সরকারি নিষ্ক্রিয়তায় বাড়ছে যৌনসন্ত্রাস- দেশব্যাপী অসংখ্য যৌনসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেও কোনোটির বিচার হয়নি। part2

কোন মন্তব্য নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার বেগুনবাড়ি গ্রামের দিনমজুর বাইরুল ইসলামের মেয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী নুরেশা খাতুন লিমা গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর একদল সন্ত্রাসীর পাশবিক নির্যাতনে মারা যায়। ঘটনার পর স্থানীয়রা দুই নির্যাতককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও অন্য আসামিরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। নুরেশার পরিবারের অভিযোগ,ক্ষমতাসীনদের একটি অংশ আসামিদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গোমস্তাপুর থানার ওসি জানান, যে তিন আসামি বাইরে রয়েছে তাদের একজন হাইকোর্ট থেকে জামিননিয়ে আছে। অন্য আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১০ সালের ৫ জুলাই টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার কাহারতা গ্রামের নবম শ্রেণীর এক কিশোরীকে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুল্লা ইতিহাস ওরফে হাবিব, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আরিফ আহমেদ এবং সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত শিকদারের ভাগ্নে বাবুল আজাদ ও তার নাতি আরিফুল ইসলাম আকাশ অপহরণ করে একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে হাবিবুল্লা ইতিহাস ওরফে হাবিব তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। সখীপুর থানা পুলিশ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ আদালতে হাবিবকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে। পরে হাবিব হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে।
যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় গত বছরের ২০ অক্টোবরবখাটেদের হাতে মাগুরার শরিফুজ্জামান নামে এক শিক্ষক আহত হন। এ ঘটনায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ডিয়ারসহ পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলাদায়ের করা হয়। এই মামলাটিএখন কোনো অবস্থায় আছে তা পুলিশও জানে না। মাগুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, এমন কোনো মামলার কথা মনে করতে পারছি না। এই মামলার কোনোআসামি আটক হয়নি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে ২৫ জুন ভোলায় প্রভাবশালী একটি পরিবারের ছেলে মমিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা দরিদ্র কৃষক পরিবারের এক কিশোরীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙেদেয় এবং পাশবিক নির্যাতন চালায়। ভোলা থানার ওসি মোবাশ্বের আলী জানান, পত্রপত্রিকায় এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর তারা ওই মেয়েটিকে বাড়ি থেকে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং একটি মামলা গ্রহণ করেন। মামলায় তিন জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা অব্যাহত হুমকির মুখে রয়েছে। মামলারও কোনো অগ্রগতি নেই।
২৮ জুন বখাটে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে মামলা করায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাতক্ষীরার একটি পরিবার। পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকাও রহস্যজনক। ওসির নির্দেশে ৩ বার এজাহার সংশোধন করে মামলা রেকর্ড হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যৌন নির্যাতনের ধারায় মামলাটি নেওয়া হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ। দুর্বল ধারায় মামলা রেকর্ড হওয়ায় আসামিরা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অভাবে যৌন হয়রানির শিকার মেয়ের পিতা থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি নেয়নি। সাতক্ষীরা থানার ওসির কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসামিরা আদালতথেকে জামিন নিয়েছে এ কারণে ধরা যাচ্ছে না। আর বিষয়টি যৌন নির্যাতন নয়। এটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব।’হাইকোর্টের নির্দেশনা : ২০০৯ সালের ১৪ মে যৌননিপীড়নের সংজ্ঞা দিয়ে যৌন হয়রানি রোধে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে এ রিট দায়ের করা হয়েছিল।
রায়ে বলা হয়, সংসদে যৌন হয়রানি রোধে কোনো আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ নীতিমালা বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকরহবে। রায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিষয়ে অভিযোগকেন্দ্র গঠন এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্তনির্যাতিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ নাকরার কথাও বলা হয়।
যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় আদালত বলেন, শারীরিক ও মানসিক যে কোনো ধরনের নির্যাতন যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। ই-মেইল, মুঠোবার্তা (এসএমএস), পর্নোগ্রাফি, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, যে কোনো ধরনের চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানিরপর্যায়ে পড়ে। শুধু কর্মস্থল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এ ধরনের হয়রানি ঘটে না, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটূক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানোও যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য করা হবে। রায় অনুযায়ী, কোনো নারীকে ভয়ভীতি দেখানো, যে কোনো ধরনের চাপদেওয়া, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক গড়া, দেয়াল লিখন, অশালীন চিত্র ও আপত্তিকর কোনো ধরনের কিছুকরা যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
আরো দেখুন part 3

কোন মন্তব্য নেই :