নারী এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা কেন? part 3

কোন মন্তব্য নেই
অন্যদিকে আছেন রক্ষণশীল বুদ্ধিমান নারী, যিনি তার প্রতিপালকের শিক্ষা ও দর্শনসমূহ সংরক্ষণ করেন এবং ঈমান ও তুষ্টতা সহকারে সেই শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি এই দীনকে শক্তভাবে বহন ও আঁকড়ে ধরেছেন এবং বিজাতীয় বিনষ্ট বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর তিনি তার প্রতিপালকের দিকে অন্যদেরকে মাথা উঁচু করে দৃঢ়তার সাথে আহ্বান করেন এবং তার ব্যক্তিত্ব, পর্দা ও পবিত্রতা রক্ষা করে চলেন। তার স্বামীর অধিকার বাস্তবায়নকারিনী হিসেবে এবং তার শিশুসন্তানদেরলালনপালনকারিনী হিসেবে এই জীবনে তিনি তার প্রকৃত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবেপালন করেন।

এই প্রতিটি অবস্থাই আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে অন্ধকার দূর করার জন্য, যা মুসলিম নারীর বিষয়ে এই যুগ বা সময়কে প্রভাবিত করেছে; যাতে করে প্রত্যেক সত্যানুসন্ধানী মুক্তিকামী পুরুষ অথবা নারীর জন্য পথ স্পষ্ট হয় এবং তার মাইলফলকগুলো পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়ে উঠে।

অষ্টমত:
মুসলিম সমাজ তথা মুসলিম জাতিরপরিপূর্ণতার জন্য এমন রক্ষণশীল আদর্শ নারীর প্রয়োজন, যে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জানে এবং তার উপর অর্পিত আমানতকে অনুধাবন করে; যে নিজের পথ দেখতে পায় এবং তার নিজের অধিকার ও অন্যের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।
- আমাদের প্রয়োজন এমন মুসলিম মুমিন নারীর, যার রয়েছে তার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অগাধ বিশ্বাস; সুতরাং তিনি তাঁকে প্রতিপালক, স্রষ্টা ও মাবুদ বা উপাস্য বলে বিশ্বাস করেন; আরও বিশ্বাস করেন তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমষ্টি ও রাসূলগণের প্রতি; আর পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভাল ও মন্দের প্রতি।অতঃপর এই ঈমান অনুযায়ী তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন তার এই জীবনের চিন্তাভাবনাগুলোকে; জগত, জীবন ও মানুষ সম্পর্কে।
- আমাদের প্রয়োজন এমন সচেতন নারীর, যিনি তার প্রতিপালকের শরী‘আত তথা বিধিবিধানকে সংরক্ষণ করেন, অনুধাবন করেন তাঁর আদেশসমূহকে; অতঃপর সে অনুযায়ী কাজ করেন। আর অনুধাবন করেন তাঁর নিষেধসমূহকে, অতঃপর সেগুলো থেকে দূরে থাকেন। তার নিজের অধিকার এবং তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক জানেন, অতঃপর এর মাধ্যমে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।আর আমাদের প্রয়োজন এমন সচেতন নারীর, যিনি তার প্রকৃত দায়িত্বের বিষয়গুলো এবং তার গৃহরাজ্যের বিষয়গুলোসম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন; অতঃপর এই ছোট্ট রাজ্যের অধিকার সংরক্ষণ করেন, যে রাজ্যপুরুষদের প্রস্তুত করে এবং শিশু-কিশোরদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসায় ও তাঁর দীনের সেবায় গঠন করে তোলে।
- আর আমাদের প্রয়োজন এমন নারীর, যার বাহ্যিক দিক তার অভ্যন্তর সম্পর্কে বলে দেয়। কারণ, তিনি প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের দ্বারা প্রভাবিত নন, প্রভাবিত নন কোনো প্রবণতা বা ফ্যাশন দ্বারা; যিনি প্রত্যেক ধ্বনি বা চীৎকারের অনুসরণ করেন না। তিনি তার বাহ্যিক ক্ষেত্রে মডেল বা আদর্শ, যেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ দিকেও আদর্শ। তার শরীর সংরক্ষিত; আর তার হৃদয় ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ এবং তার পবিত্রতা ও সচ্চরিত্রতার দিকটি সুস্পষ্ট; আর তার পোষাক-পরিচ্ছদ ও অন্তরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় অবস্থাই পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র। তিনি ঈমান এনেছেন, শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং আমল করেছেন।
- আর আমাদের প্রয়োজন এমন আদর্শ আল্লাহ্‌র পথে আহ্বানকারী নারীর, যিনি তার কথার পূর্বে কাজের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহ্বান করেন; তিনি মানুষের জন্য ভাল ওকল্যাণকে পছন্দ করেন, যেমনিভাবে তা তিনি নিজের জন্যপছন্দ করেন; তিনি একে উপদেশ দেন, ওকে নির্দেশনা প্রদান করেন আর আরেকজনের অন্যায় কাজের সমালোচনা করেন; তিনি লালন-পালন করেন, গঠন করেন, ভুলত্রুটি সংশোধন করেন, সমস্যা সমাধান করেন, তার সম্পদদ্বারা দান-সাদকা করেন, তার সাধ্যানুসারে কর্মতৎপরতা পরিচালনা করেন, দাওয়াতী কাজ নিয়েই তিনি জীবনযাপন করেন, কিদাঁড়ানো অবস্থায়, কি তার বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায়, কি তার কাজের মধ্যে— এক কথায় যে কোন স্থানে, যে অবস্থায়ই থাকেন।আর আমাদের প্রয়োজন এমন নারীর, যিনি তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সচেতন থাকেন, অতঃপর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের আনুগত হওয়া থেকে,তাদের আহ্বানসমূহে সাড়া দেওয়া থেকে এবং তাদের জীবন-পদ্ধতি অনুসরণ থেকে সতর্ক থাকেন। তিনি সদা-সতর্কতা অবলম্বন করেন এবংঐসব ভ্রান্ত প্রচার-প্রপাগান্ডা থেকে সতর্ক করেন, যেগুলো নারীকে তাদের প্রপাগান্ডার বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছে— যার বিবরণ পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে।
এই প্রয়োজনীয়তাই বিজ্ঞজন ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে তাদের বক্তব্য-বিবৃতি ও লেখনীর মাধ্যমে তাদের চেষ্টা-সাধনা শুরু করতে বাধ্য করে। যাতে তারা মুসলিম নারী ও তার অভিভাবকের দৃষ্টি খুলে দেন ‌এবং স্মরণ করিয়ে দেন তার কাঁধের উপর অর্পিত আমানতের কথা।

নবমত:
পুরুষের উপর প্রভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে নারীর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। তিনি যদি মা হন, তবে তার জন্য নির্দেশ দেয়া ও নিষেধ করার বৈশিষ্ট্যরয়েছে, আর তার (পুরুষের) উপর আবশ্যক হল তার আনুগত্য করা এবং সৎকাজের ব্যাপারে করা তারআদেশসমূহের বাস্তবায়ন করা।
আর সে যদি স্ত্রী হয়, তবে তার অধিকার আছে স্বামীকে আল্লাহ্‌র আনুগত্যের ব্যাপার উৎসাহিত ও প্রলুব্ধ করার এবং অন্যায় ও অবাধ্যতার ব্যাপারেসতর্ক করার। আর স্বামীর ক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকাকে গণ্ডমূর্খ ছাড়া অন্য কেউ অস্বীকার করে না। আর অনুরূপভাবে তার প্রভাব বিদ্যমান যদি সে বোন, কন্যা বানিকটাত্মীয়ও হয়।
আর এই জন্য নারীর উপর আবশ্যক হল, সে এই মহান ভূমিকা অনুধাবনকরবে, যাতে তার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে পারে।

দশমত:
একজন নারী একজন পুরুষের চেয়েনারী, নারীসমাজ ও নারীদের মাঝেপ্রচলিত প্রবণতা সম্পর্কে বেশি ওয়াকিফহাল। তেমনিভাবে সে তাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশি অবগত। সে-ই পুরুষের চেয়ে ক্ষমতাবান এই পথে চলতে।
আরো পড়ুন......নারী এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা কেন?
Part 4

কোন মন্তব্য নেই :