নারী-পুরুষের যৌন আনন্দj

কোন মন্তব্য নেই
নারী-পুরুষের যৌন আনন্দকে তৃপ্তিময় ও দীর্ঘস্থায়ী এবং তাৎপর্যময় করে তুলতে হলে পুরুষএবং নারী উভয়কেই নিত্য নতুন ধ্যান-ধারণার আলোকে এগোতে হবে।পুরনো ধ্যান-ধারণা পাল্টানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন।
আধুনিক যৌনবিজ্ঞান বলে যে, ইচ্ছে করলে নারীও চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা পুরুষের উপর চেপে বসে প্রচণ্ড উত্তেজনায় কোমর নাচিয়েযৌনমিলনে লিপ্ত হয়ে দারুণ তৃপ্তি সুখ উপভোগ করতে পারে। এতে করে উভয়ের দারুণ যৌন আনন্দ লাভ করতে পারে। যৌনমিলনে বিভিন্ন আসন বা ভঙ্গি আনন্দ এনে দিতে পারে উভয়ের মাঝে। কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ না থেকে স্বামী-স্ত্রী ঘরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র ভঙ্গিতে যৌনমিলনে লিপ্ত হলে দাম্পত্য জীবনে যৌনতৃপ্তির মাত্রা বেড়ে যাবে অনেক গুণ। যৌন আনন্দ লাভের জন্য প্রয়োজন পরস্পর পরস্পরের শরীরকে ভালোভাবে জানা। সেই সাথে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত যৌনবিষয়ক বিভিন্ন বই-পুস্তক পড়া প্রয়োজন।
সবাই যৌনজীবনে, যৌনমিলনে পরিপূর্ণ সুখ, তৃপ্তি ও আনন্দ চায়। এ চাওয়া খুবই যৌক্তিক ও স্বাভাবিক। শতকরা ১০০ ভাগ যৌনতৃপ্তি না পেলে সেক্সের কোনো তাৎপর্য থাকে না, এ কথা অনেক নারীরই। অর্থাৎ এর বয়স ২৫-২৬ বছর হবে। একজন সন্তানের এই যুবতী গৃহবধূ তার যৌনজীবনকেবেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা লাভকারী এই মহিলা যৌনবিষয়ক বিভিন্ন বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন মনোযোগ দিয়ে পড়েন। যৌনসুখ ও তৃপ্তি লাভের বিচিত্র কৌশল, যৌনমিলনে পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভের উপায়, যৌনমিলনে নারী-পুরুষের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি মোটামুটি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ধারণা রাখেন।
স্বামীর সাথে তার চমৎকার আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে বেশ সুখী এই মহিলা অনেক সময় তার প্রিয় স্বামীকে যৌনমিলনের নিত্য নতুনকলাকৌশল সম্পর্কে অবহিত করেন। তার স্বামীটিও ভালো মানুষ। স্ত্রীকে ভালোবাসেন। স্ত্রীর মতামত এবং ইচ্ছাকে যথেষ্ট মূল্য দেন। এই মহিলাকে অতি কামুক বলা যায় না। বরং তাকে যৌনবিষয়ে সচেতন আধুনিক যুগের যোগ্য নারী বলা যায়। যেখানে যৌন বিষয়ে আগ্রহ দেখানো কিংবা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করাটাকে অনেক নারী কিংবা তরুণী-যুবতী বিব্রতকর মনে করেন।

আসলে যৌনজীবনকে পরিপূর্ণ সুখময়, আনন্দময়, তৃপ্তিকর ও তাৎপর্যময় করে তুলতে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে সক্রিয় হতে হবে। পুরুষরাই কেবলযৌন বিষয়ে অভিজ্ঞ হবে, সে তার ইচ্ছার প্রকাশ ঘটাবে, যৌনমিলনের সময় নারীর কিছু বলারকিংবা করার থাকবে না তা তো হতে পারে না। যৌনমিলনে পুরুষের মতোনারীরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুরুষের মনে কামনার আগুন জ্বালিয়ে ক্রমান্বয়ে যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে নারীকে অবশ্যই যৌন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। নারীকে তার নারীত্বের মধ্যে থেকেই পরিপুর্ণ আনন্দ ও সুখ পাবার চেষ্টা চালাতে হবে।
দীর্ঘ দাম্পত্যের ফলে অনেক সময়এক ধরনের একঘেয়েমি চলে আসে স্বামী-স্ত্রীর জীবনে। স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্কের দিকটি এতে বাধা পেতেপারে। অনেক সময় স্বামী নিস্তেজহয়ে পড়েন। এ ধরনের শৈত্য দাম্পত্য জীবনে অভিশাপ নিয়ে আসে, আর জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিসহ।এ সময় অযথা স্বামীকে দোষারোপ করলে কষ্ট কেবল বেড়েই যাবে। তাই এক্ষেত্রে স্ত্রীকে এগিয়ে আসতে হবে। স্ত্রী হিসেবে স্বামীর মানসিক দিকটি সতেজ এবংস্বাভাবিক করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। যৌন বিশেষজ্ঞের কথা হলো, ‘দাম্পত্য জীবনে শৈথল্য জেগে ওঠার কারণ হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, কলহ, বিবাদ ও সন্দেহ’।তাই এসব ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিতটি খুব শক্ত হওয়া দরকার। এ সময় প্রেম-প্রীতি, মায়া-মমতা ও পাস্পরিক ভালোবাসার টানকে গভীরভাবে জাগিয়ে তুলতে হবে।
কয়েক দিন আগে এক দম্পতি আসে আমার চেম্বারে। এক সঙ্গে এলেও ওদের দেখে আমার মনে হয়েছিল সম্পর্কটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। দুজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম আর কিছুই নয়, এখানেও সেই ভুল বোঝাবুঝি। আসলে দীর্ঘ দাম্পত্যজীবনে যা হয়। দম্পতির সাথে কথা বলে জানা গেল যে, স্বামী বাইরেরকাজে ব্যস্ত। বাড়ি ফিরে স্ত্রীর প্রতি আর শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করত না। স্ত্রীর কাছে এগিয়ে আসতে ভালো লাগত না। এরই ফলে সৃষ্টি হয়েছিল এক ধরনের শারীরিক অনিচ্ছা, তার থেকে অক্ষমতা। আমি মেয়েটিকে বললাম, আপনিই বরং উদ্যোগ নিয়ে স্বামীর কাছে এগিয়ে যাবেন। তারইচ্ছাকে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্বআপনার হাতে তুলে নিন। তার মন-মানসিকতাকে জাগিয়ে তুলতে পারেন একমাত্র আপনিই। এর কয়েক মাস পরে সে দম্পতি আবার আমার চেম্বারে এল। এবার কিন্তু তাদের চোখে-মুখে বিষণ্নতা আর দেখা গেল না। বেশ প্রাণবন্ত লাগছিল দম্পতি স্বামী-স্ত্রীকে।তাদের কাছে তাদের বর্তমান অবস্থা জিজ্ঞেস করাতে তারা উভয়ে জবাব দিল যে, তারা এখন দুজন দুজনাকে বুঝতে পারে এবং পরিপূর্ণ যৌনজীবন উপভোগ করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে বলা দরকারযে, যৌন সমস্যা বা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে ফেলুন এবং প্রয়োজনে একজন মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
♥♥
লিখেছেন
♥♥
বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
মানসিক রোগ শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও জনসচেতনতায় পথিকৃৎ

কোন মন্তব্য নেই :