অযু

কোন মন্তব্য নেই
ইসলামের বিধান অনুসারে, অযু হল
দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার
মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের
একটি পন্থা। মুসলমানেরা নামাজের
পূর্বে অযু করে নেয়। পবিত্র কোরানে
আছে -“নিশ্চয়ই আল্লাহ্
তওবাকারীকে ভালবাসেন
এবং যাহারা পবিত্র থাকে তহাদিগকেও
ভালবাসেন।"[১]
(সূরা বাকারা,আয়াত:২২২)। কোরান
শরীফ পড়তে ও স্পর্শ করতেও অযু
করতে হয়। পবিত্র
কোরানে আছে -“যাহারা পূত-পবিত্র
তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ
করো না।“[১](সূরা ওয়াক্কিয়াহ্,
আয়াত:৭৯)। দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের
পবিত্রতা আর্জনকে বলে তাহারাত্।
অযু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত্
আর্জন করা যায়। হযরত মোহাম্মদ
(সাঃ) বলেন - “পরিষ্কার
পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক।“ (সহীহ
মোসলিম)।
অযুর পানি
পবিত্র পানি দিয়ে অযু করতে হয়।
যেমনঃ-
বৃষ্টির পানি
কূয়ার পানি
ঝর্ণার, সাগর, নদীর পানি
বরফ গলা পানি
বড় পুকুর বা টেঙ্কের পানি
যেই পানি দিয়ে অযু
করা যাবে না তা হলঃ
অপরিচ্ছন্ন বা অপবিত্র পানি
ফল বা গাছ নিসৃতঃ পানি
কোন কিছু মিশানোর
কারণে যে পানির বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ
এবং গারত্ব পরিবর্তিত হয়েছে।
অল্প পরিমাণ পানি:
যাতে অপবিত্র জিনিস
মিশে গেছে (যেমনঃ মূত্র, রক্ত,
মল বা মদ)।
অযু বা গোসলের জন্য ব্যবহৃত
পানি।
অপবিত্র (হারাম) প্রাণী,
যেমনঃ শূকর, কুকুর ও আন্যান্য
হিংস্র প্রানীর পানকৃত পানির
আবশিষ্ট।
অযুর নিয়মকানুন
অযুর চারটি ফরজ কাজ। এর যে কোন
একটি বাদ গেলে অযু হয় না।
সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার সাথে ফরজ
কাজ পুনরায় করে অযু শুদ্ধ
করে নিতে হয়।
সুন্নি মতানুসারে অযুর ফরজ
ফরজগুলো হলঃ
1. মুখমন্ডল ধোয়া।
2. দুই হাত কনূই পর্যন্ত ধোয়া।
3. মাথা এক চতুর্থাংশ মসেহ্
(ভেজা হাত বুলানো) করা ।
4. দুই পায়ের টাকনু পর্যন্ত
ধোয়া। (ক্ষেত্রবিষেসে চামড়ার
মোজার উপর মসেহ্
করা যাবে যাকে খুফস বলা হয়।
কোরআনে বর্নিত আছেঃ
“ হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের
জন্য প্রস্তুত হইবে তখন
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাতের
কনূই পর্যন্ত ধৌত
করিবে এবং তোমাদের মাথায় মসেহ্
করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত
করিবে; যদি তোমরা আপবিত্র থাক,
তবে বিশেষভাবে পবিত্র হইবে।
তোমরা যদি পীড়িত হও
অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ
শৌচস্থান হইতে আগমন করে,
অথবা তোমরা স্ত্রীদের সহিত সংগত
হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র
মাটির দ্বারা তায়াম্মুম
করিবে এবং উহা তোমাদের মুখমন্ডল ও
হাতে মসেহ্ করিবে। আল্লাহ্
তোমাদিগকে কষ্ট দিতে চাহেন না;
বরং তিনি তোমাদিগকে পবিত্র
করিতে চাহেন ও তোমাদের প্রতি তাঁহার
অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিতে চাহেন,
যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
কর।“[১](সূরা মায়িদা, আয়াত:৬)।
শিয়া মতানুসারে অযুর ফরজ
ফরজগুলো হলঃ
1. মুখমন্ডল ধোয়া।
2. দুই হাত কনূই পর্যন্ত ধোয়া।
3. মাথা এক চতুর্থাংশ মসেহ্
করা ।
4. দুই পা িভজা হাত দ্বারা মােসহ
করা।
সুন্নত
অযুর করার সময় কিছু কাজ হযরত
মোহাম্মদ (সাঃ) আভ্যাসবসতঃ করতেন
যা সুন্নি হাদিস মতে, অযুর সুন্নতের
(ঐচ্ছিক কাজ) আন্তরভুর্ক্ত। যেমনঃ
বিসমিল্লাহ্ বলা।
দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
কুলি করা।
পানি দিয়ে নাকের ভিতর পরিষ্কার
করা।
সমস্ত মাথা মসেহ্ এবং কানের
সংলগ্ন স্থান মসেহ্ করা ।
হাত ও পায়ের আংগুলের
মধ্যে ফাকা স্থান হাতের আংগুল
দিয়ে ধোয়া।
দাত পরিষ্কার করা (মেস্ওয়াক
করা উত্তম)
অযুর কাজগুলো তিনবার করে।
মুস্তাহাব
অযুর কিছু মুস্তাহাব কাজ
(করা উত্তম, না করলেও অযু
কার্যকর থাকে) আছে।
অযুর পর কালেমা শাহ্দাত পড়া।
অযুর দুই কাজের
মধ্যে দেরি না করা।
অযুর সময় আহেতক কথা না বলা।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে অযু
করা।
পানির অপচয় না করা।
ডান থেকে বামে ধারাবাহিকতার
রক্ষা করে অযু করা।
অযুর পদ্ধতি
সুন্নি মতানুসারে অযুর পদ্ধতি
শিয়া মতানুসারে অযুর পদ্ধতি
অযু ভঙ্গের কারণসমুহ
কোন ব্যক্তি অযু করার পর কিছু
নিদৃস্ট কাজ না করলে তার অযু
অবিরত বলবৎ থাকে। ঐ
কাজগুলো করার মাধ্যমে অযু
অকার্যকর হয় যা অযু ভেঙ্গে হওয়াও
বলে। যেমনঃ
মল, মূত্র বা বায়ূ ত্যাগ করলে।
বীর্য বের হলে।
ঠেস দিয়ে ঘুমালে।
বমি করলে।
আচেতন হলে।
নামাজে উচ্চস্বরে হাঁসলে।
যৌন সঙ্গম করলে (গোসল ফরজ
হয়)।
অযু বিষয়ক হাদিস
অযুর বিকল্প তায়াম্মুম
তায়াম্মুম অযুর বিকল্প যখন
পানি আদৌ লভ্য নয়। তায়াম্মুমের
নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম
শুরু করতে হয়। তায়াম্মুম করার জন্য
হাতে মাটি লাগিয়ে নিতে হয়। আঙ্গুল
ছড়িয়ে দুই হাত এমনভাবে পাক-পবিত্র
মাটির ওপর থাপড়াতে হয়
যাতে স্বাভাবিকভাবেই হাতের
তালুতে কিছু ধূলা লেগে যায়। অতঃপর
উভয় হাত দিযে সমস্ত মুখমণ্ডল
মাসেহ করতে হয়। এরপর আবার
মাটিতে হাত
থাপড়িয়ে ধূলা লাগিয়ে নিয়ে প্রথমে বাম
তালু দিয়ে ডান হাত কনুই পর্যন্ত
এবং পরে ডান তালু দিয়ে বাম হাত কনুই
পর্যন্ত মাসেহ করতে হয়।
তথ্যসূত্র
1. ↑ ১.০১.১১.২আল-
কুরআনুল করীম. প্রকাশক:
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ. ১৯৯৯.

কোন মন্তব্য নেই :