মহরের পরিমাণ - হযরত ফাতিমার মহরানা

কোন মন্তব্য নেই
মহরের পরিমাণ
স্বাভাবিকভাবে বিবাহ সম্পাদনের
বেলায় সকলের জন্য রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নসীহত
ﺍﻥ ﺍﻋﻈﻢ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ ﺑﺮﻛﺔ ﺍﻳﺴﺮﻩ
ﻣﺆﻧﺔ )ﻣﺸﻜﻮﺓ )
সর্বাধিক বরকতময় বিবাহ
হচ্ছে যে বিবাহে মাল সম্পদ যথাসম্ভব
কম খরচ হয়, যাতে সমস্যায় পতিত
হতে না হয়।
এই অমূল্য নসীহত সম্মুখে থাকা চাই।
বিশেষ করে মহর নির্ধারনের বেলায় এই
অমূল্য বাণীর অনুকরণ করা একান্ত
কর্তব্য। হযরত উমর ফারুক তার এক
ভাষণে মহরের ব্যাপারে শরীয়তের মূল
উদ্দেশ্যকে অত্যন্ত
পরিষ্কারভাবে আলোচনা করে বলেন,
ﺍﻻﻻﺗﻐﺎﻟﻮﺍ ﺑﺼﺪﻕ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻓﺎﻧﻬﺎ
ﻟﻮﻛﺎﻧﺖ ﻣﻜﺮﻣﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺍﻭ
ﺗﻘﻮﻱ ﻋﻨﺪﺍﻟﻠﻪ ﻛﺎﻥ ﺍﻭﻻﻛﻢ ﺑﻬﺎ
ﺍﻟﻨﺒﻲ
তোমরা মনোযোগের সাথে শুন! বিবাহের
সময় মেয়েদের জন্য অধিক পরিমাণ
মহরানা নির্ধারণ করো না।
কেননা যদি অধিক পরিমাণ মহর
নির্ধারণ করা দুনিয়ায় সম্মানের
জিনিস হতো অথবা আল্লাহপাকের
নিকট তাকওয়ার বিষয় হতো,
তাহলে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তাই
করতেন। (আবু দাউদ ১/২৮৭)
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস
মোল্লা আলী কারী রহ. সহ অনেকেই
উল্লেখ করেছেন যে হযরত উমর
সর্বোচ্চ চার হাজার দেরহাম মহরের
পরিমাণ নির্ধারণ
করতে ইচ্ছা করেছিলেন, কিন্তু এক
মহিলা পবিত্র কুরআনের ﺁﺗﻴﺘﻢ
ﺍﺣﺪﺍﻫﻦ ﻗﻨﻄﺎﺭﺍﻓﻼ ﺗﺄﺧﺬﻭﺍ ﻣﻨﻪ
ﺷﻴﺌﺎ এ আয়াত পেশ করাতে হযরত
উমর স্বীয় ইচ্ছা পরিত্যাগ করেন।
শরীয়তে মেয়ের উপর নয় বরং স্বামীর
উপর মহর আদায়ের নির্দেশ চূড়ান্ত
করা হয়েছে। কেননা নারীর
প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন
এবং নারীর কোমল ও লাজুক স্বভাবের
প্রতি স্নেহ-মমতা,উদারনীতি অনুসরণ
করে স্বামীকে পাণিপ্রার্থী ও
পাণীপ্রত্যাশী বিবেচনা করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে স্বামী যেন প্রেমিক আর
স্ত্রী যেন প্রেমাষ্পদের
স্থলে আবির্ভূত হয়েছে। স্বামীর উপর
মহর আদায়ের নির্দেশ কার্যকর
করা মূলত স্বামীর প্রেমিক হওয়ারই
কার্যকর পদক্ষেপ। এতে স্ত্রীর
প্রতি স্বামীর আন্তরিক ভালবাসার
বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। এজন্যেই
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত
ফাতিমাকে কিছু দেয়ার পূর্বে বাসর
রাত্রি যাপন করতে নিষেধ করেন-
ﺃﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﻟﻤﺎ ﺗﺰﻭﺝ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻨﺖ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺪﺧﻞ ﺑﻬﺎ ﻓﻤﻨﻌﻪ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺣﺘﻰ ﻳﻌﻄﻴﻬﺎ ﺷﻴﺌﺎ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻴﺲ ﻟﻲ ﺷﻲﺀ
ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻋﻄﻬﺎ ﺩﺭﻋﻚ ﻓﺄﻋﻄﺎﻫﺎ
ﺩﺭﻋﻪ ﺛﻢ ﺩﺧﻞ ﺑﻬﺎ )ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻲ
ﺩﺍﻭﺩ )
হযরত আলী রা. হযরত
ফাতিমাকে বিবাহ করার পর
বাসররাত্রি যাপনের ইচ্ছা পোষণ
করলে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু
না দিয়ে বাসর রাত্রি যাপনের
অনুমতি দেন নি বরং নিষেধ করেন।
হযরত আলী বলেন, দেয়ার মত আমার
নিকট কোন কিছু নেই। রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
যে তোমার লৌহবর্ম দিয়ে দাও। হযরত
আলী হযরত ফাতেমাকে স্বীয় বর্ম
দিয়ে দেন এবং এরপর
বাসররাত্রি যাপন করেন। বস্তুত
এতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আন্তরিক
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং তার
মন জয় করা সহজ হয়।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও মহরের
বেলায় কোন বিশেষ পরিমাণ
আবশ্যিকভাবে নির্ধারণ করেন নাই
তবু অসংখ্য হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত
হয় যে, মহরের পরিমাণ এতটুকু
হওয়া উচিত যা সহজভাবে আদায়
করা যায়। আর যে পরিমাণ মহর
নির্ধারিত হয় তা থেকে কিছু অংশ
বাসররাত যাপনের পূর্বেই
স্ত্রীকে দেয়া চাই। অনেক ফকীহদের
মতে প্রথমে স্ত্রীকে কিছু
না দিয়ে বাসর রাত যাপন মোটেই জায়েয
নেই। শামী কিতাবের উদ্ধৃতি মুতাবিক
(২/৩২৯) হানাফী মাযহাব
মতে স্ত্রীকে প্রথমে কিছু
দেয়া মুস্তাহাব। হযরত আলী হযরত
ফাতিমাকে যে বর্ম দিয়েছিলেন, হযরত
আলীর কথা অনুযায়ী তার মূল্য ছিল
মাত্র চার দেরহাম (৩/৩৪৬)
এতে প্রতীয়মান হয়, অতি সামান্য
হলেও প্রথমে কিছু দেয়া উচিত।
তবে দেয়ার সময় স্বামীকে তার নিজের
অবস্থা এবং সামর্থের প্রতিও খেয়াল
রাখা বাঞ্ছনীয়। আবার যাতে তার
দানের অবমূল্যায়ন না হয় সে বিষয়েও
বিবেচনা থাকা চাই।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অধিকাংশ
স্ত্রীদের মহর পাঁচশত দেরহাম
আনুমানিক প্রায় ১৩১
তোলা চান্দি নির্ধারণ করেছিলেন।
নবী কন্যাদের বেলায়ও এই পরিমাণ
মহরানা নির্ধারণ করা হয়।
রাসূলে পাকের স্ত্রীদের
মধ্যে একমাত্র হযরত উম্মে হাবীবার
মহরানা চার হাজার দেরহাম নির্ধারণ
করা হয়েছিল। আর তা রাসূল পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়
বরং হাবশার বাদশাহ
আছহামা নাজ্জাশী রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
পক্ষ থেকে আদায় করেছিলেন।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কার্যক্রমের
দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে,
এতো অধিক পরিমাণ মহরানা নির্ধারণ
করা সঠিক নয় যা আদায় করা কঠিন
হয়। আবার এতো অল্প পরিমাণ
নির্ধারণ করাও উচিত নয় যাতে তার
অবমূল্যায়ন হয় এবং স্ত্রীর জন্য
অবমাননা অনুভূত হয়। অথচ এ
ব্যাপারে সমাজে সীমালংঘন পরিলক্ষিত
হয়। অধিক পরিমাণে মহরানা নির্ধারণ
করাকে গৌরবের বিষয় মনে করা হয়,
যে পরিমাণ আদায় করা কেবল
কষ্টকরই নয় বরং অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অপরপক্ষে অনেক পরিবারের রেওয়াজ
অনুযায়ী এতো অল্প পরিমাণ
মহরানা নির্ধারণ করা হয়
যা শুনে হাসি পায় এবং স্ত্রীর জন্যও
অত্যন্ত অবমাননাকর হয়।
এক্ষেত্রে শরীয়ত মধ্যপথ প্রদর্শন
করেছে এবং মধ্যম পথে চলার নির্দেশ
করেছে। না এতো অধিক পরিমাণ
যা আদায় করা দুঃসাধ্য হয়,
না এতো কম পরিমাণ যে তাতে আপন
পরিবেশে লজ্জা পেতে হয়।
সে যুগে দেরহামের মূল্য হিসেবে পাঁচ
দেরহামের দ্বারা সাধারণত
একটি বকরি ক্রয় করা যেত।
হেদায়া কিতাবের
হাশিয়াতে এনায়া কিতাবের বরাত
দিয়ে বলা হয়েছে যে, ঐ
যুগে একটি বকরীর মূল্য পাঁচ দেরহাম
ছিল। এই মূল্য ধরেই হযরত উমর
হত্যার মুক্তিপণ হিসেবে দুই হাজার
বকরী প্রদানের ঘোষণা করেছিলেন
(হেদায়া ৫৮৫) এই হিসাবে বর্তমান
সময়ে বকরীর মূল্য ধরে হিসাব
করলে পাঁচশত দেরহামের মূল্য
মোটামুটি কম নয়।
হযরত ফাতিমার মহরানা
হযরত ফাতেমার বিবাহ
সামগ্রী এবং মহরানার বিবরণ
মেশকাতের শরাহ মিরকাত (৩/৪৪৭)
ইবনুল জাওযীর ছিফাতুচ্ছাফাওয়াহ
(৩/৪৩) এবং বেদয়াহ নিহায়াহ
(৩/৩৪৬) সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত
কিতাবেই বিদ্যমান রয়েছে।
মহরানা সম্পর্কে সর্বাধিক
গ্রহণযোগ্য মতানুসারে চারশত
মিছকাল চান্দী ছিল হযরত ফাতিমার
মহরানা। যার মোটামুটি ওযন ১৫০
তোলা রূপার সমপরিমান হয়। বর্তমান
প্রচলিত গ্রামের হিসাব
অনুযায়ী ১৭৫০ গ্রাম ধরা যায়।

সূত্রঃ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তরদাওয়াতি সংগঠন মজলিসে দাওয়াতুলহক। এর মৌল উদ্দেশ্য মানব জীবনেসকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ওআদর্শের প্রতিফলন ঘটানো।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তিবা-অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলারইবাদত আনুগত্যের দাবি পূরণ করাই হলএকজন মুসলমানের ইহকালীন জীবনেরমূল উদ্দেশ্য।।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :