এবার সরকারের পেটুয়া বাহিনীর হাতে প্রাণ হারালেন শিক্ষক আজিজুর রহমান ।

কোন মন্তব্য নেই

জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর থেকে:
‘আমি তারে অসুস্থ শরীর নিয়া ঢাকায়
যাইতে না করি। বলেন, কোন
চিন্তা করবা না। মনও মানে না,
মাস্টারেরাও ছাড়ে না।
চাকরি সরকারিকরণ হইলে সবাই
বেশি টাকা বেতন পাবো।
আমি না পাইলেও অন্য
মাস্টারেরা তো পাবো।’’
স্ত্রী হাজরা খাতুনকে এভাবেই
সান্ত্বনা দিয়ে চাকরি জাতীয়করণের
দাবি আদায়ের জন্য গত সোমবার
সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে ঢাকায়
গিয়েছিলেন জামালপুরের প্রাথমিক
শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা মো. আজিজুর
রহমান (৬০)। শোকার্ত
স্ত্রী হাজরা খাতুন আরও জানান, গত
মঙ্গলবার ঢাকায় পুলিশি হামলার
শিকার হয়ে অসুস্থ ও ভীতসন্ত্রস্ত
অবস্থায় বাড়ি ফেরার
পথে মুঠোফোনে তাকে বলেছিলেন,
‘তুমি ঘুমাইও না।
আমি বাড়িতে আসতাছি।’ কিন্তু
বাড়িতে ফেরার পর ওই রাতেই
তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে ওই
বাড়িতে শোকের ঢল নামে। তাকে এক
নজর দেখতে রাতে আত্মীয়স্বজন
ছাড়াও অনেক মানুষ ভিড় করেন।
হাজরা খাতুন জানান, তার
স্বামী আজিজুর রহমান দীর্ঘদিন
ধরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত
রোগে ভুগছিলেন। অসুস্থ
শরীরে তাকে ঢাকায়
যেতে মানা করেছিলেন। গত মঙ্গলবার
দুপুরে ঢাকায় শিক্ষকদের
মিছিলে পুলিশের
লাঠিপেটা এবং গরমপানি নিক্ষেপের
মধ্যে পড়েছিলেন। ঢাকায়
কি হয়েছে মুঠোফোনে তাকে জানিয়েছিলেন।
পুলিশের মারমুখী অবস্থা দেখে দৌড়
দেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্য
শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি শাহবাগ
এলাকা ত্যাগ করে মহাখালী বাস
টারমিনালে গিয়ে বাসে ওঠে বাড়ি ফেরার
কথা ফোনে জানিয়েছিলেন। রাত নয়টায়
তিনি মাদারগঞ্জ উপজেলার রায়গঞ্জ
বাজারে বাস থেকে নামেন। কিছুক্ষণ
বাজারে ছিলেন। এরপর রাত দশটায়
তিনি বাজারের কাছেই ভাড়া বাসায়
যান। বাসায় গিয়ে তিনি আরও
বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায়
কয়েকজনের কাছে ফোনে ঢাকার খোঁজ
খবর নেন। এরপর
তাকে ঘরে থাকা অষুধ খাওয়ানো হয়।
রাত ১১টার দিকে তিনি স্ট্রোক
করে মারা যান। জানা গেছে, শিক্ষক
আজিজুর রহমানের লাশ গতকাল সকাল
নয়টায় মাদারগঞ্জের শ্যামগঞ্জ
কালিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়
মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথম
জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশ
তার গ্রামের বাড়ি মেলান্দহ উপজেলার
ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ
ঘোষেরপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই গ্রামের দক্ষিণ
ঘোষেরপাড়া ইসলামী দাখিল
মাদরাসা প্রাঙ্গণে মেলান্দহ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
তানভীর আহমেদের
উপস্থিতিতে মেলান্দহ থানা পুলিশ
প্রথমে তাকে রাষ্ট্রীয়
মর্যাদা প্রদর্শন করে।
পরে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক
কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
আজিজুর রহমানের বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক মো. কামাল হোসেন
জানান, চর ভাটিয়ান রেজিস্টার্ড
বেসরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯
সালে। তিনি টানা প্রায় ১৮ বছর
ধরে সেখানে শিক্ষকতা পেশায়
নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাদেশ
বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক
সমিতি মাদারগঞ্জ উপজেলা শাখার
সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। এর
আগে তিনি একই সমিতির দীর্ঘ দিন
সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধেও তার বেশ অবদান ছিল।
ভারত থেকে প্রশিক্ষণ
নিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র
চালনা ও রণকৌশল প্রশিক্ষণ দিতেন।
এলাকায় একজন
মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রাথমিক শিক্ষক
হিসেবে তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে।
তিনি সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের
সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বিগত এরশাদ
সরকারের আমলে তিনি জামালপুর
বিআরডিবির চেয়ারম্যান ছিলেন।
পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান সরকারের
আমলে জামালপুর সদর উপজেলার
মেস্টা ইউনিয়নেরর গগনপুর গ্রামের
গ্রাম সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন
করেন।
শিক্ষকতা এবং বেসরকারি শিক্ষকদের
অধিকার আদায়ের জন্য তিনি সব সময়
কর্মব্যস্ত থাকতেন।

কোন মন্তব্য নেই :