অসীয়তের বিধান - মহিলা এবং পুরুষের অংশ

কোন মন্তব্য নেই
অসীয়তের বিধান
এতীমদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য
উপরোক্ত বিধি-বিধান ব্যতীত আর
একটি উত্তম ব্যবস্থা অসিয়তের
নামে বিদ্যমান রয়েছে।
যারা উত্তরাধিকারী হয় তাদের
ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয়।
কেননা হাদীসে বলা হয়েছে ﻻ ﻭﺻﻴﺔ
ﻟﻮﺍﺭﺙ আর যারা পরিত্যক্ত
সম্পত্তির অংশীদার হয়
না তাদেরকে উত্তরাধিকারীর
সমপরিমান অংশের অধিক পরিমান
অসীয়ত বিধির মাধ্যমে প্রদান
করা যেতে পারে। কেননা উত্তরাধিকার
বন্টন ব্যবস্থা শরীয়ত কতৃক
নির্ধারিত হওয়ার কারণে নিকটতম
আত্মীয় ওয়ারিশদের জন্য অসীয়তের
বিধান কার্যতঃ রহিত করা হলেও
যারা ওয়ারিশ নয় তাদের জন্য
সর্বসম্মতভাবেই অসীয়তের
মাধ্যমে সাহায্য করা মুস্তাহাব
হিসেবে বিবেচিত রয়েছে। আল্লামাহ
শা’রানী বলেন-
ﺍﺟﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻮﺻﻴﺔ
ﻣﺴﺘﺤﺒﺔ)ﺍﻟﻤﻴﺰﺍﻥ ﻟﻠﺸﻌﺮﺍﻧﻲ )
অনেক সাহাবা এবং ফকীহদের
মতে যারা ওয়ারিশ নয় তাদের জন্য
অসীযত করা ওয়াজিব। তাদের
মতে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেÑ
ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻀَﺮَ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢُ
ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﺇِﻥْ ﺗَﺮَﻙَ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﺍﻟْﻮَﺻِﻴَّﺔُ
ﻟِﻠْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﻭَﺍﻟْﺄَﻗْﺮَﺑِﻴﻦَ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ
)ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ )
তোমাদের মধ্যে যারা সহায় সম্পদ
রেখে মৃত্যুবরণ করবে তাদের জন্য
অসীয়ত করা জরুরী।
এক হিসেবে এই আয়াতের অসীয়তের
হুকুম উত্তরাধিকারীর জন্য রহিত
হয়েছে বটে, কিন্তু
যারা মিরাসে উত্তরাধিকারী নয়,
তাদের বেলায় অসীয়তের হুকুম রহিত হয়
নি। আল্লামা আইনী বলেনঃ
ﻭﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺍﻧﻬﺎ ﻣﻨﺴﻮﺧﺔ
ﻓﻴﻤﻦ ﻳﺮﺙ ﺛﺎﺑﺘﺔ ﻓﻴﻤﻦ ﻻﻳﺮﺙ
ﻭﻫﻮ ﻣﺬﻫﺐ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻭﺣﺴﻦ
ﻭﻣﺴﺮﻭﻕ ﻭﻣﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ
ﻭﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﺯﻳﺎﺩ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻛﺜﻴﺮ
ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﻭﺳﻊ ﺑﻦ ﺍﻧﺲ ﻭﻣﻘﺎﺗﻞ
ﺍﺑﻦ ﺣﻴﺎﻥ )ﻋﻤﺪﺓ ﺍﻟﻘﺎﺭﻱ
ﺝ ৬ﺹ৪৭২)
এই আয়াতে উল্লেখিত অসিয়তের হুকুম
অনেকের নিকট ওয়ারিশদের বেলায়
রহিত হলেও যারা ওয়ারিশ নয় তাদের
ক্ষেত্রে রহিত করা হয় নাই।
ইবনে আব্বাস, হাসান, মাসরুক,
আলা ইবনে যিয়াদ জেহাক এবং মুসলিম
ইবনে ইয়াসার এইরূপ মতামত প্রকাশ
করেছেন। আর ইবনে কাসীর উল্লেখ
করেছেন যে, সাইদ ইবনে জুবাইর
রাবী ইবনে আনাস এবং মুকাতিল
ইবনে হাইয়্যানও এই মতামতকেই
সমর্থন করেছেন। এতীমদের লালন
পালনের কোন ব্যবস্থাই
যদি না থাকে তাহলে অপরাগতা এবং
বিশেষ প্রয়োজনে ওলামা মাশায়েখদের
সাথে পরামর্শক্রমে এতীমদের জন্য
অসীয়ত করা বাধ্যতকামূলক
করা যেতে পারে। যদি এরপরও
দাদা অসীয়ত না করে মৃত্যুবরণ
করে তাহলে ইবনে হুমামের মতামত
অনুসারে অসীয়ত পরিমান সম্পদ দাদার
পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে অসহায়
এতীমদেরকে দেয়া যেতে পারে।
জাহেরী মাজহাবের ইমাম ইবনে হাযমের
নিকট যেহেতু অসীয়ত করা ওয়াজিব,
তাই তার মতে অসীয়ত
না করে মৃত্যুবরণ
করলে মৃতব্যক্তি যাকে অসীয়ত
অর্থাৎ প্রতিনিধি করে যায়
অংশীদারদের পরামর্শে যে পরিমান
অংশ অসীয়তের জন্য নির্ধারিত হয় ঐ
পরিমান এতীমদেরকে দেয়া যেতে পারে।
ﻭﻓﺮﺽ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﺴﻠﻢ ﺃﻥ
ﻳﻮﺻﻲ ﻟﻘﺮﺍﺑﺘﻪ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻻ ﻳﺮﺛﻮﻥ،
ﺇﻣﺎ ﻟﺮﻕ، ﻭﺃﻣﺎ ﻟﻜﻔﺮ، ﻭﺃﻣﺎ ﻷﻥ
ﻫﻨﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﻳﺤﺠﺒﻬﻢ، ﻋﻦ
ﺍﻟﻤﻴﺮﺍﺙ ﺃﻭ ﻷﻧﻬﻢ ﻻ ﻳﺮﺛﻮﻥ
ﻓﻴﻮﺻﻲ ﻟﻬﻢ ﺑﻤﺎ ﻃﺎﺑﺖ ﺑﻪ
ﻧﻔﺴﻪ، ﻻ ﺣﺪ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ
ﻳﻔﻌﻞ ﺃﻋﻄﻮﺍ، ﻭﻻ ﺑﺪ ﻣﺎ ﺭﺁﻩ
ﺍﻟﻮﺭﺛﺔ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺻﻲ. ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻥ
ﻭﺍﻟﺪﺍﻩ، ﺃﻭ ﺃﺣﺪﻫﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻔﺮ،
ﺃﻭ ﻣﻤﻠﻮﻛﺎ ﻓﻔﺮﺽ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻳﻀﺎ ﺃﻥ
ﻳﻮﺻﻲ ﻟﻬﻤﺎ، ﺃﻭ ﻷﺣﺪﻫﻤﺎ ﺇﻥ ﻟﻢ
ﻳﻜﻦ ﺍﻵﺧﺮ ﻛﺬﻟﻚ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻞ
ﺃﻋﻄﻲ، ﺃﻭ ﺃﻋﻄﻴﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺎﻝ، ﻭﻻ
ﺑﺪ، )ﺍﻟﻤﺤﻠﻲ ﻻﺑﻦ ﺣﺰﻡ
ﺝ ৯ﺹ৩১৪)
মিরাছ থেকে বঞ্চিত এতীমদের জন্য
অসীয়ত করা প্রত্যেক মুসলমানের
উপর ফরয। বঞ্চিত হওয়ার কারণ
কৃতদাস বা কাফের হোক
কিংবা নিকটতম অংশীদারের
কারণে হোক, মিরাছ দাতার উপর
জরুরী সে মৃত্যুর পূর্বে বঞ্চিতদের
জন্য ইচ্ছামত অসীয়ত করে যাবে।
কিন্তু যদি সে অসীয়ত
না করে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে মৃত্যুর
পর অসীয়ত অথবা অংশীদারদের মনমত
নির্ধারিত পরিমান
বঞ্চিতদেরকে অবশ্যই প্রদান
করতে হবে। যদি মৃত্যুবরণ কারীর
মা এবং পিতা দুজনই অথবা কোন
একজন কাফের হয় অথবা কৃতদাস হয়
তাহলে দুইজনের অথবা এক জনের জন্য
অসীয়ত করা বাধ্যতামূলক হবে। আর
একজন তো মুসলমান হওয়ার
কারণে অংশ পাবেই। কিন্তু যদি তবুও
অসীয়ত না করেই মৃত্যু বরণ
করে তাহলেও দুজন
কে অথবা একজনকে অবশ্যই মালের
অংশ দিতে হবে।
মহিলা এবং পুরুষের অংশ
উত্তারিধকার বন্টনের শরীয়তগত
বিধি-বিধান যেমন নিকটতম
হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঠিক
তেমনিভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলার
তুলনায় পুরুষের দ্বিগুণ অংশ পাওয়ার
বিধানটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এতে কারো মত বিরোধ নাই এবং এই
সিদ্ধান্ত কিয়াসগত নয় বরং পবিত্র
কুরআন দ্বারা অকাট্য ভাবে সাব্যস্ত।
ﻟﻠﺬﻛﺮ ﻣﺜﻞ ﺣﻆ ﺍﻻﻧﺜﻴﻴﻦ “মহিলার
তুলনায় পুরুষের অংশ দ্বীগুণ”।
বর্তমান যুগে নারী পুরুষের সমান
অধিকারের
জোড়ালো দাবী জানানো হচ্ছে। ইসলামের
অনেক হুকুম আহকামের মত দাবীদারগণ
এই বিধানের মধ্যেও সমান অধিকার
লংঘিত হবার আপত্তি করে থাকে। আর
ইসলামের উত্তরাধিকার বন্টন
বিধানকে মারাত্মক জুলুম এবং অবিচার
পূর্ণ বিধান বলে হৈহল্লা করে বেড়ায়
এবং পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন
পরিচালনা করে থাকে।
ইতিপূর্বে একাধিক স্ত্রী বিবাহ-বিধান
আলোচনা প্রসঙ্গে তাদের যুক্তিহীন
অবান্তর দাবী এবং জুলূমের অপবাদের
প্রকৃতি উদঘাটন করা হয়েছে। তাই
অধিক কোন কিছু বলার প্রয়োজনই
নেই। তবে এতটুকু বলে রাখা প্রয়োজন
যে, তাদের সমালোচনার সময়
ইসলামী কানূনের সমস্ত
দিকগুলো তাদের সম্মুখে থাকে না।
অন্যথায় তাদের জানা উচিত যে,
পরিত্যক্ত সহায় সম্পদ
থেকে যে পরিমান অংশই মহিলারা পায়
সেই অংশটুকু হয়ত কোন বিশেষ
অবস্থায় কাজে লাগিয়ে থাকে। নচেৎ
সাধারণত তা পড়েই থাকে আর ব্যাংক
ব্যালেন্স বৃদ্ধির কারণ হয়। এই
প্রেক্ষিতে বলা অনুচিত হবে না যে,
পরিত্যক্ত অর্থ সম্পদের
মধ্যে নারীদের অংশ মূলত:
তাদেরকে সান্ত্বনা প্রদান এবং মনজয়
করার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
এতে সমাজে তাদের সম্মানজনক
অবস্থান সৃষ্টি করাই শরীয়তের মূখ্য
উদ্দেশ্য।
নতুবা যারা শরীয়তের বিধি বিধানের
বিস্তারিত জ্ঞান রাখে তারা জানে যে,
শরীয়তের বিধি-বিধানের
পুরাপুরি অনুসরণ করা হলে অপারগতার
অল্প কিছু
অবস্থা ছাড়া নারীদেরকে কারো এমনকি
স্বয়ং তাদের নিজেদের ভরণ পোষণের
দায়িত্বও শরীয়তগত ভাবে তাদের
উঠাতে হয় না। কেননা বিবাহের
পূর্বে পিতা অথবা ভাইদের উপর আর
বিবাহের পর স্বামীর উপর, স্বামীর
মৃত্যু
হলে অথবা তালাকপ্রাপ্তা হলে পুনরায়
পিতা অথবা অন্যান্য আত্মীয়
স্বজনদের অথবা আপন সন্তানদের
উপর তাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব
ফরজ করা হয়েছে। উপরন্তু বিবাহের
মূহূর্তে মহরের অধিকারী হয়।
কেননা স্বামীর উপর বাধ্যতামূলক
ভাবে মহর আদায় করা ধার্য
করা হয়েছে।
মূর্খতা এবং অদূরদর্শীতার
কারণে যদি স্ত্রী তার মহর স্বেচ্ছায়
আদায় না করে অথবা ক্ষমা করে দেয়
তাহলে বলার কিছু নেই। অন্যথায়
শরীয়তের সিদ্ধান্ত মতে মহর
বাধ্যতামূলক ভাবে ধার্য করা হয়েছে।
যদি স্বামী মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার
পরিত্যক্ত অর্থসম্পদের
মধ্যে বিধবা স্ত্রীর জন্য
উত্তরাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
অপর পক্ষে পুরুষের অবস্থা এই যে,
বালেগ হওয়ার এবং উপার্জনে সক্ষম
হওয়ার সাথে সাথে কেবল নিজের নয়
বরং স্ত্রী, সন্তানাদি এমনকি অনেক
ক্ষেত্রে মাতা-পিতা এবং আত্মীয়দের
প্রয়োজন পূরা করার দায়িত্বও তাদের
উপর আসে। বিবাহের পর স্ত্রীর
সমস্ত খরচ স্বামীকে এককভাবে বহন
করতে হয়। উপরন্তু মহরের এক বিরাট
অংক স্ত্রীকে প্রদান করতে হয়।
এসবদিক বিবেচনা করার পর
স্ত্রীকে যদি চার ভাগের এক ভাগ
প্রদানের কথা বলা হতো, তবুও জুলুম
করা হয়েছে বলে উক্তি করা সমীচীন
হতো না বলেই মনে হয়।


সূত্রঃ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তরদাওয়াতি সংগঠন মজলিসে দাওয়াতুলহক। এর মৌল উদ্দেশ্য মানব জীবনেসকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ওআদর্শের প্রতিফলন ঘটানো।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তিবা-অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলারইবাদত আনুগত্যের দাবি পূরণ করাই হলএকজন মুসলমানের ইহকালীন জীবনেরমূল উদ্দেশ্য।।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :