বুকের দুধ বাড়াতে করণীয়
কোন মন্তব্য নেই
বুকে কম দুধ আসা অনেক মায়ের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন' এর সমাধান খুব সহজ। দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য মূলত যে বিষয়গুলোজরুরি সেগুলো হলো শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং বিশেষ কিছু খাবার খাওয়া যে খাবারগুলো দুধের পরিমাণ বাড়াতে সরাসরি সহযোগিতা করে।
শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম
বুকে দুধ কম এলে অনেক ক্ষেত্রে মাকে ‘অপয়া’ হিসেবে অপবাদ দেয়া হয়। কিন' বিষয়টি সম্পূর্ণই ভ্রান্ত। এরূপ অপবাদে মা মানসিকভাবে আরও বেশি ভেঙে পড়েনএবং এই মানসিক সমস্যাই মায়ের বুকে দুধ না আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এক্ষেত্রে মা এবং পরিবারের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর দুধ আসা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং মায়েরপুষ্টি যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে দুধ আসবে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক অশান্তি মায়ের বুকের দুধ তৈরিরপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এজন্য মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রামেরব্যবস্থা করতে হবে। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট বিশেষ নিয়মে শবাসন করতে হবে।
শবাসনের নিয়ম
মা বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে আরামের সঙ্গে শুয়ে পড়বেন (বিছানা বা মেঝেতে পাটি বিছিয়ে)। হাত দুটি শরীরের দুই পাশে থাকবে। দুই পায়ের মাঝে আধা হাত পরিমাণ ফাঁকা থাকবে। হালকাভাবে চোখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে লম্বা করে দম নিয়ে মুখ দিয়ে দম ছাড়তে হবে (পাঁচ-ছয়বার)। এরপর কিছুক্ষণ (দুই-তিনবার) স্বাভাবিকভাবে দমনিতে হবে। এরপর নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিয়ে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে দম ছাড়তে হবে। দম নেয়ার চেয়ে ছাড়ার সময় একটু বেশি হবে। এরপর মনের চোখে নিঃশ্বাসের প্রবেশপথে মনোযোগ দিতে হবে। এতে শরীর ভারী ভারী অনুভব হবে। এবার চিন্তা করবেন বিশাল ফাঁকামাঠে নরম ঘাসের ওপর আপনি শুয়ে আছেন। শীতকাল হলে চিন্তা করবেনহালকা গরম বাতাস আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। গরমকাল হলে চিন্তা করবেন হালকা শীতল বাতাসআপনার শরীরে পরশ বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। এবার চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ চিন্তা করবেন। পাখির কলতান, ঝরনার ছলছলআর পাতার ঝিরিঝিরি শব্দ ও রঙ, ফুলের মিষ্টি সুবাস প্রভৃতি। এবার আপনার শিশুকে কল্পনায় প্রচুর পরিমাণে আনন্দের সঙ্গে দুধ পান করাতে থাকবেন।
তার সঙ্গে খেলবেন, হাসবেন। ঘুমানোর সুযোগ থাকলে ঘুমিয়ে পড়বেন অথবাধীরে ধীরে মাথা, হাত-পা নাড়বেন এবং উঠে যাবেন।
পানি পান
প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি পানের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। ভাতের সঙ্গে কাঁচা লবণ খেতে হবে (অতিরিক্ত পানি খাওয়ার কারণে যাতে শরীরে লবণের ঘাটতি না হয়)। তবে যাদের হাইপ্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ আছে তারা কাঁচাবা পাতে লবণ খাবেন না।
ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে যত ঘন ঘন দুধ দেবেন ততবেশি দুধ আসতে থাকবে। বাচ্চা যদি খুব কম দুধ পান করে সে ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে দুধ চিপে ফেলে দেবেন। প্রথম ছয় মাস প্রতিদিন ৮-১০ বারবা বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী আরওবেশি বার দুধ পান করাতে হবে। একবারে ১০-২০ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে দুধ দেবেন।
খাবার
মাকে যতটুকু সম্ভব বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার (যেমন-মাছ, ডিম, দুধ প্রভৃতি) খেতে হবে। অতিরিক্ত দুধ তৈরিতে যে খাবারগুলো সরাসরি সহযোগিতা করেসেগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজর, শিম,বাদাম (চীনাবাদাম, কাজুবাদাম), কালোজিরার ভর্তা, লাউ, ডুমুর, পালংশাক, কলমিশাক, টমেটো প্রভৃতি।
বিশেষ সতর্কতা
দুধদানকারী মা যদি এইডস, যক্ষ্মা বা অন্য কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তবে দুধদানের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুমতি নিতে হবে। দুধদানের সময় মায়ের কখনোই কোক, পেপসি, স্প্রাপ্রাইটপ্রভৃতি কোমল পানীয় এবং চা, কফিপান করা ঠিক নয়। কারণ এগুলো থেকে ক্ষতিকর কিছু উপাদান মায়ের শরীরে এবং মায়ের শরীর থেকে দুধের সঙ্গে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এতে বাচ্চা অসুস' হয়ে পড়তে পারে।
লেখক : ডায়েটিশিয়ান

♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3

কোন মন্তব্য নেই :