সংসদ সচিবালয়ে বেপরোয়া প্রশাসন
কোন মন্তব্য নেই
তারা দাবি করেন, যে কোন দুর্নীতির বিষয় জানা মাত্র স্পিকার ব্যবস্থা নেন। এ প্রসঙ্গে আবদুল হাই মানবজমিনকে বলেন, এসব নিন্দুকের কথা। যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে পারছে না তারাই এ ধরনের বিরুদ্ধাচরণ করছে। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, এখানকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছে ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে কেউ কাজ করতে গেলে তারা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। কখনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও দেখা দিচ্ছে। ১০০টির বেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন টেন্ডারের কাজ করার জন্য তালিকাভুক্ত। অথচ কাজ পাচ্ছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এদিকে টেন্ডার জমা দেয়ার দিন সংসদ সচিবালয়ে থাকছে টান টান উত্তেজনা। এর আগে গত ৩১শে অক্টোবর সংসদের অধিবেশন কক্ষের জন্য কার্পেট কেনার দরপত্র জমা দিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের ছেলে মাহফুজ শফিক। ওইদিন গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সাত-আটজন যুবকের হুমকির কারণে আরও কয়েকজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিতে পারেন নি। বিদেশী এই কার্পেটের দাম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, সংসদের মতো জায়গায় একজন ঠিকাদার দরপত্রজমা দিতে পারবেন না, তা হতে পারেনা। তিনি মনে করেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তা ছাড়া কেউ এধরনের অপকর্ম করতে পারে না। একজন মন্ত্রীর ছেলে যদি দরপত্রেঅংশ নিতে না পারেন, তাহলে অন্যদের অবস্থা কি হবে। এর আগে ২০০৯ সালের ১০ই অক্টোবর টেন্ডারজমা দেয়াকে কেন্দ্র করে সংসদ সচিবালয় এলাকায় যুবলীগ ক্যাডাররা অস্ত্রের মহড়া দেয়। ওইদিন দুপুর ১২টায় টেন্ডার দাখিলের শেষ সময় থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত শতাধিক যুবলীগ কর্মী সংসদ ভবন এলাকায় মন্ত্রী হোস্টেলের আশপাশে অবস্থান নেয়। আগারগাঁও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনে বিদ্যুতের সাব-স্টেশনের ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার কার্যাদেশ দিতে ওই টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ওইদিন সকাল থেকে শতাধিক যুবলীগ কর্মী ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। যুবলীগ কর্মীদের মহড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য নিয়ে যা হচ্ছে
সংসদ সচিবালয়ে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য এখন রমরমা। আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি দলীয় বিবেচনায় এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে বদলি হতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। স্পিকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ৮ থেকে ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট এসবের সঙ্গে জড়িত। বদলি ও নিয়োগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি স্বীকার করে আবদুল হাই বলেন, এটা সত্য। তবে এ নিয়ে কোন বাণিজ্য করি না। দীর্ঘদিন সংসদ সচিবালয়ে চাকরি করার কারণে অনেকে আমাকে চেনেন। বদলি বা চাকরির জন্য তারা আমার কাছে ছুটে আসেন। এ জন্য এই দুটি বিষয় দেখভাল করা আমার জন্য সহজ হয়। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ১ বছরে সংসদ সচিবালয়ের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক সুবিধা দিয়ে বদলি হওয়ার ঘটনা রয়েছে। এদিকে সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন বিপাকে। স্বজনপ্রীতি করে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ তুলে সবসময় তাদের ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় কর্মী ও সমর্থকরাগুরুত্ব পাওয়ায় সচিবালয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে যা হচ্ছে
বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তা। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে তারা মন্ত্রী ও কমিটির সভাপতির নাম ব্যবহার করছেন। এমনকি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ারও চুক্তি করছেন অনেকের সঙ্গে। এছাড়া চাকরি ও নিয়োগের জন্য কমিটির সভাপতিদের সুপারিশ বিক্রি করা হচ্ছে। ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকায় সুপারিশসহ কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহারকরা হচ্ছে।গত ১০ই অক্টোবর রাজউকের উত্তরা অফিসে লঙ্কাকাণ্ড ঘটান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর একান্ত সচিব এম মাসুম। আমমোক্তার-এর (পাওয়ারঅব এটর্নি) মাধ্যমে মালিক হওয়ায়পাঁচ কাঠার প্লটের দখল নিতে গিয়ে এ কাণ্ড ঘটান তিনি। সবাইকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে বলেন, বলেন, ‘আমার ফাইল নিয়েমাতব্বরি করছিস। তোরা গায়েবের মাস্টার। এখন ফাইল খুঁজে পাচ্ছিস্‌ না কেন? তোদের ঢাকার বাইরে বদলি করতে আমার দুই মিনিট লাগবে।

কোন মন্তব্য নেই :