পাওলির ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ জমল না

কোন মন্তব্য নেই

শরীর জ্বালিয়ে ধ্বংসের আগুন জ্বালার যে ইঙ্গিত ছিল ছবির পোস্টারে, সেই উষ্ণতায় ঠান্ডা জল ঢেলে দিল বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবি 'হেট স্টোরি'। এক সাধারণ মেয়ে আর (কাব্য কৃষ্ণা) ক্ষমতাশালী পুরুষের (সিদ্ধার্থ ধনগির) হারজিতের খেলা, সমসাময়িক রাজনীতির অন্ধকার দিক, নাইট ক্লাবের চড়া রং, মাল্টিন্যাশনালিস্টদের ক্ষমতা দ্বন্দ্ব-সমাজের সমস্ত বিদ্বেষ বা হেট্রেড ঘিরেই এই হেট স্টোরি এগিয়েছে। একেবারে চেনা ছক। অবাকই হলাম। কারণ ছবির প্রচারে, পোস্টারে, কিছু অচেনার ইঙ্গিত ছিল। এই ইঙ্গিত বলিউডে প্রথম অভিনয় করতে আসা পাওলির খোলা পিঠের কালো অক্ষরের ট্যাটুর মধ্যে,
ঝাঁ-চকচকে গাড়ির দরজা খোলা বন্দুকধারী পাওলির হাত আর নিরাভরণ পা মোড়া হাই হিলে-এ ধরা ছিল। ছবির পোস্টারের সেই ‘এরোটিক মুড’ পাওলির ডায়েট
শরীরের অভিনয় আর বিবেকের গড়পড়তা নিস্তেজ দৃশ্যে বিলীন হয়েগেল। পাওলির সি থ্রু সিফনের বৃষ্টির জল, স্কিন হাগিং পোশাকে স্তনবৃন্তেরসুড়সুড়িও দর্শকদের অপেক্ষার নিশ্বাসকে গরম করতে পারল না।
এরোটিসিজমকে না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু ছবির কোথাও একটাও থ্রিলিং মুহূর্ত তৈরি হল না| হিডেন ক্যমেরা, মোবাইল রেকর্ডিং-এর ব্যবহার বরং ছবির পরবর্তী দৃশ্যকে আগে থেকেই দর্শকদের সামনে নিয়ে চলে এসেছে। এক্ষেত্রে পাওলির ফার্ম হাউসে হিডেনক্যামেরা বসানোর দৃশ্য না দেখালে কৃষ্ণা আর সিধ-এর লড়াইটা অনেক বেশি থ্রিলিং হত।
অথচ ছবির মধ্যে এমন অনেক মুহূর্ত ছিলযেখানে অভিনেত্রী পাওলি মেলে ধরতে পারতেন তাঁর অভিনয় দক্ষতা আর শরীরী বিচ্ছুরণ। দিল্লি শহরের সবচেয়ে দামি যৌনকর্মী হিসেবে তাঁর শরীর বিলাসে প্রয়োজন ছিল গভীর শরীরী নেশা। এই খামতির দায়ভার বিক্রম ভাটের-ই, যিনি একাধারে ছবির প্রযোজক এবং গল্পকার। তবে মুম্বইয়ে প্রথম অভিযান হিসেবে দেখলে টলিউডের পাওলিরপ্রশংসা প্রাপ্য। একের পর এক যৌনদৃশ্যে তিনি অনায়াস। ছবিতে বাঙালি নায়িকার এই রতিসুখাভিসার চমক লাগায় ক্ষণে ক্ষণে। ছবির ডেয়ারিং ডায়লগ তার কন্ঠে মায়াবী নেশা ছড়িয়েছে। পাওলির দৃপ্ত অভিনয় ছবিটির একমাত্র প্লাস পয়েন্ট। চেনা চিত্রনাট্যে এর চেয়েবেশি আর কী-ই বা তিনি করতে পারতেন? গুলশন দেবাইয়ার সিদ্ধার্থ ধনরাজ প্রশংসার দাবি করে। বিশেষত পাওলির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করার দৃশ্য কখনওই মনে হয়নি তিনি অভিনয় করছেন। পাওলির বন্ধু হিসেবে নিখিল দ্বিবেদীও খারাপ নয়| তবে চিত্রনাট্যের গুণে তার প্রেম, শরীর, মন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।
া। পাওলির অসহায় মু্হূর্তে পাশে দাঁড়ান, তাকে থাকার জায়গা দেওয়া, সিধ-এর কালো টাকার হিসেব বুঝিয়ে দেওয়া ছাড়া কী তার আর কিছুই করার ছিল না?
হারসিত সাক্সেনার সঙ্গীত যথোপযুক্ত।সিনেমাটোগ্রাফার আত্তার সিং সাইনির কাজ নজর কাড়ে। সিনেমার দৃশ্যগুলোর সঙ্গে সুর মিশেছে অনায়াসে।
ছবির শেষটা দেখে কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে। প্রতিশোধের আগুনে পোড়া এক মেয়ে যখন নিজের শরীরকে অস্ত্র করে তখন তাকে আমরা কীভাবে গ্রহণ করি? নিজের ওপর প্রবল অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে হতেই পারে একজন যৌনকর্মী! তাহলে কেন তাকে মরতে হল?
বহু পুরুষের চোখ তার শরীর দেখে ফেলেছে বলে? যেখানে ছবিতেই রাজনীতিবিদ আর যৌনকর্মীর কাজের ধারা এক বলে পরিচালক চমৎকার ভাবে যৌনকর্মীদের নিয়ে সাহসের কথা বললেন, সেখানে সেই তিনিই যে কেন গল্পের শেষে পাওলিকে ফুরিয়ে যেতে দিলেন? এখানেই এ ছবির স্ববিরোধ। এবং এখানেই এ ছবির ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’হতে গিয়েও না হয়ে ওঠা!

কোন মন্তব্য নেই :