ইসলামে নারীর যৌন অধিকার

কোন মন্তব্য নেই

লিখেছেনঃ সাদাত.......
[লেখাটিতে আমরা যা জানবো-
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী কি পুরুষের উপভোগের যৌন মেশিন?

ইসলামে কি পুরুষকে স্ত্রীর ওপরযথেচ্ছ যৌনাচারের ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে?
স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র – কেন এই আয়াত?
ইসলামে কি নারীদের যৌন চাহিদারকোন স্বীকৃতি নেই?
ইসলামে কি যৌন অধিকার একতরফাভাবে পুরুষকে দেওয়া হয়েছে?]
ভূমিকা
ইসলামের সমালোচকরা অনেকে বুঝাতে চান যে ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন মূল্য নাই, বরংএই ব্যাপারে পুরুষকে একতরফা অধিকার দেওয়া হয়েছে, পুরুষ যখন ইচ্ছা তখন যৌন চাহিদা পূরণ করবে আর স্ত্রী সেই চাহিদা পূরণের জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। এই ধারণার পেছনে কুরআন আয়াত এবং হাদিসের অসম্পূর্ণ পাঠের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বস্তুত কুরআনের কিছু আয়াত বা কিছু হাদিস দেখে কোন বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, বরং তা অনেক ক্ষেত্রেই পাঠককে বিভ্রান্ত করতে পারে। কোন বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে হলে সেই সংক্রান্ত কুরআনের সবগুলো আয়াত এবং সবগুলো হাদিসকে সামনে রাখতে হবে। যা হোক, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য শুধু এতটুকু দেখানো ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন স্বীকৃতি আছে কি-না। আসুন চলে যাই মূল আলোচনায়।
পরিচ্ছেদ ১
কেন এই দাবি?
সূরা বাকারার ২২৩ নম্বর আয়াতেবলা হয়েছে-
أَنَّىشِئْتُمْنِسَآؤُكُمْحَرْثٌلَّكُمْفَأْتُواْحَرْثَكُمْ
Your wives are a tilth for you, so go to your tilth, when or how you will
তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।
হঠাৎ করে এই আয়াতাংশ কারো সামনে পেশ করা হলে মনে হতে পারেযে এখানে পুরুষকে যখন ইচ্ছা তখন তার স্ত্রীর সাথে যৌনাচার অবাধ অনুমতি দেওয়া হচ্ছে- এমনকি স্ত্রীর সুবিধা-অসুবিধার দিকেও তাকানোর কোন প্রয়োজন যেন নেই। যারা এই ধরণের ধারণার প্রচারণা চালান তারা সাধারণত এই আয়াতটি উল্লেখ করার পর তাদের ধারণার সাপোর্টে কিছু হাদিসও পেশ করেন,যেমন-
কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। (মুসলিম, হাদিসের ইংরেজি অনুবাদ-৩৩৬৬)
উপরিউক্ত আয়াতাংশ এবং এই ধরণের কিছু হাদিস পেশ করে অনেকই এটা প্রমাণ করতে চান ইসলাম কেবল পুরুষের যৌন অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নারীকে যৌন মেশিন হিসেবে যখন তখন ব্যবহারের ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে।সোজা কথায় ইসলামে যৌন অধিকার যেন একতরফাভাবে পুরুষের! আসলেই কি তাই?
পরিচ্ছেদ ২
২.১ কুসংস্কারের মূলোচ্ছেদকারি কুরআনের ২:২২৩ আয়াত সংক্রান্ত বিভ্রান্তির নিরসন
মদিনার ইহুদিদের মধ্যে একটা কুসংস্কার এই ছিল যে, কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে পেছন দিক থেকে যোনিপথে সঙ্গম করত তবে বিশ্বাস করা হতো যে এর ফলে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তানের জন্ম হবে। মদিনার আনসাররা ইসলামপূর্ব যুগে ইহুদিদের দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত ছিল। ফলে আনসারগণও এই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন। মক্কাবাসিদের ভেতর এই কুসংস্কার ছিল না। মক্কার মুহাজিররা হিজরত করে মদিনায় আসার পর, জনৈক মুহাজির যখন তার আনসার স্ত্রীর সাথে পেছন দিক থেকে সঙ্গম করতে গেলেন, তখন এক বিপত্তি দেখা দিল। আনসার স্ত্রী এই পদ্ধতিকেভুল মনে করে জানিয়ে দিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুমতি ব্যতিত এই কাজ তিনি কিছুতেই করবেন না। ফলে ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছে গেল। এ প্রসঙ্গেই কুরআনের আয়াত (২:২২৩) নাযিল হয়, যেখানে বুঝানো হচ্ছে- সামনে বা পেছনে যেদিক দিয়েই যোনিপথে গমন করা হোক না কেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। শস্যক্ষেত্রে যেদিক দিয়ে বা যেভাবেই গমন করা হোক না কেন তাতে শস্য উত্পাদনে যেমন কোন সমস্যা হয় না, তেমনি স্বামী তার স্ত্রীর যোনিপথে যেদিক দিয়েই গমন করুক না কেন তাতে সন্তান উত্পাদনে কোন সমস্যা হয় না এবং এর সাথে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তান হবার কোন সম্পর্ক নেই। বিস্তারিত তাফসিরপড়ে দেখতে পারেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে পায়ুপথে গমন (Anal Sex) করা হারাম। বিস্তারিত এই লিংক ক্লিক করুন।
কাজেই এই আয়াতের উদ্দেশ্য ইহুদিদের প্রচারিত একটি কুসংস্কারের মূলোত্পাটন, স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার প্রতিলক্ষ না রেখে যখন তখন অবাধ যৌনাচারের অনুমোদন নয়। যারা মনে করেন কুরআনে ইহুদি খৃষ্টানদের কিতাব থেকে ধার করাহয়েছে বা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদি খৃষ্টানদের থেকে শুনে শুনে কুরআন রচনা করেছেন, এই আয়াত তাদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর বটে! প্রকৃত মুক্তচিন্তার অধিকারীদের বরং এই আয়াতের প্রশংসা করার কথা ছিল, কিন্তু প্রশাংসার যোগ্য আয়াতটিকে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
২.২ ফেরেশতাদের অভিশাপ সংক্রান্ত হাদিসটির বিশ্লেষণ
এবার ফেরেশতাদের অভিশাপ করা সংক্রান্ত ওপরের হাদিসটার কথায় আসি। এই হাদিসটা বুখারিতেও এসেছে আরেকটু পূর্ণরূপে এভাবে:যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে (যেমন- সঙ্গম করার জন্য), আর সে প্রত্যাখান করে ও তাকে রাগান্বিত অবস্থায়ঘুমাতে বাধ্য করে, ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ করতেথাকে। [বুখারি, ইংরেজি অনুবাদ ভলি- ৪/বুক-৫৪/৪৬০]
একটু ভালো করে লক্ষ্য করুন,
স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ায় স্বামী রাগান্বিত হয়ে কী করছে?
স্ত্রীর ওপর জোর-জবরদস্তি করে নিজের যৌন অধিকার আদায় করে নিচ্ছে?
নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে?
এই হাদিসে নারী কর্তৃক স্বামীরডাকে সাড়া না দেওয়ার কারণে স্ত্রীর সমালোচনা করা হলেও পুরুষকে কিন্তু জোর-জবরদস্তি করে নিজ অধিকার আদায়ে উত্সাহিত করা হচ্ছে না। আবার স্ত্রী যদি অসুস্থতা বা অন্য কোন সঙ্গত ওজরের কারণে যৌনাচারহতে বিরত থাকতে চান, তবে তিনি কিছুতেই এই সমালোচনার যোগ্য হবেন না, কেননা ইসলামের একটি সর্বস্বীকৃত নীতি হচ্ছে:
আল্লাহপাক কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না [২:২৮৬]
আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন করি না। [২৩:৬২]
২.৩ ইসলাম কি শুধু নারীকেই সতর্ক করেছে?
এটা ঠিক যে ইসলাম স্ত্রীদেরকে স্বামীর যৌন চাহিদার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে, কিন্তু স্বামীকে নিজ চাহিদা আদায়ের ব্যাপারে উগ্র হবার কোন অনুমতিযেমন দেয়নি তেমনি স্বামীকেও স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি যত্মবান হবার নির্দেশ দিয়েছে।ইসলাম স্ত্রীকে বলেছে যদি রান্নরত অবস্থায়ও স্বামী যৌন প্রয়োজনে ডাকে তবে সে যেন সাড়া দেয়, অন্য দিকে পুরুষকে বলেছে সে যেন তার স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করে, স্ত্রীর কাছে ভালো সাব্যস্ত না হলে সে কিছুতেই পূর্ণ ঈমানদার বা ভালোলোক হতে পারবে না। এই কথা জানারপরও কোন পুরুষ কি স্ত্রীর সুবিধার প্রতি কোনরূপ লক্ষ না রেখেই যখন তখন তাকে যৌন প্রয়োজনে ডাকবে? ইসলাম পুরুষকে এব্যাপারেও সাবধান করেদিয়েছে যে নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে স্ত্রীর যৌন চাহিদার কথাকে সে যেন ভুলে না যায়। অনেকে হয়ত ভাবছেন, কী সবকথা বলছি, কোথায় আছে এসব?
চলুন সামনে এগিয়ে দেখি।
পরিচ্ছেদ ৩
৩.১ ইসলামে স্ত্রীর সাথে সদাচরণের গুরুত্ব
নিচের হাদিসগুলো একটু ভালো করেলক্ষ করুন:
হাদিস-১
আবুহুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার-আচরণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে তারাই উত্তম যারা আচার-আচরণে তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। [তিরমিযি, হাদিস নং১০৭৯]
হাদিস-২
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুমিন মু’মিনা(স্ত্রী)র প্রতি বিদ্বেষ রাখবে না। যদি তার একটি অভ্যাস অপছন্দনীয় হয় তবে আরেকটি অভ্যাস তো পছন্দনীয় হবে। [মুসলিম হাদিস নং- ১৪৬৯, ২৬৭২]
হাদিস-৩
আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি যার আচার-আচরণ উত্তম এবং নিজ পরিবারের জন্য অনুগ্রহশীল। [তিরমিযি, হাদিস নং- ২৫৫৫]
৩.১.১ তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে:
৩.১.১.১ মু’মিন পুরুষ তার মু’মিনাস্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ রাখতে পারবে না।
৩.১.১.২ সদাচারী এবং স্ত্রী-পরিবারের প্রতি কোমল, নম্র, অনুগ্রহশীল হওয়া ঈমানের পূর্ণতার শর্ত।
৩.১.১.৩ কোন পুরুষ যদি উত্তম হতেচায় তাকে অবশ্যই তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে হবে।একজন মুসলিমের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটা হচ্ছে তার ঈমান- যে ঈমানের জন্যসে নিজের প্রাণ বিসর্জন করতেও কুন্ঠিত হয় না- সেই ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য স্ত্রীর সাথেসদাচারী, নমনীয় এবং অনুগ্রহশীল হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কোন মুসলিম উত্তম বলে বিবেচিত হতেই পারবে না যদি না স্ত্রীর সাথে তার আচার-আচরণ উত্তম হয়।
৩.১.২ এখন প্রশ্ন হলো-
৩.১.২.১ যে স্বামী তার স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি কোন লক্ষ্য রাখে না, সে কি তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে?
৩.১.২.২ অথবা যে স্বামী তার স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার প্রতিলক্ষ্য না রেখে যখন তখন তার স্ত্রীর সাথে যৌনকার্যে লিপ্ত হয় সে কি তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে?
৩.১.৩ উত্তর হচ্ছে, পারে না। একজন ভালো মুসলিম যেমন স্ত্রীরজৈবিক চাহিদার প্রতি যত্নবান হবে, তেমনি নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টিও করবে না যা তার স্ত্রীর জন্য কষ্টকর হয়। স্ত্রীর প্রতি অসদাচরণ করে কেউতার স্ত্রীর কাছে ভালো হতে পারে না আর পরিপূর্ণ মু’মিনও হতে পারে না।
৩.২ ইসলামে স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি গুরত্ব
ইসলাম নারীর যৌন অধিকারকে শুধুস্বীকৃতিই দেয় না বরং এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতন নিচের হাদিসটি তার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত:
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন পুরুষ তারস্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন সে যেন পরিপূর্ণভাবে (সহবাস) করে। আর তার যখন চাহিদা পূরণ হয়ে যায় (শুক্রস্খলন হয়) অথচ স্ত্রীর চাহিদা অপূর্ণ থাকে, তখন সে যেন তাড়াহুড়া না করে। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-১০৪৬৮]
কী বলা হচ্ছে এখানে? সহবাসকালেপুরুষ তার নিজের যৌন চাহিদা পুরো হওয়া মাত্রই যেন উঠে না যায়, স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ হওয়া পর্যন্ত যেন বিলম্ব করে।এরকম একটা হাদিস চোখ দিয়ে দেখার পরও কারো জন্য এমন দাবি করা কি ঠিক হবে যে ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন স্বীকৃতি নেই!
এসব তো গেল উপদেশ। কিন্তু বাস্তবে কেউ যদি এসব উপদেশ অনুসরণ না করে তাহলে এই ধরণের পুরুষদের সতর্ক করা তার অভিভাবক এবং বন্ধুদের যেমন দায়িত্ব তেমনিস্ত্রীরাও তাদের স্বামিদের বিরূদ্ধে ইসলামি রাষ্ট্রের কাছে নালিশ করার অধিকার রাখে। এধরণের কিছুঘটনা পরিচ্ছেদ চারে আসছে।
এছাড়া সঙ্গমকালে স্ত্রীকে যৌনভাবে উত্তেজিত না করে সঙ্গমকরাকে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা তাতে স্বামীর চাহিদা পূরণ হলেও স্ত্রীর চাহিদা পূরণ হয় না এবং স্ত্রীর জন্য তা কষ্টকর হয়। পরিচ্ছেদ পাঁচে এই ব্যাপারে আলোকপাত করা হবে।
পরিচ্ছেদ ৪
এই পরিচ্ছেদে আমরা কিছু দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো যেখানে স্ত্রীর যৌন অধিকারের প্রতি অবহেলা করার কারণে স্বামীকে সতর্ক করাহয়েছে, এমনকি স্বামীর বিরূদ্ধে ইসলামি শাসকের কাছে নালিশ পর্যন্ত করা হয়েছে।

পরিচ্ছেদ ৫
ইসলামে শৃঙ্গারের গুরুত্ব
ইসলাম সঙ্গমের পূর্বে স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি বা শৃঙ্গার করার প্রতি যথেষ্ঠ গুরুত্ব আরোপ করে। স্ত্রীর যৌনাঙ্গকে সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত না করেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়াকে- যা স্ত্রীর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর- ইসলামে ‘পশুর ন্যায় সঙ্গম করা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং সঙ্গমেরআগে শৃঙ্গার এবং আবেগপূর্ণ চুম্বন করাকে সুন্নাতে মু্‌ওয়াক্কাদাহ বলা হয়েছে। এই পরিচ্ছদে জনৈক মহিলা প্রশ্নের প্রেক্ষিতে দারুল-ইফতা, Leicester, UK থেকে প্রদানকৃত একটি ফতোয়ার অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করবো যাতে ইসলামেশৃঙ্গারের গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে:
ইমাম দাইলামি(রহ.) আনাস বিন মালিক(রা.) এর বরাতে একটি হাদিসলিপিবদ্ধ করেছেন যে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “কেউ যেনপশুর মতো তার স্ত্রী হতে নিজের যৌন চাহিদাকে পূরণ না করে, বরং তাদের মধ্যে চুম্বন এবং কথাবার্তার দ্বারা শৃঙ্গার হওয়া উচিত।” (দাইলামি’র মুসনাদ আল-ফিরদাউস, ২/৫৫)
ইমাম ইবনুল কাউয়্যিম(রহ.) তাঁরবিখ্যাত ‘তিব্বে নববী’তে উল্লেখকরেছেন যে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৃঙ্গার করার আগে সঙ্গম করতে নিষেধ করেছেন।(দেখুন: ‘তিব্বে নববী’, ১৮৩, জাবির বিন আবদুল্লাহ হতে)
আল্লামা আল-মুনাবি(রহ.) বলেন:
“সঙ্গমের আগে শৃঙ্গার এবং আবেগপূর্ণ চুম্বন করা সুন্নাতেমু্‌ওয়াক্কাদাহ এবং এর অন্যথাকরা মাকরূহ।” (ফাইজ আল-ক্বাদির,৫/১১৫, দ্রষ্টব্য: হাদিস নং ৬৫৩৬) [সূত্র]
শেষের কথা:
শুরুতেই বলেছিলাম, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য শুধু এতটুকু দেখানো ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন স্বীকৃতি আছে কি-না। কাজেই ইচ্ছা করেই কুরআন এবং হাদিসের উল্লেখযোগ্য অনেক কিছুই এখানে যোগ করি নাই। কিন্তু যতটুকু উল্লেখ করেছি তাজানবার পরও ‘ইসলামে নারীদের যৌনচাহিদার কোন মূল্য নেই’, ‘ইসলামেপুরুষকে স্ত্রীর ওপর যথেচ্ছ যৌনাচারের ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে’, ‘ইসলামে যৌন অধিকার একতরফাভাবে পুরুষকে দেওয়া হয়েছে’ এই জাতীয় অভিযোগ সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ আশা করি করবেন না।

♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : ব্লগার_সৈয়দ রুবেল ।
ব্লগার-বাংলাদেশ।
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানতে দিন।

লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।

ভাল থাকুন সব সময় ।

কোন মন্তব্য নেই :