রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ
কোন মন্তব্য নেই


বহুল আলোচিত রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেছেন। আজ সোমবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে তলব করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রোববার রাতে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে রেলমন্ত্রী কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এরপর থেকেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগের ‘গুজব’ শোনা যাচ্ছিল।
ঘটনার সূত্রপাত:
৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদরদপ্তর পিলখানার মূল ফটকে ৭০ লাখটাকাসহ রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) এনামুল হক আটক হন।
তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা রেলমন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তাঁদের অপহরণ করার লক্ষ্যে গাড়ির চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবির ফটকের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর বিজিবির সদস্যরা টাকাসহ সবাইকে আটক করেন।
পরদিন সকালে গাড়িচালক আলী আজমকে রেখে পিলখানা থেকে বাকিদের ছেড়ে দেয় বিজিবি। কিন্তু এর পর থেকে আলী আজমের কোনো খোঁজপাওয়া যাচ্ছে না।
এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ওসাধারণ মানুষ রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে আসছে। প্রথম থেকেই মন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
মন্ত্রীর আগের বক্তব্য:
রেলমন্ত্রী ১০ এপ্রিল বলেছিলেন, গাড়িচালক তাঁর এপিএসকে হাইজ্যাক ও ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিল। এর দুই দিন পর বলেন, এটা ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীর কাজ। আরও বলেছিলেন, জিএমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাঁর নেই। প্রথম আলোসহ গণমাধ্যমকর্মীদের রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি রাত ১০টায় ঘুমাই। মধ্যরাতে আমার সঙ্গে সাক্ষাত্ করার কোনো সুযোগ নেই।’
বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘একজন রাজনীতিকের জন্য পদ গ্রহণ বড় কথা নয়। বর্জন করাও সহজ। বিরোধী দলের কথায় আমি পদ পাইনি। তাই বিরোধী দলের কথায় তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না। সিদ্ধান্ত যাঁরা নিতে পারেন, সেখান থেকেই আসবে।’
গতকালের হাজিরা নাটক:
ইউসুফ আলী মৃধা ও ওমর ফারুকের তদন্ত কমিটির কাছে বেলা ১১টায় হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মৃধা খুব সকালে রেলভবনে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেলের মহাপরিচালক(ডিজি) ও তদন্ত কমিটির প্রধান আবু তাহের সাংবাদিকদের জানান, মৃধা লিখিত বক্তব্য তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন।
গতকাল ওমর ফারুকের হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। পরে জানানো হয়, ফারুক নিজে না এসে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ফারুকের তদন্ত শেষ হয়ে গেছে। লিখিত জবানবন্দিতেফারুক সব দায় নিজের ওপর নিয়ে নিয়েছেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা:
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর এপিএস ওমর ফারুককে গত বুধবারই সাময়িক বহিষ্কারকরা হয়েছিল। গতকাল রোববার রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত এবং এপিএস ফারুককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানান, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রেলমন্ত্রী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউসুফ আলী মৃধা ও এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা। নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে জরুরিভাবে তদন্ত কমিটি গঠন। এপিএসের কাছ থেকে পাওয়া সব নথি ও বক্তব্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো ও সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ করা। তদন্তের প্রয়োজনে দুদককে রেলওয়ে থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া।
তবে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে এপিএস ও রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও এর দায় নিয়ে মন্ত্রী পদ ছাড়বেন না বলেজানিয়ে দেন। রেলভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলার সময় মন্ত্রী বিতর্কিত নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করেন।
সুরঞ্জিতকে তলব:
প্রধানমন্ত্রী তলব করায় রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল রোববার রাতে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। রাত সাড়ে আটটার সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গণভবনে পৌঁছান।রাত ১০টায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। প্রায় ২০-২৫ মিনিট সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আর কেউ ছিলেন না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথাও বলেননি।
সূত্র জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত শনিবার তুরস্ক থেকে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন।সূত্র জানায়, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের একটি বড় অংশ সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মত প্রকাশ করেছে। তবে বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক বলেআখ্যায়িত করে সরকারের কেউ কেউ সুরঞ্জিতের পক্ষও নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ নভেম্বর মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। নতুন গঠিত রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, তিনি রেলের ‘কালো বিড়াল’ খুঁঁজে বের করবেন। টাকাসহ তাঁর এপিএসের গাড়ি আটকের পর অনেকেই এখনরেলমন্ত্রীকেই সেই ‘কালো বিড়াল’ বলে মন্তব্য করেছেন

কোন মন্তব্য নেই :