লাম্পট্যতা রোধে জেল-জরিমানা! কতটা ফলপ্রসু? ‘ইভ টিজার’ বলে বখাটেদের সম্মান না দিয়ে যথার্থ বাংলা শব্দের প্রয়োগ করতে হবে। part 1

কোন মন্তব্য নেই
সুন্দরী চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে? রাগ করোনা সুন্দরী গো, রাগলে তোমায় লাগে আরো ভাল….। এটি ৩০ বছর আগের বাংলা ছবির একটি হিট গান, গানের সূর সুন্দর হলেও ছবিতে দেখা যায়, একজন নারীএকাকী রাস্তায় চলে যাচ্ছে, আরেকজন পুরুষ গাড়ীতে বসে নারীকে উত্যক্ত করে গানটি গাইছে।এখনও কদাচিৎ টিভিতে ছবিগুলো প্রদর্শিত হয়। তখনকার দিনে সমাজ জীবনে এগুলোর কোন প্রভাব ছিলনা, মানুষ ভাবত নিতান্ত আনন্দবিনোদনের জন্য ছবি দেখা, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই। বর্তমান কালের ছবিতে যে গানগুলো নাচিয়ে দেখানো হয়, সেগুলো না গাওয়া যায়, না দেখা যায়, না শোনা যায়, না লিখা যায়! টিভি খবরের মাঝখানে যদি ফ্লিমের এ্যাড আসে হয় টিভি বন্ধ করতে হয়; নতুবা যে যার মত সে স্থান থেকে ত্যাগ করতে হয়। বর্তমানেরপ্রচলিত গানের কলি না লিখে ৩০ বছর আগের একটি গানের কলি এখানে তুলে আনলাম; কেননা আমিও ৩০ বছর আগের ইজা টানব। ছবিতেই নারীকে উত্যক্ত করে গানটিগাওয়া হয়েছিল; তখনকার দিনে বাস্তবে কেউ প্রকাশ্যে এটা করলে তাকে লম্পট, লুইচ্ছা, বদমাইশ, বেয়াদব বলার সাথে সাথে, মার-গুথোর পর জুতা কামড়িয়ে মাটি থেকে তুলতে হত। বর্তমান ডিজিটাল যুগেআধুনিক সমাজের কাছে এই ব্যক্তিদের নাম হল ‘ইভ টিজার’! কিছুটা সম্মানজনকশব্দ বটে!
বাংলাদেশে নারী-পুরুষের যৌনতার চাদরে আবৃত প্রেম ব্যতীত সিনেমা নাই। কেউ বানাতে পারেনা, তাদের দাবী বানালে নাকি বাজারে চলবেনা! বাংলা সিনেমায় দেখুন, আঁট-শাট পোষাক পরিহীতা কিছুটা দেমাগী, সুন্দরী মেয়েটি কাউকে পাত্তা না দিয়ে ক্যাম্পাসপ্রদক্ষিন করে চলল। ক্লাসে কিংবা কেন্টিনে মেয়েটির দেমাগী ভাব ক্লাসের স্যারদের সামনে নিলর্জ্জ যথারীতি চলে। ক্লাসের আরেক ছাত্র হতে পারে ধনী কিংবা মেধাবী মেয়েটিকে উত্যক্ত করল দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। ছেলেটি ব্যর্থ হয়ে মেয়েটির কামিজে টান মারে, অমনি মেয়েটি বাম হাতের পাঁচ সিকার একখানি থাপ্পড়ছেলের গালে বসিয়ে দেয়! ব্যস, শুরু হল আসল খেলা, টানটান উত্তেজনা, রক্ত টগবগ করা কাহিনী জমে উঠে।হঠাৎ ছন্দপতন, সে কাহিনী মোড় নেয় প্রেমে, অমর প্রেম। উভয় পক্ষের বাবা-মা মানতে নারাজ, শেষ পর্যন্ত বাবা-মা বুঝতে পারে, তারাই আসলে ভূল করেছিল।ছেলেমেয়েরা কোন ভূল করেনি, তারা ঠিক পথেই চলছিল। পিতা-মাতার কম আকলের কারনে তা বুঝে উঠতেপারেনি, ফলে সানাই বাজল বিয়ে হল। এভাবেই প্রতিটি বাংলা সিনেমার ছবি তৈরী হয়, বুঝানো হয়, মেয়েদের উত্যক্ত করেই প্রেম করতে হয়, মন পেতে হয়। সঙ্গত কারনে দর্শকদের মাঝে উঠতিবয়সের কিছু ছেলেদের উপর এর খারাপ প্রভাব পড়ে। কেউপ্রশ্ন করেনি, মামলা করেনি, আসলেই কি কলেজের অভ্যন্তর ভাগের হালছাল এতবিশ্রি! উত্যক্ত করলে মেয়েরা থাপ্পড় মারেনা, বাস্তবতা হল মেয়েরা পারলেজুতো পিটুনি দেয়। কখনও সিনেমাতে দেখেছেন? উত্যক্তকারী নায়ককে জুতো পিটুনি দিতে? অথছ সেটাই ছিল তার কর্মের প্রাপ্য।
বিগত ১০ বছর আগেও সমালোচনা হত টিভি বিজ্ঞাপনে অযথা মেয়েদের দেখানো হয়, অপ্রয়োজনে তাদের দিয়ে নানা অঙ্গ-ভঙ্গি করিয়ে নেয়া হয়। ভদ্র অভিরুচি সম্পন্নশিক্ষিত সমাজ থেকে বলা হতগাড়ীর টায়ারের বিজ্ঞাপনে,ব্লেডের বিজ্ঞাপনে, সিমেন্ট, লোহা কিংবা জমির সারের বিজ্ঞাপনের সাথে নারীদের কি সম্পর্ক? কেন তাদের এভাবে উপস্থাপন করাহচ্ছে? রাষ্ট্রিয়ভাবে এগুলো নিয়ে কোন সরকারই ভাবেনি, ভাবার গরজও মনে করেনি। সেটার উত্তরণতো হয়নি বরং এখন সেটা মহামারী আকারে, মিডিয়া জগতে প্রবেশ করেছে। আগে ছিল অপ্রয়োজনে নারীদের উপস্থিতি নিয়ে যত কথা, এখনযোগ হয়েছে নাচ-গান সহ বিভিন্ন উদ্ভট অঙ্গ-ভঙ্গি। এখন সাবানের বিজ্ঞাপনে নারীদের নাচ আছে, বিস্কুটের বিজ্ঞাপনেনারী-পুরুষের লাফালাফি আছে। সিমেন্ট, ময়দা, লাচ্ছা সেমাই, ইট, টিভি, ফ্রিজ, নুডুলস্, বিস্কুট, চুইংগাম, ন্যাপকিন, পাওয়ার টিলার, জৈব সার থেকে শুরু করে কোন বিজ্ঞাপনে ছেলে-মেয়েদের দৃষ্টি কটু লাফালাফি নাই?পানির পিভিসি পাইপের বিজ্ঞাপনে নারী চরিত্র ঢুকাতে হবে, কিছুতেই মাথায় আসছেনা কিভাবে সম্ভব করা যায়। আমার এক মিডিয়া শুভাকাঙ্খির কাছে সাহায্য চাইল এ্যাড ফার্মের বন্ধু, একটু বুদ্ধি পরামর্শ দিতে! খাদ্য পণ্যের বিজ্ঞাপনের একটি সংলাপ এমন, বান্ধবীকে বলা হল, মুখে থাকবে গান, হাতে থাকবে বিস্কুট। ১৫ সেকেন্টের এইবিজ্ঞাপনের ১১ সেকেন্ট চলল বক্ষ প্রদর্শনী নৃত্য, ৪ সেকেন্ট পণ্যের নাম। ক্রিমের ১৫ সেকেন্টের বিজ্ঞাপনে ১৩ সেকেন্ট ধরে মেয়েটি ছেলেদের উত্যক্ত করার দৃশ্য, মাত্র২ সেকেন্টে নিল পণ্যের নাম বলতে! পণ্য সামগ্রীর গুনগত মান, সূলভ, সহজলভ্যতা, উপকারী, দরকারী কিনা কোন কথা বার্তা নাই।। প্রায় প্রতিটি বিজ্ঞাপনের আজ এইদশা।
ইদানীং মোবাইল কোম্পানীগুলো যথেষ্ট বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। মোবাইল ডিজিটাল যুগের অমরকীর্তি, চরম বিষ্ময়, যথেষ্ট প্রয়োজন ও উপকারী।এমন একটি প্রয়োজনীয় সৃষ্টির সাথে পরিচয় করিয়েদিতেও কি, একই উচ্চতার, একই গড়নের, একই আকৃতির একদল তরুনীর মাঝখানে একজনপুরুষকে নাচাতে হবে? বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর সৃষ্টি, অতীব প্রয়োজনীয় একটি বস্তুকে পরিচিত করাতে, নারী-পুরুষের বেলাল্লাপনার আয়োজন কি অতি জরুরী? পৃথিবীতে মোবাইল কোম্পানী কি শুধুমাত্র বাংলাদেশের মাটি ফেঁড়ে উদ্ভিদের মত গজিয়েছে? পৃথিবীতে মোবাইলের এ্যাড কি আর কেউদেয়না? নাকি মোবাইলের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে কোম্পানীদের গলদঘর্ম হয়? মোবাইলের ব্যবহার আর যাই হোক, এসব দেখে উঠতি বয়সী বাচ্চাদের যে নৈতিক স্খলনঘটবে, তা কোন বাবা-মা অস্বীকার করতে পারবে না।
আব্বাস উদ্দীন, বশির আহমেদ, আবদুল আলীম, সাবিনাইয়াসমীন, রুনা লায়লা, নীনাহামিদ সহ প্রচুর বিখ্যাত গায়ক গায়িকা বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের কত জনকে তদানীন্তন বাংলাদেশের মানুষ চোখে দেখেছে? ভাটি অঞ্চলের প্রান্তে কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামের নিভৃত পল্লীতে তাদের গান গুলো, পথ চলা পথিকের কন্ঠে টান পড়ত। মানুষ জানত এটা আব্বাস উদ্দীনের ভাটিয়ালী কিংবা আবদুল আলীমের পল্লীগীতি।
আরো দেখুন
part 2

কোন মন্তব্য নেই :