পুরম্নষের বন্ধ্যাত্ব সমস্যা দোষ নিতে হয় নারীকে, কিভাবে করবেন কারণ নির্ণয়
কোন মন্তব্য নেই
আমি মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে কখনও লিখি না৷ তবে যেসব কারণে মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব হয় তা আমাকে জানতে হয়৷ যাতে করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী কে তা সনাক্ত করা যায়৷ কিছু কিছু ৰেত্রে দেখাযায় অভিনব সব ঘটনা৷ বরিশালে চাকরি করেন এমন একজন রোগীর তথ্য দিয়েই শুরম্ন করবো৷ ভদ্রলোক বিয়ে করেছেন ৫/৭ বছর হবে৷ কোন সনত্মান হচ্ছে না৷ স্ত্রী থাকেন ঢাকায়৷ পিতা-মাতারএকমাত্র সনত্মান৷ আমি সাধারণত আগে মহিলাদের কোন প্রকার পরীৰা-নিরীৰা করতে দেইনা৷ কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেকোন একজন বন্ধ্যাত্বের সাময়িক অথবা স্থায়ী সমস্যায় পড়লে প্রথমে পুরম্নষের পরীৰা-নিরীৰা করা উচিত্‍৷ পুরম্নষের বন্ধ্যাত্বের কারণ সনাক্ত করতে কেবল মাত্র একটি মামুলি পরীৰাই যথেষ্ট৷ সিমেন এনালিসিস এর রিপোর্ট দেখে মোটামুটি ধারণা করা যায় বন্ধ্যাত্বের বা সনত্মান না হবার কারণ কি৷ মনে রাখতে হবে শুধু মাত্র স্পার্ম বা শুক্রাণুর অনুপস্থিতির কারণে পুরম্নষের বন্ধ্যাত্ব হয় তাই নয়, শুক্রাণুর পরিমাণ অপেৰাকৃত কম থাকলে অথবা শুক্রাণুর আকৃতি, গঠনগত দুর্বলতা থাকলেও বন্ধ্যাত্ব হতে পারে৷ সিমেন-এ শুক্রাণুর পরিমাণ কম হলে আমরা পুরম্নষের এই সমস্যাকে বলে থাকি ওলিগোসপারমিয়া৷ বেশীরভাগ ৰেত্রে যথাযথ পরীৰা-নিরীৰা ও চিকিত্‍সা দেয়া গেলে ওলিগোসপারমিয়ার কারণে বন্ধ্যাত্বের অনেক ৰেত্রে সুরাহা করা যায়৷ তবে ৰেত্র বিশেষ ছয়মাস থেকে দু’বছর পর্যনত্ম চিকিত্‍সার প্রয়োজন পড়ে৷ আর পুরম্নষের এই সমস্যাটিরচিকিত্‍সা তেমন ব্যয়বহুল নয়৷ এছাড়াও পুরম্নষের বন্ধ্যাত্বেরকারণ নির্ণয় করতে ৰেত্র বিশেষ কিছু কিছু হরমোন পরীৰা, ক্রোমোসোম এনালিসিন এবং টেস্টিকুলার বায়োপসি করার প্রয়োজন পড়ে৷
পৰানত্মরে মহিলাদের বন্ধ্যাত্বনির্ণয় করতে হলে নানাবিধ পরীৰা-নিরীৰা, এমনকি ল্যাপারোস্কপি পর্যনত্ম করতে হতে পারে৷ তাই আমি কখনও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধ্যাত্ব নিরূপণের ৰেত্রে মহিলাদের আগে পরীৰা-নিরীৰা করতেদেই না৷ তবে ইদানিং একাধিক ৰেত্রে পুরম্নষের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আমার খানিকটা অভিনব অভিজ্ঞতা হয়েছে৷
বরিশালে চাকরি করেন ঐ ভদ্রলোকেরকথায় ফিরে আসি৷
বরিশালে চাকরি করেন ঐ ভদ্রলোকেরকথায় ফিরে আসি৷ পরীৰা-নিরীৰায় তার তীব্র ওলিগোসপারমিসেহ শুক্রাণুর গঠনগত ত্রম্নটি ধরা পড়লো৷ অথচ ভদ্রলোক পরিবারে নতুনঅতিথি না আসায় স্ত্রীকে দায়ী করে আসছিলেন৷ স্ত্রীর অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে অতি মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ সেবন করতে অভ্যসত্মহলেন৷ আমি কখনও স্বামী-স্ত্রীর সমস্যা একে অপরের কাছে বলিনা অথবা দু’জনের সামনে তাদের কোন গোপন সমস্যা আলোচনা করিনা৷ ভদ্রলোক আমাকে বললেন, স্যার আমার স্ত্রীর যত ধরনের পরীৰা-নিরীৰা আছে সব করতে চাই৷ আমি বললাম প্রয়োজন নেই৷ সমস্যাটি আপনার৷ ভদ্রলোক শিৰিত৷ বললাম আপনার যে ধরনের সমস্যা সনাক্ত হয়েছে তাতে টেস্টটিউব বেবী ছাড়াস্বাভাবিকভাবে আপনার পিতা হবার সম্ভাবনা একেবারেই কম৷ ভদ্রলোক বললেন, স্যার টেস্টটিউব বেবীর কথা বললেইতো তার স্ত্রী বুঝে যাবে সমস্যাটি স্বামীর৷ টেস্টটিউব ছাড়া অন্যকোন উপায় আছে কি৷ বিষয়টি খানিকটা জটিল দেখে ভদ্রলোককে প্রতিশ্রম্নতি দিলাম তার শারিরীক সমস্যা স্ত্রীর কাছে বলবো না৷ এথিক্যালিও আমি একজনের সমস্যা অপরজনের কাছে কখনও বলিনা৷ আমি আগেও বলেছি আমি জটিল অবস্থার ৰেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে কথা বলি৷
ভদ্রলোক চেম্বারের বাইরে গেলেন৷ নার্সসহ ভদ্রমহিলা আসলেন৷ আমি কিছু বলার আগেই ভদ্রমহিলা কেঁদে ফেললেন৷ বললেন স্যার আমার সনত্মান না হলে তার সংসার হয়তো টিকবেনা৷ ইতিমধ্যেই শ্বশুর বাড়ীর লোক বংশ রৰার্থে ছেলের দ্বিতীয় বিয়ের চিনত্মা-ভাবনা শুরম্ন করে দিয়েছে৷ এক কঠিন সমস্যায় পড়লাম৷ ভদ্র মহিলার আগের কিছু পরীৰা-নিরীৰাররিপোর্ট দেখলাম৷ একেবারেই নরমাল৷ পিরিয়ডে সামান্য সমস্যা ছাড়া আর কোন জটিল সমস্যা নেই৷ তবুও বলতে পারলাম না আপনার সনত্মান ধারণে কোন সমস্যা নেই৷ যা সমস্যা ধরা পড়েছে তা আপনার স্বামীর৷ পুনরায় ভদ্র মহিলাকে বাইরে যেতে বললাম৷ ভদ্রলোক আসলেন৷ ওষুধ দিয়ে তিন মাস পর আসতে বললাম৷ তিন মাসের ওষুধ শেষ করে পুনারায় আর্মি প্যাথলজি থেকে সিমেন এনালিসিস- করে রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলি৷ তবে ডাক্তার হিসাবে না হলেও মানুষ হিসেবে কিঞ্চিত হলেও মানুষের উপকার করতে চেষ্টা করি৷ ভদ্রলোককে বললাম মহান আলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করেন তিনি যেন আপনাদের একটা সনত্মান দেন এবং স্ত্রীর মুখের হাসি ফিরিয়ে আনুন৷ভদ্রলোক স্বীকার করলেন অজ্ঞাতার কারণে তার ফুলের মত স্ত্রীকে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে৷ আমি বললাম ভুল মানুষই করে৷ মানুষ যখন তার ভুল বুঝতে পারে অনুতপ্ত হয়, তখন সে সোনার মানুষ হয়ে যায়৷ এবার কাউন্সিলিংপর্ব স্বামী-স্ত্রী উভয়কে মানসিক ও শারীরিক সম্পর্ক উন্নতকরার কিছু টিপস দিলাম৷ তিন মাস পর দু’জনকে আবার একসঙ্গে আসতে বলি৷ দীর্ঘ কাউন্সিলিং-এর পর স্বামী-স্ত্রী হাসতে হাসতে বেরিয়ে যান৷ একজন ডাক্তার হিসেবে অর্থের চেয়ে এই মমতার বন্ধন তৈরি করে দেয়ার আনন্দ অনেক বেশি৷ যাক এসব কথা৷
ইদানীং এ ধরনের বেশ কয়েকটি সমস্যা দেখেছি৷ বেশিরভাগ ৰেত্রে স্বামীর দোষ ধরা পড়লে তা আর স্ত্রীর কাছে প্রকাশ করতে চান না৷ অথচ স্ত্রীর সামান্যতম ত্রম্নটি ধরা পড়লে পুরো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সকলেই জেনে ফেলেন৷তারপর স্ত্রীনামের ভদ্র মহিলাদের নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়৷ আমাদের এই পুরম্নষশাসিত সমাজে (কিছু কিছু ৰেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া) কত মেয়েকে নিজের দোষ না থাকা সত্ত্বেও নিরবে স্বামী-শাশুড়ি, শ্বশুরবাড়ির লোকদের অত্যাচার নিরবে মেনে নিতে হয়৷ তার হিসাব ক’জন রাখে৷ তবে একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিত্‍ বন্ধ্যাত্বের অনেক ৰেত্রে চিকিত্‍সা সম্ভব৷ একে অপরে দোষারোপ না করে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে উপযুক্ত চিকিত্‍সা নেয়া উচিত্‍৷ সমস্যা গোপন করে বা গোপনে গোপনে চিকিত্‍সা অনেক ৰেত্রে সমস্যা আরো বাড়ে৷ তাই সমস্যা থাকলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন৷
ডাঃ মোড়ল নজরম্নল ইসলাম
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন
বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার
বাড়ী নং-২২/এ, রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা

♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

কোন মন্তব্য নেই :