স্তন ক্যানসার : চাই সচেতনতা ও নতুন পদক্ষেপ part2

কোন মন্তব্য নেই
যেমন—কোর বায়োপসি হচ্ছে এমন একটি আধুনিক পদ্ধতি, যেখানে একটি সূক্ষ্ম সুচের (নিডল গান)মাধ্যমে চাকা বা পিণ্ড থেকে খানিকটা টিস্যু এনে দেখা হয় তার অস্বাভাবিকতা। সময় লাগে ১৫ মিনিট। এ সময় নির্ভুল জায়গায় পৌঁছাতে আলট্রাসাউন্ডের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। অপরদিকে কোনো চাকা চামড়ার বা স্তনবৃন্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আটকে থাকলে বা চামড়ায় কোনো ক্ষত বা ঘা থাকলে পাঞ্চ বায়োপসি করতে হয়। একজন দক্ষ প্যাথলজিস্ট এই বায়োপসি রিপোর্টটি করার সময় এক থেকে পাঁচ পর্যন্তমাত্রা বা স্কেল ব্যবহার করেন। রেডিওলজিস্টও একই সঙ্গে তাঁর ম্যামোগ্রাফিও আলট্রাসাউন্ডের রিপোর্টের ক্ষেত্রে মাত্রা বা স্কেল ব্যবহার করবেন। আর যে চিকিৎসক রোগীকে দেখেছেন, তাঁর তো নিজস্ব ক্লিনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট আছেই। এই ত্রয়ী বিশেষজ্ঞ অবশেষে সামগ্রিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন রোগটি আসলে কী, তা কোন পর্যায়ে আছে এবং কোন ধরনের চিকিৎসা রোগীর প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতামতে গরমিলথাকলে প্রয়োজনে তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো পরীক্ষার পুনরাবৃত্তিও করতে পারেনবা আরও আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্য নিতে পারেন। বিশ্বে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের এই যুগপৎ প্রচেষ্টার নাম ট্রিপল অ্যাসেসমেন্ট বা ত্রয়ী পর্যবেক্ষণ নীতিমালা।
স্তনের সার্জারি: নতুন দিগন্ত
যদি ক্যানসার ধরা পড়ে, তবে তা স্তনের কতটুকু দখলকরে আছে, অন্য স্তন বা আশেপাশের গ্রন্থিগুলোর অবস্থা কী, কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এবং টিউমারের নিরাপদ সীমানা কতটুকু—এসব জটিল বিষয় বিবেচনায় এনে সার্জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। এত দিন স্তনের সার্জারি বলতে মাসটেকটমি(সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ), র‌্যাডিকাল মাসটেকটমি (স্তনসহ গ্রন্থিগুলোর অপসারণ), ব্রেস্ট কনসার্ভি সার্জারি (স্তনসংরক্ষণ সার্জারি) প্রভৃতিকেই বোঝাত। কিন্তু এখন আধুনিক বিশ্বে চলে এসেছেযার মাধ্যমে অকারণ বিকৃতি না করে, এমনকি তিনথেকে পাঁচ সেন্টিমিটার আকারের টিউমারও নিরাপদে স্তন সংরক্ষণ করেই অপসারণ করা সম্ভব। এ ছাড়াসার্জারি ও রেডিওথেরাপিরপর বিকৃতি রোধ করতে বলিউমরিপ্লেসমেন্ট সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়। তবে আধুনিক অনকোপ্লাস্টিক টেকনিক একই সঙ্গে ক্যানসার অপসারণ ও রিকনস্ট্রাকশন বা বিকৃতিরোধের সুযোগ এনে দিয়েছে।
চাই পদক্ষেপ
সংকোচ ও অবহেলা নারীকে নিজের স্তন বিষয়ে কুণ্ঠিত করে রাখে। নিজের সমস্যাগুলো গোপন করা, প্রকাশ করতে দেরি করা বা প্রকাশ করলেও তা পরিবার ওপারিপার্শ্বিক ব্যবস্থায় আমলে না আসার চক্র নারীকে ঠেলে দেয় নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। যে রোগের চিকিৎসা আশাপ্রদ ও সহজলভ্য, সে রোগটি ভয়ংকর ঘাতকরূপে দেখা দেয়। তাই স্তন ক্যানসার ঠেকানোর প্রথম পদক্ষেপই হলো সচেতনতা। নারীরা নিজের সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন, পরিবারেরনারী সম্পর্কে অন্য সবাই সচেতন হোন, সর্বোপরি দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নারীর সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ে সচেতন হোক—এটাই আমাদের আশা।
জেনে নিন কখন সাবধান হবেন
স্তনে কোনো চাকা বা পিণ্ডদেখা দিলে:
 গোসলের সময় মাসে অন্তত একবার হাত দিয়ে স্তন ও বগল পরীক্ষা করার সময় যদিহাতে কোনো চাকা অনুভব করাযায়, যা আগে কখনো ছিল না।
 এর আগে স্তনে টিউমারের চিকিৎসা হয়েছে—এমন কারও নতুন করে আবার কোথাওচাকা দেখা দিলে।
 চাকাটি খুব দ্রুত বড় হতে থাকলে।
 চাকাটি যদি স্তনের চামড়া বা স্তনবৃন্তের সঙ্গে ঘনভাবে সন্নিবেশিতথাকে।
 দুই স্তনের আকার ও আকৃতিতে অস্বাভাবিক গরমিল দেখা দিলে।
 পর পর দুটি মাসিকের পরওস্তনের চাকা চাকা ভাব অনুভূত হতে থাকলে।
 স্তনের সিস্ট ঘন ঘন দেখা দিলে।
 ফোঁড়া বারবার হতে থাকলে।
স্তনে ব্যথা
 শুধু ব্যথা কোনো দুশ্চিন্তার বিষয় নয়, কিন্তু এর সঙ্গে চাকা, বিকৃতি বা যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
 মেনোপজের পর কোনো নারীরএক পাশে অস্বাভাবিক ও স্থায়ী ব্যথা।
 যে তীব্র ব্যথা সাপোর্টিভ ব্রা বা ব্যথানাশক খেলেও দূর হচ্ছে না।
স্তনবৃন্তের অস্বাভাবিকতা
 স্তনবৃন্ত থেকে রক্তক্ষরণ।
 দীর্ঘস্থায়ী অ্যাকজিমাবা ক্ষত।
 স্তনবৃন্ত ভেতর দিকে ঢুকে যাওয়া, দেবে যাওয়া বা এক পাশে সরে যাওয়া।
 যেকোনো বয়সে বৃন্ত থেকেনিঃসৃত ক্ষরণ সর্বদা কাপড়ে লেগে থাকা।
বগলের অস্বাভাবিকতা
 বগলে কোনো চাকা বা পিণ্ড অনুভূত হওয়া।
তাসমিয়া তাহমীদ
বিভাগীয় প্রধান ও ব্রেস্ট সার্জন, ব্রেস্ট কেয়ার সেন্টার, ডিফাম হাসপাতাল।

শেয়ার করে আপনার প্রিয় বন্ধু-বান্ধবীদের পড়ার সুযোগ দিন।
আপনি জেনেছেন....হয়তো সে জানেনা ।আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুক --আমিন ।

কোন মন্তব্য নেই :