সরকারি নিষ্ক্রিয়তায় বাড়ছে যৌনসন্ত্রাস- দেশব্যাপী অসংখ্য যৌনসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেও কোনোটির বিচার হয়নি। part3

কোন মন্তব্য নেই
যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় আদালত বলেন, শারীরিক ও মানসিক যে কোনো ধরনের নির্যাতন যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। ই-মেইল, মুঠোবার্তা (এসএমএস), পর্নোগ্রাফি, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, যে কোনো ধরনের চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানিরপর্যায়ে পড়ে। শুধু কর্মস্থল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এ ধরনের হয়রানি ঘটে না, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটূক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানোও যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য করা হবে। রায় অনুযায়ী, কোনো নারীকে ভয়ভীতি দেখানো, যে কোনো ধরনের চাপদেওয়া, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক গড়া, দেয়াল লিখন, অশালীন চিত্র ও আপত্তিকর কোনো ধরনের কিছুকরা যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
হাইকোর্টের এই নির্দেশনার পরে যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য একটি খসড়া আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আইন কমিশনের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। রিট পিটিশনের নির্দেশনার আলোকে বিশেষজ্ঞ কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইনের একটি বাংলা খসড়া তৈরি করে আইন কমিশনে হস্তান্তর করে। কিন্তু আইনটি আলোর মুখ দেখেনি।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সালমাআলী বলেন, যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের দায়িত্ব অনেক। হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছে তা যদি সঠিকভাবে মানা হতো তাহলেও যৌন হয়রানি অনেক কমেযেত। এ ছাড়া ডিএমপি অধ্যাদেশেও এ সংক্রান্ত আইন আছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তা মানছে না। তিনি আরো বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি খসড়া আইন কমিশনে জমা দেওয়া আছে। সরকারের উচিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এই আইনটি পাস করা। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে।
অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, সামাজিকভাবে ব্যাপকসচেতনতা সৃষ্টি ও ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে যৌন হয়রানি রোধে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া যৌন নির্যাতন রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও বিদ্যমানের আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া দরকার।আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বিচার না হওয়ার কারণে একের পর এক যৌনসন্ত্রাসেরঘটনা বেড়ে চলেছে। উৎপীড়নের শিকার নারীদের পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বরাবরই বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা দেওয়া এবং যৌন উৎপীড়কদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হচ্ছে না। সরকারের সব উদ্যোগ আটকে আছে মৌখিক আশ্বাস এবং হম্বি-তম্বির মধ্যে। দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বখাটেদের শাস্তির নামে কিছু যুবকের দিন কতকের জেল বা জরিমানা এখন অনেকটা রসিকতায় পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কঠোর আইন, আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ এবং দ্রুত বিচারের মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে না পারলে যৌনসন্ত্রাসের মতো ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। এ দায় সরকারকে নিতে হবে। [সাপ্তাহিক বুধবার থেকে]

কোন মন্তব্য নেই :