সিয়ামের হিকমত, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও উপকারিতা →পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই
২য় পাতার পর তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে,মোমিন হিসেবে তার কর্তব্য হল সর্বদা আল্লাহর মোরাকাবা করা অর্থাৎ এ দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে আমার প্রতিটি মুহূর্তের প্রতিটি কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পর্যবেক্ষণ করছেন তাই আমাকে কোন কাজে তার অবাধ্য হওয়া চলবে না। তিনি যাতে সন্তুষ্ট হন শুধু তা-ই আমাকে করতে হবে। যদি এ রকম মোরাকাবার সাথে সিয়াম আদায় করা যায় তাহলে তার জন্য রয়েছে যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالـها إلى سبع مئة ضعف. قال الله عز وجل: ( إلا الصوم فإنه لي وأنا أجزى به، يدع شهوته وطعامه من أجلي . ..) رواه البخاري ومسلم
মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধু আমার জন্য আমিই তার প্রতিদান দেব। আমার জন্যই সে পানাহার ত্যাগ করে থাকে। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম
আর এ বিষয়টা সকল প্রকার ইবাদত-বন্দেগিতে থাকতে হয়। যখন মানুষ বিশ্বাস করবে আল্লাহ আমাকে সর্বদা দেখছেন তখন সে বিনা ওজুতে সালাত আদায় করে না। ঠিক তেমনি কোন কাজে ফাঁকি দিতে চেষ্টা করবে না। সকল প্রকার কাজ-কর্ম যথাযথ ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করবে।
(৫) ধৈর্য, সবর ও দৃঢ় সংকল্পের প্রশিক্ষণ : সিয়ামের মাস মূলত ধৈর্য ও সবরের মাস। সিয়াম মনের চাহিদা পূরণে বাধা দেয়ার মাধ্যমে সংকল্পের দৃঢ়তার প্রশিক্ষণ দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন না করে তা মেনে চলার অভ্যাস গড়তে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলে। কখনো তাঁর সীমা লঙ্ঘনেরকথা চিন্তা করে না। আল্লাহ তাআলা সিয়ামের বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন :
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَاتَقْرَبُوهَا (البقرة : 187)
এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং এগুলোর নিকটবর্তী হয়ওনা। সূরা বাকারা :১৮৭
এর মাধ্যমে মানুষ নিজের মন ও বিবেককে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা লাভ করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ধরুন কোন ব্যক্তি একটি খারাপ অভ্যাসে লিপ্ত। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে এর থেকে বিরত থাকতে পারছে না। রমজান মাসের সিয়াম তার তার বদ অভ্যাস উৎপাটন করতে একটা বিরল সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এরপর সে যেন আর বলতে না পারে যে আমি পারি না।
(৬) আখেরাতমুখী করার প্রশিক্ষণ :
সিয়াম পালনকারী পার্থিব সকল ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে দুনিয়ারপ্রতি বিমুখ হয়ে আখেরাতমুখী হওয়ার দীক্ষা নিয়ে থাকে। তার এ ত্যাগ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আখেরাতে জান্নাত লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কিছুর জন্যে নয়। এ আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক কমিয়েআখেরাতের সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়ায় সবক নিয়ে থাকে। আর এ লক্ষ্য অর্জনে সে শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্ম সম্পাদন ক্ষেত্র প্রশস্ত করতে চেষ্টা করে।
(৭) আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়া ও সৃষ্টি জীবের সেবা করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়া :
অনুগ্রহের কথা ভুলে যাওয়া মানুষের একটি স্বভাব। অনুগ্রহমূল্যায়ন করতে শেখে তখন, যখন সে তা হারিয়ে ফেলে। সিয়াম আদায়ের মাধ্যমে বঞ্চিত ও অভাবী মানুষদের দুরবস্থা অনুধাবন করতে শেখে। তখন সে যেমন তার প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলা-মীনের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে আল্লাহর শোকর আদায়ে যত্নবান হয় তেমনি বঞ্চিত, অভাবী, অনাহার ক্লিষ্টমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হয় ও তাদের সেবা করতে উৎসাহ পায়।
(৮) সিয়াম সমাজ সংস্কারের একটি বিদ্যাপীঠ : সিয়ামের যে সকল হিকমত রয়েছেযা ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করে, এসকল হিকমত সমাজকেও পরিশুদ্ধ ও সংস্কারে ভূমিকা রাখে। কেননা ব্যক্তির পরিশুদ্ধতা হলসমাজ শুদ্ধির পথ। ব্যক্তি সংশোধন হয়ে গেলে সমাজ সংশোধনহয়ে যায়। তাইতো আমরা দেখি, সিয়ামকে সামাজিক ভাবে আদায় করতে হয়। অর্থাৎ একই সাথে একই সময়ে। কিন্তু নফল সিয়ামসকলকে এক সময়ে এক সাথে আদায় করতে হবে বলে কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। রমজান আমাদেরকে সমাজ সংস্কারের পথে উদ্বুদ্ধ করে, সমাজ যতই কলুষিত হয়ে যাকনা কেন। রমজান ইসলামি শরিয়া বাস্তবায়নের আন্দোলনের এক অনুকুল সময়। এ সময় যেমন শয়তানের সৃষ্ট প্রতিকূলতা দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনিভাবে মানুষের মধ্যে ইসলামের প্রতি আগ্রহ অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি দেখা যায়। তাই সমাজ সংস্কারের উদ্যোগের এটাইউপযুক্ত সময়। মানুষকে বুঝানোর এটা উত্তম সময় যে, ইসলামি শরিয়া হর বাস্তবায়ন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
(৯) শারীরিক শক্তি ও সুস্থতা অর্জন :
এক নম্বর থেকে আট পর্যন্ত সিয়ামের যে সকল কল্যাণকর দিকআলোচিত হল তা ছাড়াও সিয়ামেরএকটি কল্যাণকর দিক হল স্বাস্থ্যের উন্নতি। নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে খাবার গ্রহণ, পরিমিত আহার, ঠিক একই সময় পানাহার আবার ঠিক একই সময় বিরতি দেয়া ইত্যাদি পাকস্থলীকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশ্রাম দেয় ফলে পাকস্থলী শক্তিশালী হয়। এমনিভাবে ইসলাম প্রবর্তিত প্রত্যেকটি ইবাদত-বন্দেগিতে রয়েছে হিকমত ও মানুষের জন্য অসংখ্য পার্থিব কল্যাণ।
সমাপ্ত

এ বিষয়ে আরো একটি পোস্ট পড়ুন রমজানে যা করনীয়

Blog Eiditor_Syed Rubel


আরো দুটি চমৎকার পোস্ট পড়ুন।পোস্ট এক বিধর্মীদের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলার বীর মুসলমান পোস্ট দুই অমুসলিমরা ইসলামকে নিয়ে এতো সমলোচনা করে কেনো?এর দাত ভাঙ্গা জবাব দেখুনশেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :