ইসলামে নারীর মর্যাদা

কোন মন্তব্য নেই

একজন নারী ইসলামী শিক্ষা ও অনুপম আদর্শের ছায়া তলে ও ইসলোমের দিক নির্দেশনার আলোকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় জীবন যাপন করতে পারে।ইসলামী বিধানে একজন নারী,সে যেদিন থেকে দুনিয়াতে আগমন করেছে,সেদিনথেকে ই ইসলামী বিধানে তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার সম্মান ও মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে।তাকে কন্যা হিসেবে,মা হিসেবে,স্ত্রী হিসেবে,বোন হিসেবে,খালা,ফুফ ু ইত্যাদি হিসেব,তার জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনেরসম্মান ও অধিকার আলাদা আলাদা করে দেয়া হয়েছে।একজননারীর জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়।ইসলামে নারীর অবস্থা বেধে একজন নারীকে বিভিন্ন ধরনের সম্মান ও অধিকার দেয়া হয়েছে।নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা তুলে ধরা হল।
১,কন্যা-সন্তান হিসেবে নারীর মর্যাদা:
কন্যা হিসেবে নারীর মর্যদা অধিক। ইসলাম কন্যা সন্তানদের প্রতি দয়া করা,তাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়া,আদর যত্নসহকারে লালন-পালন করা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নেককার নারী হিসেবেগড়েতোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে।পক্ষান্তরে জাহিলিয়্যাতের যুগে যে সব কাফেরমুশরিকরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করত,তাদের বিরুদ্ধেইসলাম কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে।আল্লাহ তা'আলাবলেন,আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়;তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়।আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।তাক ে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে,সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে।অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে,না মাটিতে পূতে ফেলবে?জেনেরেখ,ত ারা যা ফয়সালা করে,তাকতই না মন্দ[সূরা আন-নাহল,আয়াত: ৫৮,৫৯]
বুখারী ও মুসলিমে মুগিরা ইবনে শু'বা (রা.) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্ লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তোমাদের উপর মাতা-পিতার নাফরমানি করাকে হারাম করেছেন,ভিক্ষা করা ও কন্যাসন্তানদের পুতে হত্যা করাকে হারাম করেছেন।
হাফেজ ইবনে হাযার আসকালানী রহ. বলেন,জাহিলি যুগের লোকেরা কন্যাসন্তানদের দুটি পদ্ধতিতে হত্যা করত :
এক.তারা তাদের স্ত্রীদের যখন সন্তান প্রসবের সময় হত,তখনতারা তাদের নির্দেশ দিয়ে বলত, তারা যেন একটি গুহার নিকট চলে যায়। তারপর যখন কোন পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করত, তখন তাকে জীবিত রাখত। আর যখন কোন কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করত, তখন তাকে গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা করে ফেলত।
দুই.
যখন তাদের কন্যা সন্তানদের বয়স ছয় বছর হত, তখন তারা তাদের সন্তানের মাকে বলত, তাকে তুমি সাজিয়ে দাও! আমি তাকে নিয়ে আমার আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাব।
মাতাকেসাজিয়ে দিলে, তার পিতা তাকেনিয়ে গভীর বন- জঙ্গলে চলে যেত এবং কুপের নিকট এসে তাকে বলত, তুমি একটু নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ, সে যখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখত, তখন তাকে পিছন থেকেধাক্কা দিয়ে কুপের মধ্যে ফেলে দিত।তারপর মাটি চাপা দিয়ে অথবা পাথর মেরে হত্যা করে ফেলত। এ ভাবেই তাদের মধ্যে কন্যা সন্তানদের হত্যা করার ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে চলছিল।ইসলামের আগমনের পর ইসলাম নারীদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে বড় একটি নেয়ামত হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কন্যা সন্তানদের হত্যাকরার প্রবণতা বন্ধ করে দেন এবং ঘোষণা দেন যে , কন্যা সন্তান হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। কারণ, কন্যা সন্তান জন্ম কোন মানুষের কর্মের ফলনয়, বরং তাও আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে চান কন্যা সন্তান দেন আবার যাকে চান পুত্র সন্তান দেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন, আসমান সমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ইদান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪৯-৫০]
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তির যদি একজন কন্যা সন্তানথাকে এবং সে তাকে হত্যা করেনি, কোন প্রকার অবহেলা করেনি এবং পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের উপর কোন প্রকার প্রাধান্য দেয়নি। আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [মুসনাদে আহমদ: ২২৩/১]
ইবনে মাজা উকবা ইবনে আমের হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেন,
যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তানথাকবে এবং সে তাদের লালন- পালনে ধৈর্য্য ধারণ করে ও তাদের ভালো কাপড় পরায়, তখন তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধকহবে। [ইবনে মাজা; ৩৬৬৮]
ইমাম মুসলিম তার সহীহতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুই জন কন্যা সন্তান লালন- পালন করে, কিয়ামতের আমি এবং সে দুটি আঙ্গুলের মত এক সাথেমিলেই উপস্থিত হব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দুটি মিলিয়ে দেখান। [সহিহ মুসলিম; ২৬৩১]
ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে জাবের রা. হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে লোকের তিন জন বাচ্চা থাকবে এবং সেতাদের যথাযত বরণ- পোষণ, লালন-পালন ও আদর-যত্ন সহকারে
ঘড়ে তুলবে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করে দেবে। এ কথা শোনে এ লোক দাড়িয়ে বলল, যদি দুইজন কন্যা সন্তান থাকে, তা হলে কি বিধান হে আল্লাহররাসূল? তখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, দুইজন হলেও একই বিধান। (অর্থাৎসেও এ ফজিলতের অধিকারী হবে)[বুখারি আদাবুল মুফরিদ; ১৭৮]
আয়েশা (রা). হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন তোমরা কি তোমাদের বাচ্চাদের চুমু দাও? আমরা আমাদের বাচ্চাদের কখনোই চুমু দেই না। এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সঃ বলেন আল্লাহ পাক যদি তোমার অন্তর থেকে দয়া কে তুলে নিয়ে যানআমি কি সক্ষম হবো তা বাধা দিয়ে ধরে রাখতে?
(বুখারী ও মুসলিম)
post by nazmon nahar.

শেয়ার করে আপনার প্রিয় বন্ধু-বান্ধবীদের পড়ার সুযোগ দিন।
আপনি জেনেছেন....হয়তো সে জানেনা ।আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুক --আমিন ।

কোন মন্তব্য নেই :