মানুষের মস্তিষ্ক সম্পর্কে ১০০টি বিস্ময়কর ও অজানা তথ্য p1

কোন মন্তব্য নেই
মানব সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে মানব মস্তিষ্ক মানুষকে বিস্মিতও হতবুদ্ধি করে চলেছে। অনেক বিজ্ঞানী এবং ডাক্তার মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে জানতে গিয়ে তাদের জীবনের পুরো সময় পার করে দিয়েছেন। এটা কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয় যে মানুষ এই অবিশ্বাস্য রহস্যজনক অঙ্গ সম্পর্কে জেনে আনন্দ লাভ করছে।নিচে আপনি মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করছে, কীভাবে উন্নতিকরছে, কীভাবে মানুষকেই নিয়ন্ত্রণ করছে, কীভাবে এটা ঘুম, স্বপ্ন, স্মরণশক্তির ওপর প্রভাব বিস্তার করছে এ রকম আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য সম্পর্কেজানতে পারবেন যা আপনাকে প্রভাবিত ও উপকারী করবে। এই বিস্ময়কর ও মজাদার তথ্যগুলো জেনে আপনি যাচাই করুন আপনার মস্তিষ্কের প্রখরতা। শিখুন এবংজানুন আপনার মস্তিষ্ক সম্পর্কে।
১. ওজন মানুষের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ৩ এলবিএস।
২. সেরেব্রামঃ সেরেব্রাম মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ এবং মস্তিষ্কের ৮৫ ভাগ ওজনই সেরেব্রাম বহন করে।
৩. আবরণঃ মস্তিষ্কের ওজনের প্রায় দ্বিগুণ ওজন হচ্ছে মস্তিষ্কের আবরণ বা চামড়ার।
৪. ধূসর পদার্থঃ মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ তৈরি হয় নিউরন দিয়ে যা বিভিন্ন বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরিক সংকেত নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. সাদা পদার্থঃ সাদা পদার্থ জেনডাইট ও অ্যাক্সনের সূক্ষ্ম তন্তু দিয়ে তৈরি হয় যা নিউরনকে সংকেত পাঠানোর ক্ষেত্র সৃষ্টি করে।
৬. ধূসর ও সাদা পদার্থের পরিমাণঃ মস্তিষ্কের ৬০ ভাগ সাদা পদার্থ এবং ৪০ ভাগ ধূসর পদার্থ।
৭. পানিঃ মানব মস্তিষ্কের ৭৫ ভাগ পানি রয়েছে।
৮. নিউরনঃ আপনার মস্তিষ্কে একশবিলিয়ন নিউরন রয়েছে।
৯. ব্যথাহীনতাঃ মস্তিষ্কে ব্যথা সংগ্রাহক কোনো অঙ্গ নেই তাই মস্তিষ্ক কখনো ব্যথা অনুভবকরে না।
১০. শাখা-প্রশাখাঃ প্রত্যেক নিউরনে ১০০০ থেকে ১০,০০০ শাখা-প্রশাখা বা সিন্যাপসিস রয়েছে।
১১. সবচেয়ে বৃহৎ মস্তিষ্কঃ হাতির মস্তিষ্ক মানুষের মস্তিষ্কের অপেক্ষা বৃহৎ হলেও হাতির মস্তিষ্ক তার দেহের ০.২৫ ভাগ যেখানে মানুষের মস্তিষ্ক তার দেহের ওজনের দুই ভাগ। এতে বোঝা যাচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কইসবচেয়ে বড়।
১২. রক্ত সঞ্চালক শিরাঃ একশ মাইল লম্বা শিরা রয়েছে মানব মস্তিষ্ক।
১৩. চর্বিঃ মানুষের মস্তিষ্ক সবচেয়ে চর্বিবহুল অংশ এবং দেহের মোট চর্বির প্রায় ৬০ ভাগ।
মস্তিষ্কের বৃদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া
গর্ভাশয় থেকে শুরু করে মানব মস্তিষ্ক ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নিজেকে বৃদ্ধি করে এক অবিশ্বাস্য পথে এগিয়ে যায়।
১৪. নিউরনঃ নিউরন বৃদ্ধির হার প্রথম ভ্রূণ সৃষ্টির পর থেকে প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫০ হাজার।
১৫. জন্মের সময় আকৃতিঃ জন্মের সময় থেকে মানব মস্তিষ্কপূর্ণাঙ্গ মানুষের মস্তিষ্কের আকৃতি নিয়ে আসে এবং মস্তিষ্কেরপ্রায় পূর্ণাঙ্গ কোষ নিয়েই আসে।
১৬. নবজাতকের বৃদ্ধিঃ নবজাতকের প্রথম বছর মস্তিষ্ক তিনবার আকারে বৃদ্ধি পায়।
১৭. বৃদ্ধিকরণের সমাপ্তিঃ মস্তিষ্ক ১৮ বছর বয়সের পর বৃদ্ধি হয় না।
১৮. সেরেব্রাল কর্টেক্সঃ মস্তিষ্ক যত ব্যবহৃত হয় ততই এর সেরেব্রাল কর্টেক্স মোটা হতে থাকে।
১৯. উদ্দীপকের ভূমিকাঃ একটি উদ্দীপক পরিবেশে শিশু ২৫% বেশি দক্ষ হয়ে গড়ে যে কোনো অনুদ্দীপক পরিবেশে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিশুর তুলনায়।
২০. নতুন নিউরনঃ মানুষের মস্তিষ্কের সারা জীবন ্লায়ু বৃদ্ধি করতে থাকে পরিবেশের ওপরপ্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে।
২১. শব্দ করে পড়ার উপকারিতাঃ শব্দ করে পড়া এবং শিশুদের সাথে কথা বলা মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য মঙ্গলজনক।
২২. আবেগঃ আনন্দ, জয়, সুখ, ভয় এবং লজ্জা ইত্যাদি আবেগীয় অনুভূতি শিশু জন্ম থেকেই বহন করে। শুধু পরিবেশের এবং বৃদ্ধিপ্রতিপালনের প্রক্রিয়া সেই আবেগীয় অনুভূতিকে আকার দেয়।
২৩. মস্তিষ্কের প্রথম অনুভূতিঃ প্রথম শিশু ত্বকের মাধ্যমে অনুভূতি পেতে শেখে। ঠোঁট এবং গালের স্পর্শ অনুভূতিজন্মায় আট সপ্তাহের মধ্যে এবং বাকি অনুভূতি জন্মের ১২ সপ্তাহের মধ্যে জন্মায়।
২৪. দ্বিভাষাকেন্দ্রিক মস্তিষ্কঃ যেসব শিশু পাঁচ বছরবয়সের আগে দুটি ভাষা শেখে তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায়ভিন্ন হয় এবং তাদের ধূসর পদার্থ বেশি ঘন হয়।
২৫. মস্তিষ্কের ওপর যক্ষ্মার প্রভাবঃ বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা যায় যে, যেসবশিশুর স্বাভাবিক বিকাশে যক্ষ্মার প্রভাব বেশি তাদের মস্তিষ্ক বেশি আঘাত পেয়ে থাকে।
মানব মস্তিষ্কের ক্রিয়া
২৬. অক্সিজেনঃ দেহের মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০ ভাগ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে থাকে।
২৭. রক্তঃ অক্সিজেনের মতো প্রায় ২০ ভাগ রক্তই মস্তিষ্ক আদান-প্রদান করে।
২৮. অবচেতনঃ যদি মস্তিষ্ক ৮ থেকে ২০ সেকেন্ড রক্ত না পায় তবে মানুষ জ্ঞান হারায়।
২৯. গতিঃ মানব মস্তিষ্ক তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে ন্যূনতম০.৫ মিটার সেকেন্ড থেকে সবচেয়ে বেশি ১২০ মিটার সেকেন্ড পর্যন্ত।
৩০. ক্ষমতাঃ যখন মস্তিষ্ক জেগে থাকে তখন মস্তিষ্ক ১০ থেকে ২৩ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে যা দিয়ে একটি বাল্ব জ্বালানো যায়।
৩১. হাই তোলাঃ এটা ধারণা করা হয় যে, একবার হাই তোলা মস্তিষ্কে বেশি অক্সিজেন পাঠাতে কাজ করে যাতে মস্তিষ্ক শান্ত হয় এবং একে জাগিয়ে রাখা যায়।
৩২. নিউকর্টেক্সঃ নিউকর্টেক্স মস্তিষ্কের প্রায় ৭৬ ভাগ অংশ তৈরি করে। মানুষের ভাষা আদান প্রদান এবং চেতনার জন্য নিউকর্টেক্স দায়ী। প্রাণীদের চেয়ে মানুষের মস্তিষ্কের নিউকর্টেক্স বেশি মোটা।
৩৩. ১০ ভাগঃ মানুষের বয়স্ককালেমস্তিষ্ক ১০ ভাগ কাজ করে থাকে অন্য সময়ের তুলনায় এটা সত্যি নয়। মস্তিষ্কের প্রতিটা অংশই তার কাজ জানে।
৩৪. মস্তিষ্কের মৃত্যুঃ মস্তিষ্ক ৪ থেকে ৬ মিনিট অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে এবংতারপর মারা যেতে থাকে। ৫ থেকে ১০ মিনিট অক্সিজেন না থাকলে মস্তিষ্কের স্থায়ী সমস্যা দেখাদেয়।
৩৫. সর্বোচ্চ তাপমাত্রাঃ যখনআপনি জ্বরে আক্রান্ত হবেন তখন মনে রাখবেন মানুষের মস্তিষ্কেরসর্বোচ্চ তাপ সহনীয় ক্ষমতা ১১৫.৭ ডিগ্রি এবং ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বাঁচতে পারে।
৩৬. চাপ সহনীয় ক্ষমতাঃ যখন মানুষকে অত্যধিক চাপ সহ্য করতেহয় তখন মস্তিষ্কের কোষ, গঠন বা আকার এবং কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।
৩৭. ভালোবাসাজনিত হরমোন এবং আত্মসংবৃত্তিঃ অক্সিটোক্সিন নামক হরমোন মস্তিষ্ক থেকে ক্ষরিত হয় এবং ভালোবাসা এবং আত্মসংবরণের জন্য দায়ী।
আরো দেখুন+মানুষের মস্তিষ্ক সম্পর্কে ১০০টি বিস্ময়কর ও অজানা তথ্য part 2♥♥লিখেছেন♥♥অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ

কোন মন্তব্য নেই :