঞ
কারো বক্তব্য
মতে বর্তমানে আক্রান্ত কোন
সমস্যা হতে হবে। যে সমস্যার
কারণে জান-মালের ক্ষতির নিশ্চিত
ধারণা হয়।
২. আক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্ত
হওয়ার বৈধ কোন পদ্ধতি না থাকা।
শুধুমাত্র হারাম বা শরীয়ত গর্হিত
পদ্ধতিই একমাত্র উপায় হয়।
৩. সমস্যা চূড়ান্ত জটিল রূপ ধারণ
করা। যার ফলে আক্রান্ত
ব্যক্তি নিরূপায় হয়ে হারাম বা গর্হিত
পন্থা গ্রহণে বাধ্য হয়।
৪. আক্রান্ত ব্যক্তি জটিলতামুক্ত
হওয়ার জন্য
শরীয়তে স্বতঃসিদ্ধভাবে নিষিদ্ধ কোন
কাজ করতে পারবেনা। যেমন কুফরী,
হত্যা যিনা ইত্যাদি। সুতরাং চিকিৎসার
জন্য কুফুরী শব্দ বলে ঝাড়-ফুক
বা তা সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার
করা যাবে না। উল্লেখ্য যে,
শরীয়তে বিশেষ
পরিস্থিতিতে কুফুরী কথা শুধু
মুখে উচ্চারণের অনুমতি রয়েছে বিশ্বাস
দৃঢ় রেখে। কিন্তু উক্ত পরিস্থিতিতেও
জরুরতের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। তাই
চিকিৎসার জরুরতের জন্য
কুফুরী কথা বলা যাবে না।
৫. জরুরতের কারণে গৃহিত হারাম
বস্তুটি ন্যূনতম পরিমাণ ব্যবহার
করতে হবে অর্থাৎ যতটুকু গ্রহণ
করলে জটিলতা মুক্ত হওয়া যায়, তার
চেয়ে বেশি গ্রহণ করবে না।
৬. যে সকল জরুরতের চূড়ান্ত
অবস্থা নিজে নির্ণয় করা যায়
না সেক্ষেত্রে উক্ত শাস্ত্রের
অভিজ্ঞ কারো সত্যায়ন থাকতে হবে।
উপরোল্লিখিত শর্ত মুতাবিক যখন
কোন ব্যক্তি কোন জরুরতের সম্মুখীন
হবে তখন সাধারণ বিধানের ব্যতিক্রম
হারাম জিনিস গ্রহণের অনুমতি থাকবে।
জরুরতের কোন নির্দিষ্ট সময়
সীমা নেই। বরং সমস্যার
জটিলতা যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণই
জরুরত হিসেবে পরিগণিত হবে।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায়
কারো উপর গোসল ফরজ হওয়ার পর
যদি স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যার
কারণে গোসল
না করতে পারে তাহলে তার জন্য
বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। এরূপ
অবস্থায় উক্ত ব্যক্তি তায়াম্মুম
করে নিবে।
মাসয়ালা : রোগীর পূর্ব
অভিজ্ঞতা বা বিজ্ঞ দীনদার
ডাক্তারের নির্দেশনায় যদি জানা যায়
যে, পানি ব্যবহারে রোগ
বৃদ্ধি পাবে বা আরোগ্য লাভে বিলম্ব
হবে, তাহলে তার জন্য তায়াম্মুম করার
সুযোগ রয়েছে।
মাসয়ালা : যার দেহের বিভিন্ন
স্থানে ঘা বা ক্ষতস্থান রয়েছে, তার
ফরজ গোসলের বিধান হলো,
যদি পানি ব্যবহার ক্ষতিকর হয়
এবং ক্ষতস্থানের পরিমাণ পুরো দেহের
অর্ধেকের কম হয়, তাহলে সুস্থ অঙ্গ
ধৌত করে সম্ভব হলে ক্ষতস্থানের
উপর মাসেহ করবে বা তার পট্টির
উপরে মাসেহ করবে। আর যদি অর্ধেক
বা তার চেয়ে বেশি অংশ ক্ষতস্থান হয়,
তাহলে সে শুধু তায়াম্মুম করে নিবে।
লেখক : শিক্ষক যাত্রাবাড়ী মাদরাসা

Post by Dawtul Haq.
Blog eiditor_Syed Rubel.
ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু ,বৌদ্ধ, নাস্তিক ও দেশের নারীবাদীদের ইসলামের বিরুদ্ধে করা সকল অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গাঁ জবাব দেখুন এই পোস্ট টি থেকে

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :