নারী সমস্যার মূল কারণ ফাইব্রয়েড
কোন মন্তব্য নেই
ডা. বশির আহমেদ তুষার
মেয়েদের শরীরে মাতৃত্ব ধারণের অন্যতম শত্রু ফাইব্রয়েড। ফাইব্রয়েড এক ধরনের টিউমার। কিন্তু এই টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা এক শতাংশেরও কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেঅপারেশন না করেই চিকিৎসা করা সম্ভব এবং সন্তান নেয়ার আগে অপারেশন না করে শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেই হবে। জরায়ুতে ছুরি কাঁচি চালানোর আগে হরমোন থেরাপি বা অন্য ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা করে নেয়া গর্ভবতী মা ও সন্তান উভয়ের পক্ষে নিরাপদ এবং মঙ্গলজনক, তবেসন্তান প্রসবের পর ফাইব্রয়েড সরিয়ে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন জাগতে পারে ফাইব্রয়েড কী এবং কোথায় সৃষ্টি হয়? ফাইব্রয়েড হলো নারীদেহের অত্যন্ত কমন টিউমার। নীরবে ও সন্তর্পণে বিভিন্ন আকৃতিতে এই ফাইব্রয়েড বেড়ে ওঠে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি পাঁচজন মহিলার মধ্যে অন্তত একজনের শরীরে এই অসুস্থতা দেখা যায়। শতাংশের বিচারে ২৫% মহিলার দেহে ফাইব্রয়েড থাকতে পারে। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে শুরু করে ৫০বছর বয়সী যে কোনো মহিলার দেহে ফাইব্রয়েড হতে পারে। তবে ২০ বছরের কম বয়সী মেয়েদের দেহে এর উপস্থিতি কম। ৩০-৪০ বছর বয়সীদের মধ্যেই ফাইব্রয়েডে আক্রান্তের হার বেশি। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ফাইব্রয়েডগুলো এক মিলিমিটার থেকে শুরু করে এক মিটার বা আরো বেশি হতে পারে। ওজনের দিক থেকে ১ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। মাঝেমধ্যেই ডাক্তাররা মহিলাদের জরায়ু থেকে ফুটবলের আকৃতির ফাইব্রয়েড টিউমার অপারেশন করে বের করে থাকেন।
কোথায় এবং কেন ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হয়?
মূলত মহিলাদের জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে। তবে জরায়ুর পেশিতেও অন্তঃত্বকে অনেক সময় ফ্যালোপিয়ান টিউবের মুখে, ব্রড লিগামেন্ট ও ডিম্বাশয়ের পাশেও ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হতে পারে। শতকরা ২০ থেকে ৫০% মহিলার দেহে এই টিউমার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু কেন শরীরের অভ্যন্তরীণ একাধিক অঙ্গে এই ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হয় তার প্রকৃত কারণ এখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি। অনুমান করা হয়, যৌবনবতী মহিলাদের দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণের সঙ্গে এই ফাইব্রয়েড সৃষ্টির কোনো সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। কারণ নারীর দেহে যখন ইস্ট্রোজেন সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষরণ হয় সেই সময় অর্থাৎ ২৫-৪০বছর বয়সে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। আবার মনোপজ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি থেমে যায়।
মহিলারা কী করে বুঝবেন?
একটু গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ করলেই যে কোনো সতর্ক মহিলা বুঝতে পারবেন তার শরীরে নীরবে এই মারাত্মক শত্রু হানা দিয়েছে। শরীরে এই অসুস্থতা সৃষ্টি হলেইমহিলাদের দেহে কতগুলো লক্ষণ ফুটে ওঠে। আবার অনেক সময় মহিলাদের শরীরে এই অস্বাভাবিক অসুস্থতা নীরবে থাকায় রোগী বুঝতেই পারেন না।
লক্ষণ
ক. ঋতুকালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্তস্রাব
খ. নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাসে একবারের পরিবর্তে ১০-১৫ দিন পরপর হঠাৎ হঠাৎ করেই রক্তস্রাব
গ. তলপেটে ভারী কিছু থাকার অনুভূতি
ঘ. ঋতুস্রাবের সঙ্গে পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা
কী কী ক্ষতি হয়
মহিলাদের স্বাভাবিক মা হওয়ার পথে ফাইব্রয়েড অনেকটাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, কখনো কখনো কোথায় ফাইব্রয়েড হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে অসুস্থতা। এগুলো হলো-
ক. সব সময় শরীরে একটা অস্বস্তিরঅনুভব হয়
খ. জরায়ুর অন্তঃত্বকে হলে অকাল গর্ভপাত হয়
গ. জরায়ুর ভেতর হলে রজঃস্রাবে সমস্যা হয়
ঘ. জরায়ুর মাংসপেশিতে হলে ঋতুকালীন সময়ে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়
ঙ. কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া)
চ. স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব, সাময়িক বন্ধ্যাত্ব হতে পারে
ছ. অনেকের ক্ষেত্রে মূত্রথলিতে সংক্রমণও হয়
চিকিৎসা
অনেক মহিলার শরীরে ফাইব্রয়েড থাকলেও সারা জীবনে তেমন কোনো সমস্যা অনুভূত না হওয়ায় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হয় না।আবার অনেকে এক বা দুটি সন্তান জন্মের পর এই সমস্যায় ভোগেন বলে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বা স্রাবের সঙ্গে পেটে ব্যথার বিষয়টিকে নারী জীবনের অভিশাপ হিসেবে ধরেনেন। আর এই কারণেই অনেকে স্রেফ জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হওয়ায় বন্ধ্যাত্বের শিকার হন। কোন বয়সে বা কী অবস্থায় আছেন রোগী তার ওপরেই চিকিৎসার বিষয়টি নির্ভর করে। কারণ চিকিৎসার তিনটি পদ্ধতি আছে যেমন-(ক) কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্ট (খ) মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট (গ) সার্জিক্যাল ম্যানেজমেন্ট। প্রথম পদ্ধতি মায়োমেক্ট্রমি অর্থাৎ ফাইব্রয়েড নামের টিউমারটি পুরোপুরি বাদ দেয়া। এই বাদ দেয়া পদ্ধতিও তিন ধরনের। (১) ল্যাপারোস্কোপি (২) হিস্টোরোস্কোপি (৩) ল্যাপারোটমি দ্বিতীয় পদ্ধতি- অ্যাম্বোলাইজেশন এই পদ্ধতি অনেক বেশি নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন। তৃতীয় পদ্ধতি-হিস্টোরেকটমি এই পদ্ধতিতে টিউমার অর্থাৎ ফাইব্রয়েডসহ গোটা জরায়ুটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দেয়াহয়, মূলত যারা মা হয়েছেন অর্থাৎআর সন্তান নেয়ার প্রশ্নই নেই তাদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়।

♥♥♥♥সমাপ্ত
♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3

কোন মন্তব্য নেই :