ইসলাম প্রচারে বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর

কোন মন্তব্য নেই
মাহমুদ আহমদ সুমন
অনেকে মনে করেন, আল্লাহর রাসুলের
‘জিহাদ’ ছিল কাফেরদের জোর
করে ইসলামে নিয়ে আসা এবং ইসলাম
প্রচারের জন্য যুদ্ধ করা। এ
ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পবিত্র
কোরআনে বলা হয়েছে,
‘লা ইকরাহা ফিদ্দীন’-অর্থাৎ
ধর্মে বলপ্রয়োগ নেই। এ আয়াত
দ্বারা প্রচলিত বিভ্রান্তি দূর
করা হয়েছে। পরিষ্কার বলা হয়েছে,
ধর্মে জবরদস্তি নেই, মুসলমান যেন
অমুসলমানদের ওপর ইসলাম গ্রহণ
করার জন্য বল প্রয়োগ না করে।
তা ছাড়া এরূপ বল প্রয়োগ করার
প্রয়োজনীয়তাও নেই। কারণ সত্য ও
মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট।
ইসলাম সূর্যের
মতো সত্যরূপে বিরাজমান। আর
ইসলামের শিক্ষা সব ধর্মের
শিক্ষা থেকে অনেক উন্নততর।
বলপূর্বক মুসলমান
বানানো ইসলামী ‘জিহাদে’র উদ্দেশ্য
কখনোই ছিল না আর সে যুগে বলপূর্বক
কাউকে মুসলমান করাও হয়নি,
এমনকি কোনো যুদ্ধবন্দিকেও না।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হিজরতের
আগে মক্কাবাসী মুসলমানদের
তরবারির ভয় না থাকা সত্ত্বেও
তাদের উন্নত আদর্শের ফলে ইসলাম
গ্রহণ করেছে। সে সময়কার ইতিহাসের
আর একটি বিস্ময়কর দিক হচ্ছে,
যুদ্ধ-বিগ্রহ চলাকালীন যত লোক
ইসলামের তাবলিগ শুনেছে এবং মুসলমান
হয়েছে, তার চেয়ে বহু বহু গুণ
বেশি ইসলাম গ্রহণ করেছে শান্তির
সময়ে। হুদায়বিয়ার সন্ধিকালীন তার
উত্তম দৃষ্টান্ত।
আমরা বলতে পারি,
ধর্মযুদ্ধগুলো ইসলাম প্রসারের
কোনো নিয়ামক নয়। আর ইসলাম
কখনো তরবারির দ্বারা প্রসার লাভ
করেনি। ইসলাম প্রসার লাভ
করেছে তাবলিগ, রাসুলে করিম (সা.)-
এর উত্তম আদর্শ ও ক্ষমার
দৃষ্টান্তের মাধ্যমে। অথচ ইসলামের
ইতিহাসের এই প্রকাশ্য সত্যকে বিকৃত
করে মুসলমান নামধারী তথাকথিত
আলেমরা বলে থাকেন যে ইসলাম অস্ত্র
বা তরবারির জোরে বিস্তার লাভ
করেছে। আসলে তরবারি দিয়ে মানব
হৃদয়ের পাপ-কালিমা সাফ করেছেন রাসুল
করিম (সা.)। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম
তো বিজয় লাভ করেছিল হজরত রাসুল
করিম (সা.)-এর উন্নত শিক্ষা ও
সৌন্দর্যের গুণে এবং তাঁর অতুলনীয়
চারিত্রিক মাধুর্যের বলে।
তরবারি বা অস্ত্রের বলে নয়।
স্মরণ করুন ওহুদের যুদ্ধের কথা,
কুরাইশ সৈন্যদের অস্ত্রাঘাতে হুজুর
(সা.)-এর দুটি দাঁত শহীদ হয়ে যায়।
ইবনে কারিয়ার তরবারির
আঘাতে হুজুরেপাক (সা.)-এর
শিরস্ত্রাণ কেটে যায় ও এর
দুটি কড়া কপালে বসে যায়।
তাতে প্রচুর রক্তপাত হতে থাকে।
পরে হজরত ফাতেমা (রা.) বাবার রক্ত
ধৌত করে চাটাই পুড়িয়ে এর ছাই
দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করেন। এরূপ
অবস্থায়ও মহানবী (সা.) বলেছিলেন,
‘হে আমার প্রভু! আমার
কওমকে ক্ষমা করো, কারণ
তারা অজ্ঞ।’
একটু অনুধাবন করে দেখুন,
কী অতুলনীয় মানবতাবোধ ছিল
ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-
এর হৃদয়ে। তিনি কি আল্লাহর
কাছে তাদের ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য
দোয়া করতে পারতেন না? কিন্তু
তিনি তা করেননি, কারণ ইসলামের
শিক্ষা ধ্বংস নয়, গড়া।
এই ছিল মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ
নবীকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ
মোস্তফা সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদত্ত শিক্ষা।
যার ফলে খলিফা ও সাহাবারা তাঁর (সা.)
শিক্ষাই বাস্তবায়ন করতেন।
হজরত ওমর (রা.)-এর এক অমুসলিম
ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন,
‘হজরত ওমর (রা.) আমাকে বেশ
কয়েকবার মুসলমান হতে বলেন।’ কিন্তু
প্রতিবার অস্বীকার করায়
তিনি বলতেন, ‘ঠিক আছে, তোমার
অস্বীকার করার অধিকার আছে,
কেননা ইসলামে বল প্রয়োগ নেই।’ আর
যখন হজরত ওমর (রা.)-এর মৃত্যুর
সময় নিকটবর্তী হলো,
তিনি আমাকে বলল্লেন,
‘আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম, তোমার
যেখানে খুশি যেতে পার।’_এই
হলো ইসলামের শিক্ষা ও তার
বাস্তবায়ন।
যে ক্ষেত্রে একটি ক্রীতদাসের সঙ্গেও
বল প্রয়োগ হয়নি,
সে ক্ষেত্রে কিভাবে বলা যায়
ইসলামে বল প্রয়োগের শিক্ষা আছে?
ইসলাম ধর্মে বল প্রয়োগের একটিও
উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ইসলাম ধর্ম শুধু তখনই যুদ্ধ করার
অনুমতি দেয়, যখন শত্রুপক্ষ
প্রথমে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করে। যখন
অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায়
অথবা নৈরাজ্য দূরীভূত হয়,
মহানবী (সা.)-এর
শিক্ষা অনুযায়ী তখন আর যুদ্ধ
পরিচালনার কারণ থাকে না।
আমাদের হজরত রাসুলেপাক (সা.)-এর
আদর্শ নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের
অঙ্গীকার করতে হবে, তাহলেই
আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার
দাবি করতে পারব। মহান আল্লাহ
তায়ালা আমাদের সবাইকে শ্রেষ্ঠ নবীর
আদর্শ অনুসরণ করে চলার তৌফিক
দান করুন।
লেখক : কলামিস্ট.
masumon83@yahoo.com

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :