মনের জানালা page 1
কোন মন্তব্য নেই
আমার অসহায় মা
পৃথিবীতে যতগুলো শব্দ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মধুর শব্দ ‘মা’। মা কথাটি ছোট অতি কিন্তু যেন ভাই ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই। হ্যাঁ আমি আমারমমতাময়ী অসহায় মায়ের কথা বলছি।আমার মায়ের মুখের দিকে তাকালে আমার দুঃখে বুক ফেটে যায়। আমার মা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী কিন্তু ছোটবেলা থেকেই অসুস্থতার জন্য পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। তারপর মাত্র ১৫ বছর বয়সে আমার মায়ের বিয়ে হয়ে যায়। আমার দাদার পরিবার ছিল আমার নানার পরিবারের চেয়ে সচ্ছল। তাই অবহেলা, অপমান, লাঞ্ছনা জুটেছে বিয়ের পর থেকেই। আমার বাবা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। মাত্র১০ বছর বয়সে মাকে হারান আমার বাবা। তাই অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেন। আমার বাবা মানুষহিসেবে অত্যন্ত সৎ এবং ভালো মনের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু আমার বাবা অত্যন্ত রাগীও ছিলেন। গ্রামের সবার বিপদে বিনা স্বার্থে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কিন্তু তার সকল রাগ যেন এসে পড়তআমার দুঃখী মায়ের ওপর। হঠাৎ করে অনেক রেগে যেতেন কারণে-অকারণে। এমনকি মাঝে মাঝে মারধরও করতেন আমার মাকে। আমরা সবাই বাবাকে খুব ভয়ও করতাম। আর সে কারণে আমরা বাবার থেকে মাকেই পছন্দ করতাম। আবার বাবা ছিলেন অলস প্রকৃতির। সংসারে যাবতীয় কাজ আমার মা একাই সামলাতেন। আমার মাকে বাবা অনেকভালোবাসেন, শুধু রেগে গেলে খারাপ ব্যবহারও করেন। আমার বাবাও অবশ্য অনেক দুঃখী, ইচ্ছা করে বাবার জন্য কিছু করতে কিন্তু সে যোগ্যতা এখনো হয়নি। আমার মা সব সময় কোনো না কোনো অসুখে ভুগতেন। স্থানীয় ডাক্তারদেখাতেন কিন্তু টাকা-পয়সার অভাবে ভালো ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু এক সময় হঠাৎ অসুখ হওয়ার পর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ডাক্তার বলছে আমার মায়ের স্তন ক্যান্সার আর বেশিদিন বাঁচবে না। আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু আমরা কেউ মানতে রাজি নই। যত দিন বেঁচে থাকে তার চিকিৎসা আমরা করাব। তারপর মায়ের ক্যান্সারেরচিকিৎসা চলছে আজ দুই বছর ধরে। প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে এখন আমার মা পিজি হাসপাতালে রয়েছে। মায়ের আরও একটি অপারেশন লাগবে। তার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক ও ওষুধপত্র কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার সময় আমার বাবা অ্যাক্সিডেন্ট করেন। আমার বাবার চোখে ছানি পড়েছে, ভালো করে দেখতেও পারে না। আমার ছোটবোন ক্লাস সিক্সে পড়ে এবং আমার ছোট ভাই মাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছে। আর আমার পড়াশোনাওশেষ হয়নি। বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারছি না এ দুঃসময়ে। আমার ভাইয়ের মাথায়ও একটি টিউমার, জানি না চিকিৎসা করাতে পারব কি না। আপনারা আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন। তারা যেন তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যান। মা আপনাকে বলছি আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমাদের ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন না।
তুশি
গলাচিপা, পটুয়াখালী
ফোনঃ ০১৭৩৯-০৬২০৫০
বাবা তোমায় ভালোবাসি
বাবা-মায়ের অবদানেই আমরা পৃথিবীতে আসি। অথচ একটা সময় তাদের অসহ্য মনে হয়। অবশ্য তাদের বুক নিংড়ানো ভালোবাসায় ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠি। স্বার্থপরের মতো ভুলে যাই তাদের কষ্টের করুণ কাহিনী। এটাযেন আমাদের সমাজের একটা অংশ।
আমার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্র ছিল মাকে ঘিরে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল কিন্তু ভালোবাসা অনুভব করতাম না। আজ মনে হচ্ছে বাবা তোমাকে খুব খুউব ভালোবাসি। তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানি না মায়ের সাথে যখন অকারণে রাগারাগি করতে, অপমানিত করতে খুব কষ্ট হতো আমার। ছোট ছিলাম বলে কেউ শুনত না আমার কথা, বলতেও পারতাম না। মায়ের চোখের জল আমাকে বিদ্রোহী করে তুলত। মনে হতো মরে যাই, এ রকম অশান্তি আর ভালো লাগে না।
সত্যি কথা বলতে কি দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে আজ প্রেক্ষাপট সব পাল্টে গেছে। আজ যার শুধু ভালোবাসা পাওয়ার কথা সে কেবল অযৌক্তিকভাবে অবহেলা আর গঞ্জনার শিকার। বাবা-মায়ের কষ্ট দেখে মনে হয় সন্তান জন্ম দেয়া এক মহা ভুল। সন্তানের কাছে লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার যে কী কষ্ট তা তোমাদের দেখে উপলব্ধি করতে পারি।
আমার বাবার সবচেয়ে আদরের সন্তান হলো আমার বড় ভাই। বাবা কখনো কি ভেবেছিলে তোমার সবচেয়েআদরের সন্তানটি তোমাকে কষ্ট দেবে। শিক্ষা-দিক্ষা ও কর্মজীবনে সাফল্যের দাবিদার হয়েও এ কেমন ব্যবহার জন্মদাতারসাথে। অকথ্য ভাষার মাধ্যমে পিতার চোখের জল ঝরায়, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়, উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়। বিত্ত বৈভবের কাছে মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে বাবার আদর-ৱেহ-ভালোবাসা। প্রতি মাসে কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিলেই সন্তান হিসেবে দায়িত্ব শেষ। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছার বড় অভাব।বাইরের লোকদের জন্য উদারভাবে খরচ করতে বাধা নেই, সংসারের কারও জন্য কিছু করলেই হিসাব।
একবারও ভাবে না বাবা-মা, ভাই-বোনদের প্রতি রয়েছে দায়িত্ব। দায়িত্ব পালন করলেই সে পাবে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। বাবার অহংকার ছিলে তুমি...কিন্তু বাবার মনের ক্ষতস্থানে কষ্টের প্রলেপ এঁকেদিলে নির্দ্বিধায়। আমার সামনে যখন তোমাকে কটূক্তি করে আমার বুকটা কষ্টে ভেঙে খান খান হয়ে যায়। বুকটায় টনটন একটা ব্যথা অনুভব হয়। প্রতিবাদ করতে ইচ্ছাকরে কিন্তু পারি না। কারণ আমি যে সংসারে আর্থিক সাহায্য করতেপারি না। বাবা তোমার জন্য নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ঝরে। এমনও হয় সারারাত ঘুমাতে পারি না। বাবা তোমাকে যে এত ভালোবাসি সেটা নিজেও জানতাম না। তোমার চোখের জল আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে বাবা হওয়াটা আনন্দের চেয়ে কষ্টের বেশি। আজ কেবল মনে হয় আমার বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোমার জন্য কিছুই করতে পারি না, এটা আমাকে যন্ত্রণা দেয়। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি তোমার কষ্ট দূর করার জন্য।
বাবা তোমার কষ্টগুলো আমাকে বলেদেয়...তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
সাদিয়া খানম
কাওলার মেইন রোড, উত্তরা, ঢাকা
ফোনঃ ০১৭২১-১৫০১৯০

কোন মন্তব্য নেই :