এবার পুলিশ পেটালো প্রথম আলোর তিন ফোটো সাংবাদিক কে । ‘সাংবাদিক পেটা, সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না’ পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে প্রথম আলোর তিন ফটো সাংবাদিক গুরুতর আহত বিস্তারিত পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই




খালেদ সরকার, সাজিদ হোসেন ও
জাহিদুল করিম
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের
শেরেবাংলা নগরে পেশাগত দায়িত্ব
পালনের সময় আজ শনিবার সকাল ১১
টার দিকে পুলিশের কিল, ঘুষি ও বেধড়ক
লাঠিপেটায় প্রথম আলোর তিন
ফটোসাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ
ঘটনায় জড়িত থাকার
অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার
সহকারী কমিশনার (এসি) শহিদুল
ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আহত ফটোসাংবাদিকেরা হলেন—খালেদ
সরকার, সাজিদ হোসেন ও জাহিদুল
করিম। তাঁদের পঙ্গু
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে আহত ফটোসাংবাদিক
জাহিদুল করিম বলেন,
‘মহিলা পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রীদের
অবরোধের
ঘটনা শুনে আমি আগারগাঁওয়ের
দিকে যাই। সেখানে আমাদের
সহকর্মী খালেদ সরকার ছিলেন,
তা আগেই জানতাম। কিন্তু যেহেতু
উনি ফিচার ফটোগ্রাফার তাই
আমি যাই।’
জাহিদুল করিম বলেন, পলিটেকনিক
কলেজের সামনে গিয়ে আমি ছবি তুলি।
অবরোধ তুলে নিয়ে কলেজের
ছাত্রীরা যখন মিছিল
নিয়ে ফিরে যাচ্ছিল তখন আরও ভাঙচুর
হয় কিনা সেটা দেখার জন্য আমি পুলিশ
বক্সের সামনে রাখা মোটরসাইকেল
নিয়ে রাস্তার উল্টোপাশে যাই। সেই
সময় খবর পেয়ে একই ঘটনা কভার
করতে যান ফটোসাংবাদিক সাজিদ
হোসেন। এ সময় তেঁজগাও অঞ্চলের
পুলিশের সহকারী কমিশনার শহীদুল
ইসলাম তাদের কাছে রাস্তার
উল্টোপাশে যাওয়ার কারণ জানতে চান।
এ সময় জাহিদুল করিম ও সাজিদ হোসেন
পুলিশকে জানান, তারা সাংবাদিক।
অবরোধের ঘটনার
ছবি তুলতে গিয়েছেন। এর
উত্তরে পুলিশের সহকারী কমিশনার
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিক অনেক
দেখেছি, অনেক সাংবাদিক পেটাইছি।’ এই
বলে শহীদুল ইসলাম
তাঁদেরকে ফটোসাংবাদিক (জাহিদুল
করিম ও সাজিদ হোসেন) মা,
বাবা তুলে গালি দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে সাজিদ হোসেন
গালি না দেওয়ার অনুরোধ
করলে তিনি আরও ক্ষেপে যান।
জাহিদুল করিম আরও বলেন, ‘এ সময়
শহীদুল ইসলাম সঙ্গে থাকা পুলিশ
কনস্টেবলদেরকে মারার নির্দেশ দেন।
পুলিশ কনস্টেবলরা সাজিদ
হোসেনকে কিল, ঘুষি ও
লাঠি দিয়ে মারতে থাকে।
একপর্যায়ে পুলিশ সাজিদ
হোসেনকে মারতে মারতে রাস্তায়
শুইয়ে ফেলে। তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নেয়।
সেটা আমি (জাহিদুল করিম)
ঠেকাতে গেলে আমাকেও মারধর,কিল,
ঘুষি ও লাঠিপেটা করতে থাকে।’
এ সময় সাংবাদিকদের পেটানোর খবর
পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান খালেদ
সরকার। পুলিশ এ সময় তাঁকেও
পেটানো শুরু করে। এসময়
সহকারী কমিশনার শহীদুল ইসলাম
সাংবাদিকদের থানায়
নিয়ে যেতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। পুলিশ
তিন ফটোসাংবাদিককে কিল, ঘুষি ও
লাঠিপেটা করতে করতে থানায়
নিয়ে যায়। এ সময় শহীদুল ইসলাম
বলতে থাকেন, ‘পেটা শালাদের পেটা,
সাংবাদিক পেটা। সাংবাদিক মারলে কিছু
হয় না। ’
আহত সাংবাদিক জাহিদুল করিম আরও
বলেন, থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশ আমাদের
মুঠোফোন কেড়ে নেয়। পরে সেটা বন্ধ
করে দেয়। মামলার প্রস্তুতিও শুরু
করে।
এদিকে খবর পেয়ে প্রথম আলোর
নিজস্ব প্রতিবেদক গোলাম
মর্তুজা শেরেবাংলা নগর থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির
হোসেনকে নিয়ে থানায় গিয়ে তাদের
উদ্ধার করে। পরে গুরুতর আহত তিন
ফটোসাংবাদিককে পঙ্গু
হাসপাতালে নেওয়া হয়।
জাহিদুল করিম আরও বলেন, ‘ মারধরের
একপর্যায়ে পুলিশ আমাদের
ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।
পুলিশকে ক্যামেরা না ভাঙার জন্য
আমরা অনুরোধ করি। কিন্তু পুলিশ
ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে।’
হাসপাতালে আহত ফটোসাংবাদিক খালেদ
সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আজ
সকাল ১০ টায় অফিসের দায়িত্ব পালন
শেষে ক্যামেরা সার্ভিস করার জন্য
তিনি আইডিবি ভবনে যান। সেখান
থেকে বের হওয়ার পরে তিনি দেখেন
শেরেবাংলা নগরে মহিলা পলিটেকনিক
কলেজের ছাত্রীরা সড়ক অবরোধ
করে বিক্ষোভ করছে। খালেদ সরকার
তখন ছবি তোলা শুরু করেন।
পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ
তুলে নেওয়ার সময় তিনি শোনেন পুলিশ
সাংবাদিকদের পেটাচ্ছে।
তিনি দৌড়ে কলেজের সামনে গিয়ে দেখেন
তাঁরই সহকর্মী প্রথম আলোর
ফটোসাংবাদিক জাহিদুল করিম ও সাজিদ
হোসেনকে বেধড়ক পেটাচ্ছে পুলিশ। এই
ঘটনার ছবি তুলতে গেলে পুলিশ তাঁকেও
(খালেদ সরকার) লাঠিপেটা করে ও
ক্যামেরা কেড়ে নেয়।
শেরেবাংলা থানার ওসি জাকির হোসেন
বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত প্রথম
আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নজরুল
ইসলামকে দেখতে তিনি পঙ্গু
হাসপাতালে গিয়েছিলেন। খবর
পেয়ে সেখান থেকে সাংবাদিক গোলাম
মর্তুজাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,
বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের
ধারাবাহিকতায় আজ সকাল
থেকে রাজধানীর
শেরেবাংলা নগরে মহিলা পলিটেকনিক
কলেজের ছাত্রীরা সড়ক অবরোধ
করে বিক্ষোভ করছিলেন। প্রথম
আলোর তিন ফটোসাংবাদিক
সেখানে ছবি তুলতে গেলে পুলিশ তাঁদের
বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের
ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় ও
বেপরোয়া লাঠিপেটা করে। এতে ওই তিন
ফটোসাংবাদিক গুরুতর আহত হন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা এ
ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই :