আল্লাহ্ সম্পর্কে part 1

কোন মন্তব্য নেই

মুসলিম স্পেনের বিখ্যাত স্কলার ও তফসীরকার আল কুরতুবী, তাঁর তাফসীরে, যেসব লোক কুরআন পড়তে গিয়ে বলে ‘আমার মনে হয়’, ‘আমার মন বলে’ অথবা ‘আমার মতে’ সে সব লোক সম্পর্কেবলেন যে, তারা আসলে আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কথা বলে এবং এটা একটা অন্যতম বড় অপরাধ। এবং এরা প্রকৃতপক্ষে যিনদিক এবং [তাদের অপরাধের গুরুত্ব বোঝাতে] তিনি বলেন যে, এদের মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা উচিত।
যখন কেউ কুরআনের আয়াত আবৃত্তি করে এবং যথাযথ পদ্ধতিঅনুসরণ না করে এবং যথাযথ জ্ঞান ব্যতীত ঐ আয়াতের ব্যাখ্যা করে, সে হয়তো তার নিজের ‘হাওয়া’র অনুসরণ করে (হঠাৎ একটা কিছু মনে হল, ভাল মন্দ বিচার না করেই সেটার অনুসরণ করা), অথবা নিজের বাসনার বশবর্তী হয়, অথবা সে হয়তো শয়তানের দ্বারা পরিচালিত হয়, নয়তো সে নিজেরঅনুমানের উপর নির্ভর করে; যেটার (অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলা) সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বহুবার উল্লেখ করেছেন, অথবা তার মনে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে ইলহাম হতে পারে, কিন্তু এই শেষোক্ত সম্ভাবনাটি অত্যন্ত ক্ষীণ। কেন?
কেননা এক্ষেত্রে কুরআনের ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ করা হয়নি, এবং যেহেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি তাফসীরের যথার্থ পদ্ধতি অবলম্বন না করেই তাফসীর করেছে, অতএব সে ইতিমধ্যেই একটি অপরাধ করে ফেলেছে। যথার্থ জ্ঞান ব্যতীত কুরআন সম্পর্কে কথা বলে এবং সঠিক জ্ঞান, প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতা ছাড়াই এর ব্যাখ্যা দান করে, সে ইতিমধ্যেই একটি বড় অপরাধ করেছে, তাই এর সম্ভাবনা খুবই কম যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একটা ‘অপরাধের’ মধ্য দিয়ে তাকে অনুগ্রহ করবেন ও কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা তাকে শিক্ষাদানকরবেন। যখন কেউ বলে যে, অমুক আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এটা বোঝাতে চেয়েছেন কিংবা ওটা বলতে চেয়েছেন, তখন সে প্রকৃতপক্ষেআল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পক্ষে কথা বলছে এবং সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাসম্পর্কে বলছে, আর তাই সেটা যদি সে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ব্যতীত করে, তাহলে সে অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ করছে।
ইবনুল কায়্যিম এটাকে প্রকৃতপক্ষে ” সবচেয়ে গুরুতর’ পাপকাজ” বলে অভিহিতকরেছেন, তিনি বলেছেন না জেনেইআল্লাহ সম্পর্কে কোন কথা বলা সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ। এ সম্পর্কে কুরআনের উদ্ধৃতি:
“বল, যেসব বস্তু আমার প্রতিপালক নিষেধ করেছেন তাহলো আল ফাওয়াহিশা (গুরুতর মন্দ কাজ, আইন বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক) প্রকাশ্যে বা গোপনে ঘটিত, অপরাধ ও অত্যাচার, শিরক এবং আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কিছু বলা”। (কুর’আন, ৭: ৩৩)

এ আয়াতের ব্যখ্যায় তিনি বলেছেন যে, দুই ধরনের হারাম কাজ রয়েছে। হারাম লি যাতিহী, হারাম লিগাইরিহী।
প্রথম শ্রেণীর (হারাম লি যাতিহী) কাজগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এদের নিজস্ব অশুভ প্রকৃতির জন্য।
দ্বিতীয় শ্রেণীর (হারাম লিগাইরিহী) কাজগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কেননা সেগুলো অন্য কোন পাপের দিকে মানুষকে নিয়ে যায়।তিনি এই আয়াতে উল্লেখিত চার ধরনের কাজকে প্রথম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই চার ধরনের কাজের মধ্যে আল ফাওয়াহিশা কম গুরুতর হারাম কাজ, এরপর সত্যের অবলেপন যা পূর্বের চেয়ে গুরুতর, অতঃপর আল্লাহ শিরকের কথা বলেছেন এবংসবশেষে বলেছেন আল্লাহ্ সম্পর্কে না জেনে কথা বলাকে । তিনি বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা ছোট থেকে বড় গুনাহের কথা পর্যায়ক্রমে বলেছেন। তিনি বলেন, যখন কেউ আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কথা বলে, যা কিনা কেউ কুরআন সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন না করে ও সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন না করে কুরআনের তাফসীর করতে গিয়ে করে থাকে, তাতে এমন কতগুলি গুনাহ্ অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়, যা কিনা “কেবল শিরক” -এর ক্ষেত্রে হয় না। গুনাহগুলো হলো —

১. কোন আয়াতের অসত্যভাবে উপস্থাপন।
২. আল্লাহ তা’ আলার মনোনীত ধর্মের পরিবর্তন।
৩. এমন কিছু অস্বীকার করা যা আল্লাহ তা’ আলা বর্ণনা করেছেন।
৪. এমন কিছু স্বীকার করা যা আল্লাহ তা’ আলা অস্বীকার করেছেন।
৫. কোন মিথ্যাকে সত্য বলে উপস্থাপন।
৬. কোন সত্যকে মিথ্যা বলে উপস্থাপন।
৭. এমন কিছু সমর্থন করা যা আল্লাহ তা’ আলা অপছন্দ করেন।
৮. এমন কিছু পছন্দ করা যা আল্লাহ অপছন্দ করেন।

অন্য কথায়, যখন ধর্ম সম্পর্কেনা জেনে কেউ কিছু বলে, সে ধর্মকে পরিবর্তন করে। প্রকৃতপে ‘মাদারিজ উস সালিকীন’ বইতে তাঁর (ইবনুল কায়্যিম) লেখা পড়তে থাকলে দেখা যাবে যে, সব ধরনের কুফরী ও শিরকের মূল উৎস হচ্ছে এই অজ্ঞতা।

আরো পড়ুন, আল্লাহ্ সম্পর্কে part 2

কোন মন্তব্য নেই :