জামায়াত-শিবির ঘরছাড়া!
কোন মন্তব্য নেই
গৃহবন্দি থেকে মুক্তি পাওয়ার লড়াই করে গৃহহারাহয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদসহ প্রথম ও দ্বিতীয় সারির সব নেতা প্রায় দু’মাস ধরে ঘরছাড়া। তৃতীয়-চতুর্থ সারির নেতারা মাঝে-মধ্যে রাজধানীর এখানে ওখানে বিক্ষিপ্ত মিছিল-সমাবেশ করছেন বটে, কিন্তু ঘরে ফিরতে পারছেন না। এতে দলের মগবাজার কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পুরানা পল্টনের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে এখনও সুনসান নীরবতা। সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা সভার মতো ঘরোয়া কর্মসূচিও দেখা যাচ্ছে না এ দু’টি রাজনৈতিক কার্যালয়ে। একই রকম অবস্থা দলটির ছাত্র সংগঠন শিবিরের ক্ষেত্রেও। পুরানা পল্টনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ডটিও সমপ্রতি ভেঙে ফেলে পুলিশ। ১৯শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাকরাইল-শান্তিনগরসহ ১৩টি জেলায় পুলিশের সঙ্গে শক্তির মহড়া দেয়ার পর এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় জামায়াত-শিবির। এর দু’দিন আগে এক ঘরোয়া সমাবেশে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলএ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছিলেন ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা গৃহবন্দি অবস্থায় আর কোন প্রতিবাদ-সমাবেশ করবো না। আমরা রাজপথে নামবো। হয় পুলিশের গুলিতে শহীদ হবো, না জেলে যাবো।’ যেমন ঘোষণা তেমন কাজ দেখা যায় ১৯শে সেপ্টেম্বর। সে দিনের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারহন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলমসহ ২৪ নেতা-কর্মী। এরপর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ আরও ১১ জনের নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়। তারপর থেকেই শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতা রয়েছেন আত্মগোপনে।
গতকাল মগবাজার কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়নিস্তব্ধতা। ক’জন নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া কেউ নেই অফিসে।তবে অফিসের বাইরে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের রয়েছে সতর্ক পাহারা। ১৯শে সেপ্টেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ও মহানগরের কোন নেতা অফিসে যাচ্ছেন না বলে জানান নিরাপত্তা কর্মীরা। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে দেখা হয় সমপ্রতি শিবির থেকে জামায়াতে যেগদানকারী তরুণ এক কর্মীর সঙ্গে। দলীয় কার্যালয়কার্যত বন্ধ এবং শীর্ষ নেতাদের আত্মগোপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ৭৭টি জেলা আমীর নির্বাচনসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজে অনেক নেতা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সুতরাং, দলীয় কার্যালয়ে অনুপস্থিত হলেও ভেতরে ভেতরে কাজঠিকই চলছে বলে দাবি করেন সাবেক এশিবির নেতা। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নামে ৫৮টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আসামিরসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। এ পর্যায়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিকূলতার কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় সারির নেতারা বর্তমানে গা-ঢাকা দিলেও তৃতীয়-চতুর্থ সারি বিশেষ করে তরুণ নেতা-কর্মীরা সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয় ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী আমির আলী ও মেছবাহের সঙ্গে। ১৯শে সেপ্টম্বরের পর এখানে কোন কর্মসূচি পালন এমনকি ঘরোয়া বৈঠকও হচ্ছে না। তবে মহানগর সেক্রেটারি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ এমপি মাঝে মধ্যে অফিসে যান বলে জানান তারা। পবিত্র ঈদুল আজহার দিন এখানে পুলিশের হামলার বর্ণনা দিয়ে তারা বলেন, অফিস ও আশপাশের দোকান কর্মচারীদের জন্য ওইদিন এখানে দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কোন সভা-সমাবেশ এমনকি মিলাদও ছিল না। কিন্তু তার পরও পুলিশ উপস্থিত লোকজনের ওপর হামলা চালায়। লাথি মেরে খাবার টেবিল ফেলে দেয়। এমন অমানবিক ঘটনা নজিরবিহীন। তারা বলেন, কোন ফাঁসির আসামিকেও খাবার থেকে বঞ্চিত করা হয় না। কিন্তু পুলিশ নিরীহ লোকজনকে ঈদের দিন খাবার থেকে বঞ্চিত করেছে। তারা বলেন, জামায়াত কোন নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল নয়। তবু গায়ের জোরে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত রাখা হয়েছে।তবে পবিত্র ঈদের দিন খাবার গ্রহণরত অবস্থায় লোকজনের ওপর হামলা সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেনতারা।দলের আমীর মাওলানামতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ৫ শীর্ষ নেতার মুক্তিসহবিভিন্ন দাবিতে প্রায় পৌনে তিন বছর ঘরোয়া সভা-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন ছাড়া রাজপথে তেমন প্রকাশ্য কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। তবে ১৯শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর রাজপথে ব্যাপক শোডাউন করার পর প্রশাসনিক প্রতিকূলতায় পড়ে তাদের ঘরোয়া কর্মসূচিও বন্ধ হয়েযায়।

কোন মন্তব্য নেই :