মেহেরপুরে আদম ব্যাপারির খপ্পরে ২০ যুবক, নিখোঁজ ৩ পালিয়ে এসেছে ১৬ জন
কোন মন্তব্য নেই
মেহেরপুর প্রতিনিধি : আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ও ইসলাম নগর গ্রামের ২০ যুবক। টানা দুই মাস অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়ে নেপাল থেকে ১৬ যুবক পালিয়ে দেশে ফিরলেও ৪ যুবক এখনও নিখোঁজ রয়েছে। নেপালে দালালচক্রের হাতে জিম্মি আছে মেহেরপুর ও কুমিল্লা জেলার আরও ৪ জন। একই সঙ্গে পালিয়ে এসেছে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা জেলার আরও ৩ জন। তারা অর্থাভাবে বাড়ি ফিরতে না পেরে বর্তমানে আমঝুপি গ্রামে অবস্থান করছে। এদিকে প্রতারক আদম ব্যাপারির নামে অভিযোগ দায়ের সহ মিডিয়ার সামনে কথা বলায় তাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ছেলের ছবি বুকে নিয়ে প্রতিনিয়ত কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের আত্তাব আলী, আশরাফুল ও রাধাকান্তপুর গ্রামের ঝন্টুর বাবা-মা। সংসারে সুখ ফেরাতে জমি-জমা বিক্রি করে এবং চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। ১২ই সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে যাওয়ার পর তাদের আর কোন খোঁজ পায়নি পরিবারের লোকেরা। তারা এখন কোথায় আছে তাও জানাচ্ছে না প্রতারক চক্রের হোতা আমঝুপি গ্রামের আদম ব্যাপারি সাফায়েত হোসেন ওরফে সাফা ও তার সহযোগীরা। মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতনে রাজ মিস্ত্রির কাজ দেয়ার নাম করে জাল ভিসায় তাদের সঙ্গে আরও ১৭ যুবককে দিনাজপুর জেলার হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে নেপালে নিয়ে যায়। সেখানে কাকুর ভিটা নামক স্থানে তাদের সবাইকে একটি ছোট্ট ঘরে আটকে রাখে। ভয়ভীতি দেখিয়ে, আধা বেলা-এক বেলা খাবার দিয়ে কনসট্রাকশনের কাজ করিয়ে মালিকের কাছ থেকে বেতনের টাকা নিতো ওই চক্র। প্রতিবাদ করলেই তাদের ভয় দেখানোও শারীরিক নির্যাতন করা হতো। শেষে বাধ্য হয়ে নেপাল থেকে ভারত হয়ে দেশে পালিয়ে আসে ১৬ যুবক।
মেহেরপুরের এই চক্রের সঙ্গে কাজকরছে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা জেলারকয়েকজন দালাল। তারাও একই সঙ্গে কয়েকজনকে নেপালে পাঠায়। এদের মধ্যে তিনজন পালিয়ে এসে মেহেরপুরে অবস্থান করছে।মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের নেপাল ফেরৎ আবদুল মজিদ জানান, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালেরদালাল মিলে একটি চক্র জাল ভিসা ওপাসপোর্ট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বিদেশ পাঠিয়ে সর্বস্বান্ত করছে। প্রতারক চক্রের হোতা আমঝুপি গ্রামের আদমব্যাপারি সাফায়েত হোসেন ওরফে সাফা মোটা অংকের বেতনের আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোক সংগ্রহ করে ভারতীয় দালাল গনেশের হাতে তুলে দিচ্ছে। গনেশ তাদেরকে ভারতীয় সীমান্ত পার করে নেপালেরদালাল ববি খাঁনের হাতে তুলে দেয়। আর সেখানেই অবস্থান করছে বাংলাদেশে আমঝুপি গ্রামের দালালচক্রের আরেক সদস্য সাইফুল ইসলাম। সেখানে সাইফুল এবং ববি খাঁন মিলে বাংলাদেশী প্রবাসীদের নিয়ে জোরপূর্বক কাজ করিয়ে নেয়া হয়। মাস শেষে তারা বেতনের টাকা তুলে আত্মসাৎ করে। বিনিময়ে বাংলাদেশী প্রবাসীদের তিন বেলা খেতে দেয়া হয় না।
ময়মনসিংহের নেপাল ফেরৎ যুবক শফিক জানান, আমঝুপি গ্রামের আদম ব্যাপারি সাফায়েত হোসেন ওরফে সাফার সঙ্গে ময়নসিংহের এক দালালতার সঙ্গে যোগাযোগ করে। টাইলস মিস্ত্রির কাজ দেয়ার নাম করে নেপালে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে কাজ না দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানোরনাম করে কাগজের একটি পাসপোর্ট দেখিয়ে আরও ১ লাখ ৪০ টাকা হাতিয়েনেয়। পরে তাকে মেডিকেল করানো হলেও আজ কাল করে তাকে আর মালয়েশিয়ায় পাঠায়নি দালালচক্রটি। তিনি আরও জানান, নেপালে বসে বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের এ দালালচক্রটি আরও অনেকজাল ভিশা তৈরি করে বাংলাদেশের অনেক জেলার যুবকদের সঙ্গে যোগযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।
মেহেরপুরের আমঝুপি গ্রামের আবদুর রহিম পচা জানান, আমঝুপি, ইসলাম নগর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লার নেপাল ফেরৎ যুবকদের ভারত থেকে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার যুবকরা তার আশ্রয়ে আছে। মিডয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করারকারণে গ্রামের ২০ যুবক ও তাকে দালালচক্রের সদস্যরা হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে থানায় মামলা দিতে গিলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা নথিভুক্ত করেননি। ফলে তার কোর্টে মামলা করার চিন্তা করছেন। অভিযুক্ত সাফায়েত হোসেন ওরফে সাফা পলাতক রয়েছে। তার বাড়িতে গিয়ে দরজায় তালা লাগানো দেখা যায়।

কোন মন্তব্য নেই :