সরকারি নিষ্ক্রিয়তায় বাড়ছে যৌনসন্ত্রাস- দেশব্যাপী অসংখ্য যৌনসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলেও কোনোটির বিচার হয়নি। part 1

কোন মন্তব্য নেই
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীর ওপর যৌনসন্ত্রাসের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আবারো সারাদেশে বিষয়টি নিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। যৌন উৎপীড়ক সন্ত্রাসীদের রুখতে আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি উঠেছে। নারীর সামাজিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত আইন প্রণয়নের দাবিও সামনে আসছে। একটি অপরাধের বিচারনা হওয়ায় আরেকটি অপরাধ উৎসাহিত হচ্ছে বলে আইনজ্ঞরা মনে করছেন। ভিকারুননিসার ঘটনার পর বিষয়গুলো নতুন করে সামনে এলেও দাবি নতুন নয়। আড়াই বছর ধরে দেশে অব্যাহত যৌনসন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে ধারাবাহিকভাবে এ দাবি করেআসছেন নারী অধিকার আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা। বিপরীতে নারী উৎপীড়করা একের পর এক রোমহর্ষক যৌনসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। যখন একটির পর একটি ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করছে তখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলরাওকয়েকদিনের জন্য নড়ে বসছেন। আশ্বাস দিচ্ছেন কঠোর আইন প্রণয়নের। কিন্তু এরপর আবার যা তাই।আবার তারা হয়ে পড়ছেন নিষ্ক্রিয়। কার্যকর হচ্ছে না কোনো প্রতিশ্রুতি। বিচার হচ্ছে না একটি ঘটনারও। আরো বেপরোয়া হচ্ছে যৌনসন্ত্রাসীরা। জুলাইয়ের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পনের দিনেই পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, দেশে যৌননিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ১৮টি। শিক্ষক থেকে পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার কারণে অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট নারীআইনজ্ঞরা। এছাড়াও নারী অধিকার কর্মীদের মতে, রাষ্ট্রের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতানারীর ওপর যৌননিপীড়নের অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী,আড়াই বছরে যৌন উৎপীড়ক সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন কমপক্ষে ৬৫ জন নারী। সন্ত্রাসীরা ধর্ষণের পর হত্যা করেছে ২২০ জনের বেশি নারী ও শিশুকে। ২০০৯ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৩০৭টি। এছাড়াও যৌন উৎপীড়কদের বিরোধিতা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। যার মধ্যে৭ জনই নিহত হয়েছেন এ বছরের প্রথম ৬ মাসে।। মানবাধিকার সংস্থা ও পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গেছে, যৌনসন্ত্রাস ক্রমেই বাড়ছে। নির্যাতনে হত্যা ওআত্মহননের পরিসংখ্যান দীর্ঘ হলেও বিচার হচ্ছে না কোনো ঘটনার। যেসব ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছেসে ক্ষেত্রে প্রশাসন কিছুপদক্ষেপ নিলেও পরবর্তীতে তা চাপা পড়ে যাচ্ছে নতুন ঘটনার নিচে। অনেক ঘটনায় ক্ষমতাসীনরা যৌনসন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দেশে আলোড়নসৃষ্টিকারী কয়েকটি যৌনসন্ত্রাসের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের কাছে সরকারের মন্ত্রীরা যেতে বাধ্য হয়েছেন। সে সময় অনেক আশ্বাস দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন আজও হয়নি। এমন হারিয়ে যাওয়া আশ্বাসের মধ্যে রয়েছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী হাসনা রহমান সিনথিয়ার আত্মহনন, ফরিদপুরের চাঁপা রানী ও নাটোরের শিক্ষক মিজানুর রহমান হত্যাকান্ড। এই তিনটি ঘটনায় সরকারের একাধিক মন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি ও যৌনসন্ত্রাস বিরোধী আইন প্রণয়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ঘটনার বিচার হয়নি আজও, আইনও পাস হয়নি।
ভিকারুননিসায় শিক্ষকের যৌনউৎপীড়নের বিষয়টি প্রকাশ পাবার পর থেকে আবার নতুন করে দেশব্যাপী যৌননির্যাতনের বিষয়টি সামনে এসেছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অপরাধীর বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠলেও ক্ষমতাসীন সরকার তখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে নীরবতা পালন করে। আইন-শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে সর্বদা সজাগ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মুখরা মন্ত্রীরা এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরপক্ষে একটি কথাও বললেন না। প্রথম দিকে অপরাধী শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা চলেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানসহ একাংশের উদ্যোগে। শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ওই শিক্ষক গ্রেফতার হলেও তারসহযোগীদের ধরা হয়নি। যৌনউৎপীড়ক শিক্ষককে রক্ষার অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবি তীব্র হয়। স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দ্রুত সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার। প্রথম মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী।
আরো দেখুন part 2

কোন মন্তব্য নেই :