হিন্দু থেকে মুসলমান হলেন গঙ্গারাম চোপড়া

কোন মন্তব্য নেই
ইসলাম গ্রহণ নিয়ে সাক্ষাতকার
হিন্দু থেকে মুসলমান হলেন
গঙ্গারাম চোপড়া
মূল : মাওলানা আহমদ আওয়াহ নদভী
অনুবাদ : মুফতী যুবাইর আহমদ
[ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফর
নগর জেলার ফুলাত গ্রামের বিশিষ্ট
আলেমে দ্বীন রাহনুমায়ে ইসলাম
মাওলানা কালিম সিদ্দীকী। বিধর্মীদের
মাঝে দ্বীনের দাওয়াতের মহান কাজ
আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন
তিনি নিরলসভাবে। আর এ জন্য
তিনি নিষ্ঠাবান
দ্বীনী দাওয়াতী কাফেলা পরিচালনা করছ
েন। ভারতের বহু হিন্দু তাঁর নিষ্ঠাপূর্ণ
দ্বীনী দাওয়াতে আলোর সন্ধান
পেয়ে মুসলমান হয়েছেন এবং হচ্ছেন।
আর তারা যেমন তেমন মুসলমান নয়,
মজবূত ঈমানওয়ালা মুসলমান হচ্ছেন।
তাঁদের ইসলাম গ্রহণের প্রেক্ষাপট
বিষয়ে হৃদয়ছোঁয়া ঘটনা নিয়ে ধারাবাহিক
সাক্ষাতকার প্রকাশিত
হয়েছে মাওলানা কালিম
সিদ্দীকী সাহেবের সম্পাদিত
দাওয়াতী পত্রিকা ‘আরমুগান’-এ।
সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন তাঁর
সুযোগ্য সাহেবযাদা মাওলানা আহমদ
আওয়াহ নদভী। আমরা মুফতী যুবায়ের
আহমদ সাহেবের মাধ্যমে সেই শিক্ষণীয়
সাক্ষাতকারগুলো অনুবাদ করে মাসিক
আদর্শ নারীর পাঠক-পাঠিকাগণের
করকমলে পেশ করলাম। - সম্পাদক]
———————————

ভারতের উত্তর প্রদেশের রূহতাক
গ্রামের সম্ভ্রান্ত ফ্যামেলীর ধনাঢ্য
গঙ্গারাম চোপড়া আকস্মিক এক
রোমাঞ্চকর ঘটনায় মুসলমান হয়েছেন।
মুসলমান হয়ে তিনি ‘আবদুল্লাহ’ নাম
ধারণ করেছেন। হিন্দুধর্ম ছেড়ে তাঁর
ইসলাম গ্রহণের প্রেক্ষাপট নিয়ে তাঁর
মুখ থেকে বিস্তারিত বর্ণনা শোনার
জন্য তাঁর নি¤েœাক্ত সাক্ষাতকার
গ্রহণ করা হয়।
———————————

আহমদ আওয়াহ : আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
নওমুসলিম আবদুল্লাহ :
ওয়া আলাইকুমুস্ সালামু
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
আহমদ আওয়াহ : আমাদের এখান
থেকে ‘আরমুগান’ নামে একটি উর্দূ
পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সেখানে বহুদিন
পূর্বে আব্বাজানের
একটি প্রবন্ধে আপনার ইসলাম
গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে জেনেছি। তখন
থেকেই আপনার সাথে দেখা করে এ
ব্যাপারে আপনার সাক্ষাতকার নেয়ার
জন্য আমার মন ব্যাকুল ছিল। মহান
আল্লাহর অপার দয়া যে, আপনি নিজেই
বিশেষ কাজে এখানে এসেছেন। এ
সুযোগে আপনার কিছু সময় নিয়ে এ
ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই।
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : খুব
ভালো কথা। আপনার সাথে সাক্ষাত
করে আমি অত্যন্ত প্রীত হলাম।
হযরতও পরিচয় করিয়েছেন যে,
এটা আমার ছেলে আহমদ! খুব
ভালো লাগলো আপনাকে দেখে।
মনে হলো যে, আল্লাহ
তা‘আলা হযরতকে একটি সুযোগ্য
সন্তান দিয়েছেন।
আসলে আমি হার্ট হাসপাতালের
চিকিৎসা গ্রহণ করতে এ এলাকায়
এসেছি। আজকে আমার চেক-আপের দিন
ছিল। আমি জানতে পারলাম যে,
মাওলানা সাহেবের
সাথে দিল্লীতে সাক্ষাত হতে পারে,
কিন্তু অনেক চেষ্টা করার পরও
সাক্ষাৎ করতে ব্যর্থ হলাম। তাই তাঁর
সাথে সাক্ষাতের জন্য এখানে আসা।
এখন আমার দ্বারা যে কোন খিদমত
হোক, আমি প্রস্তুত আছি।
আপনি আদেশ করুন,
আমি তা মাথা পেতে নিবো ইনশাআল্লাহ।
আহমদ আওয়াহ : প্রথমে আপনার
পরিচয় দিন।
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : পূর্বে আমার
নাম ছিল গঙ্গারাম চোপড়া।
আমি রূহতাক গ্রামের এক
শিতি জমিদার পরিবারে ১৯৪৮ সনের
১লা জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করি।
গ্রামে প্রাইমারি এক স্কুল
থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করি।
তারপর রুহতাক হাইস্কুলে ভর্তি হই।
১৯৬৭ ইং সনে বি.কম করার পর
স্কুলে শিক্ষকতা করতে আরম্ভ করি।
তারপর একজন পরিচিত লোকের
মাধ্যমে সেইলট্যাক্স
বিভাগে চাকুরিতে লেগে যাই।
আমি রূহতাক জেলার সেইলট্যাক্স
অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলাম।
চারবছর পূর্বে আমার স্ত্রীর
কারণে চাকুরী হতে অবসর নিয়ে নিই।
আমার বিবাহ হয়েছে এক ধনী পরিবারে।
আমার স্ত্রী আমার
থেকে বেশী শিক্ষিতা ছিল। বিবাহের
সময় সে শিক্ষা পোস্টে (ই.ঝ.অ)
চাকুরী করতো। আমার ইচ্ছা ছিল যে,
আমার স্ত্রী গৃহিণী হয়ে ঘরে থাকবে।
আমার কাছে মহিলাদের
চাকুরী পছন্দনীয় নয়। তাই
আমি বিবাহের তিনবছর পর অনেক চাপ
সৃষ্টি করে তার চাকুরী বাতিল করাই।
কিন্তু এ সিদ্ধান্ত তার ইচ্ছার
বিপরীত ছিল। তাই এ নিয়ে আমাদের
মাঝে দ্বন্দ্ব-কলহ জন্ম নেয়। এমন
কি তর্ক-বিতর্কের এক
পর্যায়ে সে তার বাপের
বাড়ীতে চলে যায়। তখন তার পরিবার
আমার শত্রু হয়ে যায় এবং এ
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
মুকাদ্দমা চলতে থাকে এবং শেষ
পর্যন্ত এই মুকাদ্দমাই আমাদের
দু’জনের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। আর
তা-ই আমার কুফর থেকে বের
হয়ে ইসলাম কবূল করার মাধ্যম হয়।
আহমদ আওয়াহ : আশ্চর্যজনক কথা!
আপনার হিদায়াত পাওয়ার এবং ইসলাম
গ্রহণের সেই ঘটনাটা বলুন।
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : ঝড়ের
বেগে মামলা চলতে লাগল
এবং মুকাদ্দমার রায় আমার স্ত্রীর
পক্ষে গড়াচ্ছিল। তখন
আশংকা দেখা দিল যে, আমাকে শাস্তি ও
জরিমানা দু’টোই বরণ করতে হবে। তাই
আমার উকিল সাহেব আমাকে পরামর্শ
দিলেন যে, যদি আপনি কোথাও
থেকে মুসলমান হওয়ার
একটি সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে পারেন,
সেটাকে আদালতে পেশ করলে খুবই
সহজে জান বাঁচাতে পারবেন। তার কথায়
আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-
ভাবনা করতে লাগলাম।
আমাকে কোনো একজন মুসলমান
ব্যক্তি বললেন, মালী কোটলায় একজন
মুফতী সাহেব আছেন। তাঁর সার্টিফিকেট
সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য। এ
কথা শুনে আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত
হলাম। সেখানকার স্থানীয় লোকজন
আমাকে বললেন যে, তিনি ১৫/২০
হাজার টাকা নেন। আমার জন্য
এটা কোন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু
সেখানে গিয়ে মুফতী সাহেব পেলাম না।
তিনি হায়দারাবাদে সফরে গিয়েছেন।
চারদিন পর ফিরবেন। এতদিন
অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল
না। তাই সেখান
থেকে ফিরে আসতে লাগলাম।
পথে একটি মসজিদ দেখতে পেয়ে আমার
ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম ।
মনে মনে ভাবলাম, এখানকার ইমাম
সাহেবের কাছ থেকে জেনে নেয়া যাক –
আরো কোথাও এ কাজ হতে পারে কি-
না। ইমাম সাহেব ছিলেন সাহারানপুর
জেলার অধিবাসী। তিনি বললেন,
উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফর নগর
জেলার ফুলাত নামক
গ্রামে মাওলানা কালিম সিদ্দিকী সাহেব
থাকেন। আপনি সেখানে চলে যান, আর
কোথাও জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন
নেই। তিনি কোন টাকা-পয়সা নেবেন না।
বরং সমস্ত কাজ আইনগতভাবেই
করে দেবেন। আমাকে যাওয়ার
পুরো লোকেশন লিখে দিলেন।
কিন্তু অফিসের কাজের ব্যস্ততার
কারণে সেখানে তখন যেতে পারলাম না।
এরপর প্রায় ২৫দিন পর
সেখানে যেতে মনস্থ করলাম।
সেদিন ছিল ২৯ জানুয়ারী ১৯৯৪ ইং।
আমি সেই উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
তখন ছিল রামাজান মাস। সূর্যাস্তের
কিছুক্ষণ পর আমি আমার গার্ড ও
ড্রাইভারসহ ফুলাতে পৌঁছলাম।
মাওলানা কালিম সাহেব
মসজিদে ই‘তিকাফরত ছিলেন। একজন
ব্যক্তি আমাকে তাঁর
কাছে নিয়ে গেলেন। মসজিদের ছোট
একটি কামরায় তাঁর সাথে সাক্ষাত
হলো।
আমি পরিষ্কারভাবে তাঁকে আমার
উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বললাম, আমার
ইসলাম গ্রহণ করার একটি সার্টিফিকেট
লাগবে। তা আমার স্ত্রীর
মুকাদ্দমা থেকে বাঁচার জন্য
আদালতে পেশ করতে হবে।
আমি মুসলমানও হবো না এবং ধর্মও
পরিবর্তন করবো না। শুধু
একটি সার্টিফিকেট চাই।
মাওলানা সাহেব আমাকে বললেন,
আপনি কি আদালতে এ
কথা বলে সার্টিফিকেট দাখিল করবেন?
আমি বললাম, আদালতে এটাই বলব যে,
আমি মুসলমান হয়ে গেছি। তাই এখন
আমার স্ত্রীর সাথে কোন সম্পর্ক
নেই। মাওলানা সাহেব বললেন,
আপনি এখন যেখানে বসে আছেন
এটা হলো মসজিদ, মহান মালিকের ঘর।
তাঁর মহান আদালতে আপনাকে,
আমাকে এবং সকলকে উপস্থিত
হতে হবে। সেখানে সর্বপ্রথম এই ঈমান
ও সার্টিফিকেটের ব্যাপারে প্রশ্ন
করা হবে। নকল সার্টিফিকেট
দ্বারা সেখানে বাঁচা যাবে না।
সেখানে সারাজীবন
জাহান্নামে থাকতে হবে এবং শাস্তি পেতে
হবে। যাক, এটাতো আপনার
এবং আপনার মালিকের ব্যাপার। কিন্তু
আমি বলতে চাই,
আপনি আমাদেরকে এটা কেন বললেন যে,
আমি মুসলমান হবো না?
আপনি আমাদেরকে এটা বলুন যে,
আমি মুসলমান হবো; আমাকে মুসলমান
করে নিন এবং একটা সার্টিফিকেটও
লাগবে।
আমরা আপনাকে কালিমা পড়াচ্ছি।
অন্তরের ভেদ তো আমরা জানি না।
আমরা এই মনে করে আপনাকে মুসলমান
বানিয়ে নিব যে, (স্বচ্ছ মনে) বাস্তবেই
আপনি মুসলমান হচ্ছেন। এতে আমাদের
লাভ হবে যে, আমাদের মহান মালিক
একজন মানুষকে মুসলমান করার
উসীলা হওয়ার কারণে জান্নাতের
অঙ্গীকার করেছেন। এর
দ্বারা আমাদের সেই কাজ আদায়
হয়ে যাবে। আর অন্তরের ব্যাপার
তো অন্তর্যামী মালিকই জানেন।
আপনি এত দূর ভ্রমণ করে তাঁর
ঘরে এসেছেন,
হয়তো তিনি আপনাকে সত্য
ঈমানওয়ালা বানিয়ে দেবেন এবং সেটাই
আমাদের নিকট সত্য সার্টিফিকেট
হবে। আমরা নকল কোন কাজ করি না।
তখন আমি বললাম, জি হ্যাঁ, সত্য মনেই
ইসলাম গ্রহণ করতে চাই।
আমি একটি সার্টিফিকেটও চাই।
মাওলানা সাহেব তখন আমাকে ইসলাম
সম্পর্কে পথ-নির্দেশনা দিলেন
এবং এটাও বললেন যে, মৃত্যুর পর সেই
মহান বিচারকের মহান
আদালতে আমাদের উপস্থিত হতে হবে।
সেখানে মিথ্যা সাক্ষ্য ও
মিথ্যা সার্টিফিকেট কোনটাই চলবে না।
আমি যে কালেমা পড়াচ্ছি, এটা সেই
মহান মালিকের জন্য। যদি সত্য
মনে করে পড়েন, তাহলে মৃত্যুর পর
আজীবন জান্নাতে থাকবেনÑযদিও
আপনি কাউকে না জানান। অতঃপর
মাওলানা সাহেব
আমাকে কালিমা পড়ালেন
এবং হিন্দিতে তার অনুবাদ করে দিলেন।
এরপর সদা-সর্বদা আল্লাহর ইবাদত ও
তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর পূর্ণ
আনুগত্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকার
নিলেন। আর আমার ইসলামী নাম
রাখলেন আবদুল্লাহ।
এরপর মাওলানা সাহেব বললেন, এখন
আমাদের মাদরাসার অফিস বন্ধ।
আপনি আজ এখানে থাকুন, আগামীকাল
সকাল ৯টার সময় সার্টিফিকেট
বানিয়ে দিব ইনশাআলাহ।
আপনি যদি চান যে, মসজিদে আমাদের
এবং আমাদের সাথীদের সাথে থাকবেন,
তাহলে এখানে থাকতে পারেন।
এখানে আপনি অনেক সৎ লোকের সঙ্গ
পাবেন। আর যদি আমাদের বাসায়
থাকতে চান, তাহলে সেখানেও
থাকতে পারবেন। আমি মসজিদে থাকার
আগ্রহ পেশ করলাম।
সেখানে মাওলানা সাহেবের সাথে অনেক
মানুষ ই‘তিকাফরত ছিলেন।
সেখানে অনেকেই ছিলেন হরিয়ানার। তার
মধ্য থেকে সোনিপথের সাথী ছিলেন
সবচাইতে বেশী। আমি সোনিপথে কয়েক
বছর ছিলাম।
আমি লক্ষ্য করলাম, মাঝরাতের পর
সকলেই উঠে গেলেন এবং মহান মালিকের
নিকট ক্রন্দন করতে লাগলেন। তাঁদের
মধ্যে অনেকেই জিকির করছিলেন। সেই
লোকগুলোকে আমার খুব ভালো লাগল।
তখন আমিও উঠে গেলাম এবং তাদের
সাথে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর জিকির
করতে লাগলাম। এত মামলা-মুকাদ্দমা,
পারিবারিক অশান্তি-পেরেশানী ও
অস্থিরতার মধ্যে এই
রাতটি এমনভাবে কাটলো যেন তৃপ্ত
শিশু তার মায়ের কোলে এসে বসলো।
সকালে আমাকে কথামত ইসলাম গ্রহণের
সার্টিফিকেট দেয়া হলো। সার্টিফিকেটের
ফিস দিতে চাইলে মাওলানা সাহেব
কোনোরূপ বিনিময়
গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলেন।
এবার আামার ফেরার পালা। কিন্তু এই
শান্তিময় পরিবেশে আমি এত
আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছি যে, আমার মন
চাইল যে, আরো কিছু সময়
এখানে অতিবাহিত করি। তাই
আমি মাওলানা সাহেবের
কাছে আরো একদিন থাকার
অনুমতি চাইলাম। মাওলানা সাহেব
বললেন, খুব ভালো কথা, একদিন নয়,
যতদিন আপনার মন চায় আপনি থাকুন।
আপনি আমাদের মেহমান,
এখানে আপনার কোন কষ্ট হলে মাফ
করবেন।
অনুমতি পেয়ে আমি রয়ে গেলাম।
সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়
মুরিদদের সামনে মাওলানা কালিম সাহেব
আল্লাহওয়ালাদের ঘটনা এবং কুরআন-
হাদীসের আলোচনা পেশ করলেন।
আমি তা মনোযোগ
দিয়ে শুনতে লাগলাম। আর আমার
গার্ডও আমার সাথে ছিল – সেও
শুনতে লাগলো।
বিকালে সোনিপথের এক
সাথীকে নিয়ে খাতোলী বাজার থেকে ২০
কেজি মিষ্টি নিয়ে এলাম। আমার
ইচ্ছা হলো যে, আল্লাহর এই প্রকৃত
ভক্তদেরকে আমার ঈমান আনার
আনন্দে মিষ্টিমুখ করাই ।
রাত্রে খানা খাওয়ার পর দুই
সাথী দ্বারা মিষ্টিগুলো বণ্টন করালাম।
পরদিন এমন পরিবেশ ছেড়ে যেতে মন
চাচ্ছিল না। কিন্তু অফিসের কাজ
এবং তৃতীয় দিন আমার মুকাদ্দমার
তারিখ থাকার দরুণ যেতে বাধ্য হলাম।
দুই রাত্রের সেই শান্তিময় পরিবেশ
আমার অশান্ত ও অস্থির
জীবনকে শীতল করে ফেলেছিলো।
সঙ্গে আসা আমার গার্ড মহিন্দর
বলতে লাগলো, স্যার!
এখানে এসে থাকার দরকার।
আপনি কি মাওলানা সাহেবের ভাষণ মন
দিয়ে শুনেছেন? আমার ১৫ বছর
হয়ে গেলো রাধা স্বামীর
মন্দিরে যাওয়া-আসা করার। যেই
সততা, শান্তি ও প্রেম এখানে পেলাম,
তার বাতাসও সেখানে লাগেনি। এমন
লাগছিল যে,
প্রত্যেকটি কথা অন্তরে স্পর্শ
করছিলো। স্যার, ঘর-সংসার সব
ছেড়ে দিন এবং মাওলানা সাহেবের
সংস্পর্শে চলে আসুন। সুখ-
শান্তিতো এখানেই আছে।
আমি তাকে বললাম, তুমিও
কালিমা পড়ে নিতে? সে বলল, স্যার!
তিনি যখন
আপনাকে কালিমা পড়তে বললেন, তখন
আমিও
আস্তে আস্তে কালিমা পড়ছিলাম
এবং মনে মনে নিজ মালিককে বলছিলাম
যে, হে মালিক! আপনি অন্তরের ভেদ
জানেন। যদি এই ধর্ম সত্য হয়,
তাহলে স্যারের মনকে এই ধর্মের
দিকে ধাবিত করে দিন এবং আমাকেও
তাঁর সাথী বানিয়ে দিন।
ফেরার সময় মাওলানা সাহেব তাঁর
কিতাব ‘আপনার আমানত’
আমাকে পাঁচকপি দিয়ে বলেছেন, এ
বইগুলো আপনি পড়ুন এবং আপনার
সাথীদেরকেও পড়তে দিন।
আমি বাড়ীতে গিয়ে একটি বই আমার
গার্ড মহিন্দরকে দিলাম
এবং একটি আমি নিজেও পড়লাম।
এখন আমার মনে ইসলামের সত্যতার
ব্যাপারে শতভাগ বিশ্বাস জন্মে গেল।
তার কারণ –
একেতো মাওলানা সাহেবের
পথনিদের্শনা, দ্বিতীয়ত এই অমূল্য
বইয়ের হিদায়াতী কথা, আর
অপরদিকে বাস্তবভাবে আমি দুইদিন
ঈমান ওয়ালাদেরকে দেখেছি যে, কেমন
আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ তাঁদের আমল ও
আখলাক!
বাড়ীতে পৌঁছার পর উক্ত সার্টিফিকেট
দেখানোর জন্য আমার উকিল
আমাকে ফোন করলেন।
আমি তা দেখানোর জন্য পরদিন
সাক্ষাত করতে চাইলাম। কিন্তু সকাল
হতেই আমার মনে হচ্ছিল যে, আমার এই
সার্টিফিকেট আমার মহান মালিকের
আদালতে পেশ করতে হবে। আমার
মুকাদ্দমা থেকে বাঁচার জন্য
এটা আদালতে পেশ করা উচিত হবে না।
তখন আমি ‘আপনার আমানত’
বইটি হাতে নিলাম এবং মহান
মালিককে হাজির-নাজির মেনে, সত্য
দিলে সেখান থেকে কালিমা দেখে পুনরায়
পড়লাম।
অতঃপর আমি সার্টিফিকেট ছাড়াই
আদালতে গেলাম এবং এ
ব্যাপারে কোনকিছু প্রকাশ করলাম না।
ফলে মুকাদ্দমার ফয়সালা আমার
স্ত্রীর পক্ষে গেল। আর আমার উপর
এক লক্ষ রুপি জরিমানা এবং মাসিক
খরচ প্রদানের রায় দেয়া হলো। আমার
ঈমান রক্ষার জন্য আমি সব
পরিস্থিতি বরণ করে নিলাম।
ঈদের পর আমি সোনিপথ মাদরাসায়
গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে সাক্ষাত
করলাম এবং ইসলাম গ্রহণ করার
আনন্দে সকল ছাত্র ও
শিক্ষককে দাওয়াত
করে মিষ্টি খাওয়ালাম। ইসলাম গ্রহণ
করায় মনে খুবই প্রশান্তি অনুভব
করছিলাম।
তবুও আমার খুবই মৃত্যুর ভয়
হচ্ছিলো এবং চিন্তা হচ্ছিল যে, আমার
তেমন কোনই আমল নেই, আমি আমার
মহান মালিকের নিকট কী জওয়াব
দিবো? এমনি করে একদিন
আমি অফিসে থাকাকালে আমার
বুকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হল।
ব্যথা বাড়তে বাড়তে একসময়
আমি বেহুঁশ হয়ে গেলাম।
আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
ডাক্তার হার্ট অ্যাটাকের রিপোর্ট
দিলেন। আমি ২৪দিন
ইমার্জেন্সিতে এবং I.C.U-তে ছিলাম।
এরপর অসুস্থ অবস্থায় চারমাস বাসায়
ছিলাম এবং এটাকে সুবর্ণ সুযোগ
মনে করে ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত
জানার চেষ্টা করলাম। এই
ক’দিনে নামায শিখে নামায
পড়তে লাগলাম
এবং দিল্লী থেকে ‘ইসলাম কী?’, ‘মৃত্যুর
পর কী হবে?’ ইত্যাদি কয়েকটি বই
ক্রয় করে এনে মনযোগ
সহকারে পড়লাম।
এরই মধ্যে মাওলানা কালিম সাহেবের
সাথে সাক্ষাত করার জন্য খুবই মন
চাচ্ছিলো। একদিন এক
ব্যক্তি এসে বললো যে, আজ বাগিচার
বাগ এলাকায় মাওলানা কালিম সাহেবের
প্রোগ্রাম আছে। আমি তার
সাথে সাক্ষাত করতে যাবো।
আমি বললাম, আমাকেও নিয়ে যান,
আমারও সাক্ষাত করার জন্য খুবই মন
চাচ্ছে।
তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে চললেন।
আমরা যখন বাগিচার বাগ এলাকায়
পৌঁছলাম, তখন মসজিদে প্রোগ্রাম শুরু
হয়ে গিয়েছিলো। বয়ান শেষ হওয়ার পর
আমরা মাওলানা সাহেবের সাথে সাক্ষাত
করলাম। মাওলানা সাহেব খুবই
খুশী হলেন যে, এতোদিন পর দেখা হলো।
তবে আমাকে এত দুর্বল দেখে পেরেশান
হলেন। আমি জানালাম, আমার
মারাত্মক রোগ হয়েছিল। ২৪দিন
ইমার্জেন্সিতে ছিলাম।
প্রোগ্রামের পর একজনের বাসায়
দাওয়াত ছিলো। মেজবান আমাদেরকেও
জোর করে নিয়ে গেলেন। মাওলানা সাহেব
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
চোপড়া সাহেব! আপনার তো মনে হয়
খাওয়ার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আছে?
আমি মাওলানা সাহেবকে বললাম,
হযরত! এখন
আমাকে চোপড়া বলে সম্বোধন
না করলে ভালো হয়। আপনি নিজেই
তো আমার নাম আবদুল্লাহ রেখেছেন।
এবার হযরত বললেন, আবদুল্লাহ
সাহেব! আপনার জন্য আলাদা কিছু
ব্যবস্থা করা যায়। আমি বললাম,
হযরত! আমি আপনার সাথেই খাব। এর
বরকতে আমি রোগ থেকে মুক্ত
হবো ইনশাআল্লাহ।
এরপর আমি মাওলানা সাহেবকে বললাম,
হযরত! আপনার দেয়া ‘আপনার
আমানত’ বইটি পড়েছি।
আসলে তো আমি আপনার সাথে থেকেই
মোটামুটি মুসলমান হয়ে গিয়েছিলাম।
এরপর যখন ‘আপনার আমানত’
বইটি পড়লাম, তখন আমার
পুরোপুরি বিশ্বাস এলো এবং আমি একাই
দ্বিতীয়বার আল্লাহকে হাজির-নাজির
মেনে কালিমা পড়েছি। এরপর
আমি আদালতে আর সার্টিফিকেট
জমা দেই নি। এখন আল্লাহর
শুকরিয়া যে, আমি পাঁচওয়াক্ত নামায
আদায় করি এবং আপনি আমার নামায
দেখে নিন। এই বলে যখন আমি নামায
পড়া দেখালাম এবং বিভিন্ন দু‘আ
শুনিয়ে দিলাম, তখন মাওলানা সাহেব
এতো খুশী হলেন যে, তৎক্ষণাত
আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন
এবং খুশীতে ও আদরে আমার হাতে চুমু
খেতে লাগলেন আর বারবার
আমাকে অভিনন্দন জানাতে লাগলেন।
এরপর বললেন, আমি ও আমার
সাথীরা সকলে দু‘আ করেছিলাম যে,
হে আল্লাহ! আমরা শুধু মুখে উচ্চারণ
করিয়ে দিতে পারি, অন্তর গলানোর
মালিক তো আপনি।
আপনি তাকে প্রকৃত মুসলমান
বানিয়ে দিন। আল্লাহর শোকর যে,
তিনি এই নাখাস্তার দু‘আ কবূল
করেছেন।
আহমদ আওয়াহ : আপনার গার্ড
মহিন্দর-এর ঈমান আনার
ব্যাপারে কোন চেষ্টা করেছেন কি?
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : তার ফিকির
আমার করতে হয়নি। ‘আপনার
আমানত’ বইটি পড়ে সে নিজে থেকেই
অনেক উঁচু পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
আহমদ আওয়াহ : তিনি এখন কোথায়?
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : সে তো এখন
জান্নাতে।
আহমদ আওয়াহ : তা কীভাবে,
কিছুটা শুনাবেন?
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : সে জাঠ
পরিবারের সন্তান ছিল এবং অনেক
ধার্মিক হিন্দু ছিলো। ফুলাতে আসার
পর তার অন্তরে পরিবর্তন এলো।
সে ‘আপনার আমানত’
বইটি পড়ে আমার
কাছে এলো এবং বলতে লাগলো, ‘স্যার!
আপনি কি ঐ কিতাবটি পড়েছেন?’
আমি বললাম, ‘এখনও পড়িনি।’
সে বলল, ‘আপনি তার গুরুত্ব দিচ্ছেন
না স্যার! আপনি বইটা অবশ্যই পড়ুন।
আমি এখন খাঁটি মুসলমান। আমি আমার
নাম মুহাম্মদ কালিম রাখলাম। আজ
থেকে আপনি আমাকে মুহাম্মদ কালিম
বলে ডাকবেন।
এরপর তার ভেতর দ্বীন শেখার আগ্রহ
সৃষ্টি হলো। রূহতাক চৌরাস্তায়
একটি মসজিদ আছে, যাকে ‘লাল
মসজিদ’ বলা হয়।
এটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ।
এখানে একজন অনেক বড় পীর সাহেব
থাকতেন। যিনি পুরো হিন্দুস্তানে দ্বীন
প্রচার করেছেন। কালিম এই মসজিদের
ইমাম সাহেবের কাছে আসা-
যাওয়া করতো।
একবার সে চারমাসের
ছুটি নিয়ে তাবলীগ
জামা‘আতে গেলো এবং তিন
চিল্লা সম্পন্ন
করে লম্বা দাড়ি নিয়ে ফিরে এলো।
এভাবে সে খুবই দ্বীনদার হয়ে যায়।
একদিন আমি কোন
কাজে দিল্লী গিয়েছিলাম। গার্ড
হিসেবে তাকে সাথে করে নিয়েছিলাম।
সে আমার থেকে জুমু‘আর নামায পড়ার
জন্য অনুমতি নিলো। অফিস থেকে উজু
করে বের হয়ে রাস্তা অতিক্রম করার
সময় হঠাৎ এক মটর সাইকেলের
সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে গিয়ে মাথ
ায় ভীষণ আঘাত পেলো। ড্রাইভার
আমাকে তার দুর্ঘটনার খবর
দিলে আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম
। আটদিন পর্যন্ত সে সেখানেই ছিল,
কিন্তু হুঁশ ফিরে আসেনি। তার পরিবার
তার চিকিৎসা করতে থাকলো। পনের
দিন পর আমি যখন সাক্ষাত
করতে গেলাম, তখনও সে বেহুঁশ ছিলো।
এরই মধ্যে হঠাৎ করে তার শরীর
কেঁপে উঠল। আমি আওয়াজ দিলাম।
সে চোখ মেলল
এবং আমাকে ইঙ্গিতে কাছে ডেকে আস্তে
আস্তে বললো, ‘স্যার! আমার
সার্টিফিকেট কবুল হয়ে গেছে। এরপর
সে একবার কালিমা পড়ে শোনাল
এবং আল্লাহর
ইশ্কে কাঁদতে কাঁদতে চিরদিনের জন্য
চুপ হয়ে গেল। এভাবে সে আমার অনেক
আগে চলে গেলো। সত্যিই সে খুব
ভালো মানুষ ছিলো।
সে পরপারে চলে গিয়েছে, কিন্তু
সে সর্বদাই আমার কানে বলে : ‘স্যার!
আমার সার্টিফিকেট কবুল হয়ে গেছে,
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর
রাসূলুল্লাহ।’
সেদিন থেকে আমি প্রত্যেক দিন দু‘আ
করি, ‘হে আল্লাহ! আপনি এক প্রকৃত
মুসলমানের সার্টিফিকেট কবুল
করেছেন। তার সদকায় এবং সত্য রাসূল
হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
উসিলা করে আমার মত ধোঁকাবাজের
সার্টিফিকেটও কবুল
করে নিন’ (নওমুসলিম আবদুল্লাহ
কেঁদে কেঁদে বললেন)।
আহমদ আওয়াহ : আপনার সেই
স্ত্রী কোথায়? আপনার কি কোন
সন্তান আছে? এ ব্যাপারে তো কোন
কিছু বলেন নি।
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : হ্যাঁ, তাদের
ব্যাপারে বলছি। আমি পাঁচওয়াক্ত
নামাযের সাথে বহুদিন থেকে তাহাজ্জুদ
নামায পড়াও শুরু করে দিয়েছি। এক
রাত্রে আমি আমার
স্ত্রীকে স্বপ্নে দেখলাম যে, সে এক
কামরায় বন্দী অবস্থায়
আছে এবং আমাকে বলছে,
“আমি যেমনই হই না কেন,
আপনি আমাকে এই আবদ্ধ
কামরা থেকে উদ্ধার করুন। যখন
আপনি আছেন, তাহলে আপনি ছাড়া এই
বন্ধ ঘর থেকে কে আমাকে মুক্ত
করবে?”এ বলে সে অনেক কাঁদছিলো।
এতে আমার দয়া হলো।
আমি তাকে উদ্ধার করতে মনস্থ
করলাম। আমি দেখলাম, সেই কামরায়
বড় একটি তালা লাগানো। কিন্তু আমার
কাছে চাবি নেই। তাই আমি অনেক
পেরেশান হয়ে গেলাম যে, এই
তালা কীভাবে খোলা যায়? তখন হঠাৎ
আমার গার্ড মুহাম্মদ কালিম পকেট
থেকে চাবি বের করে দিলো এবং বললো,
স্যার! এই নিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-
এর চাবি। আপনি তাকে উদ্ধার করছেন
না কেন?
এ সময় আমার চোখ খুলে গেলো,
আমি জেগে গেলাম। তখন ঘড়ি দেখলাম,
রাত্র ৩টা বেজেছে। আমি উজু
করে তাহাজ্জুদের নামায আদায়
করলাম। আমার মনে হলো, এই
মহিলা সারাটা জীবন আমার জন্য
উৎসর্গ করেছিল। এমনকি খরচাও
আমার থেকে নিতো। আর আমিও
একা থাকতে থাকতে ত্যক্ত-বিরক্ত
হয়ে গিয়েছিলাম। তাই আমি গুনাহগার
ভাঙা অন্তর নিয়ে আমার আল্লাহর
দরবারে হাত উঠালাম এবং বললাম,
“হে দয়াময় করুণাময় রহীম রহমান!
আমি এখন সমস্ত
মিথ্যা প্রভুকে ছেড়ে আপনার
ইবাদতে মনোনিবেশ করেছি।
আপনি ব্যতীত আর কেউ নেই যে,
আমার চাওয়া-পাওয়াকে পূরণ
করতে পারে। হে আল্লাহ!
যে নারীটি তার পুরো যৌবন আমার
জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছে,
তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।
হে দয়াময় পরম করুণাময় রাহমানুর
রাহীম! আপনি এক অমুসলিম
গঙ্গারামকে আবদুল্লাহ
বানাতে পেরেছেন, তাহলে এক
সীতা দেবীকে ফাতিমা অথবা আমিনা বান
িয়ে আমার ‘মুসলমান স্ত্রী’ কেন
বানাতে পারবেন না?”
আমি অনেক দু‘আ করেছি এবং আমার
প্রত্যেকটি পশম আমার দু‘আর
সাথে শরীক ছিলো। আমার স্বপ্নের
কারণে আমার ওপর মহান আল্লাহর
মহিমার এক আশ্চর্য অনুভূতির
সৃষ্টি হয়।
আহমদ আওয়াহ : তারপর কী হলো?
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : এক
গান্ধা ভিখারী বান্দা মহান দয়ালুর
দরজা নক করেছে! দয়াময় মালিকের
দয়া তো অসীম। তাহলে কেন
তিনি দরজা খুলবেন না?
দু’দিন পর তৃতীয় দিন আমি আমার
ঘরে দুপুরের সময় বসা ছিলাম। হঠাৎ
কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি কাজের
ছেলেকে দরজা খুলতে বলে বললাম,
দেখতো কে?
আমার কান বিস্মিত হলো। কারণ,
কাজের ছেলে আমাকে এসে বললো, অমুক
এসেছে। আমার চোখ বিস্ময়াভিভূত হল
যখন সীতা দুই বাচ্চাসহ আমার
সামনে এলো এবং আমাকে দেখামাত্র
কেঁদে ফেললো। সে দীর্ঘ ১০ বছর পর
আমার কাছে এলো। সে অনেকক্ষণ
পর্যন্ত কাঁদলো। আমার ছেলে-
মেয়েকে সে নিয়ে এসেছে। তারা বেশ বড়
হয়ে গিয়েছে। সে বলতে লাগল,
আপনি যখন আমার থেকে বিমুখ,
তাহলে আমার আশা-আকাক্সক্ষা আর
কীভাবে পূরণ হবে?
আমি তাকে সান্ত্বনা দিলাম। আমার
মনে হচ্ছিল যে, আমার আল্লাহ আমার
এই গান্ধা হাতকে ভিক্ষা দিয়েছেন বলেই
সে এসেছে। এর প্রমাণ পেলাম তখন –
যখন আমি তাকে বললাম, এখন
ব্যাপারটা হাত থেকে বের হয়ে গিয়েছে।
সে জিজ্ঞেস করলো, কেন?
আমি বললাম, আমি মুসলমান
হয়ে গিয়েছি। সে বললো, সব অবস্থায়ই
আমি আপনার সাথেই থাকবো;
আমি আপনার, আপনারই থাকব।
আমি তাকে ইসলাম গ্রহণ
করে কালিমা পড়তে বললাম।
তৎক্ষণাত সে প্রস্তুত হয়ে গেলো।
তখন আমি তাকে কালিমা পড়ালাম
এবং তার নাম রাখলাম আমেনা। আর
আমার ছেলেমেয়েও সেই
সঙ্গে কালিমা পড়ে মুসলমান হল।
ছেলের নাম হাসান এবং মেয়ের নাম
ফাতেমা রাখলাম।
এতদিন পর তার এভাবে এখানে আসার
কারণ সম্পর্কে সে বললো, সে তার
বাবার বাড়ীতে পৃথক রুমে থাকলেও
বাচ্চাদের ঝগড়াকে কেন্দ্র
করে ভাবীদের সাথে তার ঝগড়া হয়।
তার ভাবী তাকে অনেক
গালাগালি করে এবং বলে, “যদি তুই
ভালোই হতিস, তাহলে স্বামীর ঘর
ছাড়লি কেন? যে স্বামীকে ত্যাগ করে,
সে কি ভালো মেয়ে?” ব্যস, এটা তার
অন্তরে দাগ কাটলো।
আসলে এটা তো বাহানা। আমার দয়াময়
আল্লাহ আমায় তাকে ভিক্ষা দেয়ার
জন্যই এরূপ করেছেন।
আলহামদুলিল্লাহ! এরপর থেকে দেড়
বছর ধরে সে আমারই সাথে আছে।
আমরা সুখে শান্তিতে দ্বীনী জীবন
যাপন করছি।
আহমদ আওয়াহ : আবদুল্লাহ সাহেব!
মহান আল্লাহর দরবারে আপনার দু‘আ
কবুলের এই আশ্চর্য ঘটনায় আপনার
ভিতরে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়েছে?
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : এই ঘটনার পর
আল্লাহ তা‘আলার সাথে আমার অন্য
এক তা‘আল্লুক সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।
আমার এখন এই অবস্থা যে, আমার
ইয়াক্বীন হয় – আমি যদি আমার
আল্লাহর কাছে এই আবদার করি যে,
সূর্য পশ্চিম থেকে উঠাতে হবে,
তাহলে আমার সেই আবদারও পুরণ
করা হবে।
আহমদ আওয়াহ : আপনি অনেক
ভাগ্যবান। আল্লাহ তা‘আলা আপনার
সার্বিক মঙ্গল করুন। পাঠক-
পাঠিকাদের জন্য আপনি কিছু পয়গাম
দিতে চান?
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : আপনার
এবং সকলের কাছে আমার আকুল
আবেদন, আমার জন্য এই দু‘আ
করবেন, আল্লাহ তা‘আলা যেন
আমাকে ঈমান ও সিজদার অবস্থায়
দুনিয়া থেকে তুলে নেন। আমি আমার
স্ত্রীকে এই ওসীয়ত করেছি যে,
আমি মারা গেলে আমার ঐ
ঈমানী সার্টিফিকেট যেন আমার
সাথে কবরে দিয়ে দেয়া হয়। দু‘আ
করবেন, আল্লাহ তা‘আলা যেন এই
অধমের সার্টিফিকেট কবুল করেন। আর
বিশেষ করে আমার জন্য এবং দুনিয়ার
সকল মানুষের জন্য দু‘আর আবেদন যে,
আল্লাহ তা‘আলা যেন সকলকে ঈমানের
সাথে মৃত্যু দান করেন।
আহমদ আওয়াহ : আমীন।
ছুম্মা আমীন। অনেক
শুকরিয়া আবদুল্লাহ সাহেব
আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য।
নওমুসলিম আবদুল্লাহ : আপনাদের
প্রতিও অনেক অনেক শুকরিয়া,
ফী আমানিল্লাহ।
(দ্রষ্টব্য : আরমুগান – ২০০৪ ইং)
…………………………………………
…………………………………………
…………………………………………
……
নওমুসলিম আবদুল্লাহর জন্য
দু‘আয়ে মাগফিরাতের নিবেদন
সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! আপনি এ
খবর শুনে অবশ্যই আশ্চর্যানি¦ত ও
ঈর্ষান্বিত হবেন যে, উক্ত নওমুসলিম
আবদুল্লাহ ১৮ই মার্চ – ২০০৫
ইং জুমু‘আর দিন ইশার নামাযরত
অবস্থায় সিজদার মধ্যে নিজ হাদী ও
খালেক আল্লাহর
ডাকে সাড়া দিয়ে চিরদিনের জন্য
চলে গেছেন
(ইন্না লিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
)।
[বিস্ময়কর লাগে যে, মহান আল্লাহর
সাথে নওমুসলিম আবদুল্লাহ সাহেবের
কেমন মজবুত সম্পর্ক ছিল যে,
তিনি যা চেয়েছেন আল্লাহ
তা‘আলা তাকে তা-ই দান করেছেন।
এমনকি তিনি যে সিজদা অবস্থায় মৃত্যু


ব্লগ সম্পাদক ও এ্যাডমিনঃসৈয়দ রুবেল উদ্দিনব্লগের প্রকাশিত পোস্ট গুলি ফেসবুকে শেয়ার করে আমাদের চলার পথকে আরো গতিময় করে তুলুন ।আমরা দিন রাত খাটিয়ে পোস্ট গুলি লেখি ।ব্লগে প্রকাশ করে আপনাদেরকে উপহার দেয় ।আপনারা যদি শেয়ার না করেন?তাহলে আমরা তো সামনে এগিয়ে যেতে পারবোনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :