ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লেন সেই ছাত্রী
কোন মন্তব্য নেই
যৌন হয়রানির শিকার সেই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছেন। ২৮শে মার্চ ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ১ম বর্ষের ওই ছাত্রী বিভাগেরই এক শিক্ষক দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন। এরপর বিভাগের কয়েকটি পরীক্ষা হলেও তিনি অংশ নেননি। ক্লাসেও আর তাকে দেখা যায়নি। বিভাগের চেয়ারম্যান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ৩১শে মার্চ ওই ছাত্রী বিভাগের শিক্ষক ড. আবু মুসা আরিফবিল্লাহর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন। অভিযোগের পর শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। ছুটির পর ওই শিক্ষক ছাত্রী এবং তার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন। ওই বিভাগে খোঁজ নিয়েযায়, ৩১শে মার্চের পর আর ছাত্রীকে দেখা যায়নি। গত ১৩ই জুলাই অনুষ্ঠিত ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেননি। এছাড়া মিডটার্ম পরীক্ষাতেও অংশ নেননি। ক্লাসেও অংশ নেন না। তার সহপাঠীদের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা আগামী মাসে। কিন্তু ওই ছাত্রীকে দেখা যাচ্ছে না। বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহসীন উদ্দীন মিয়া বলেন, ওই ছাত্রী ক্লাসে অংশ নিচ্ছে না এটা সত্য ঘটনা। কেন ওই ছাত্রী বিভাগ ছেড়ে দিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা মুশকিল। তবে ওই ঘটনা তার জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ওই ছাত্রী জীবনের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে। এটা হয়তো তার মধ্যে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছে। সূত্র জানায়, ১ম বর্ষের ১ম সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে বিভাগের শিক্ষক ড. আবু মুসা আরিফ বিল্লাহ ফোন করে তার কক্ষে দেখা করতে বলেন। আরিফ বিল্লাহর কক্ষ নম্বর ৪০২৮। ওই ছাত্রী তার এক বান্ধবীকে নিয়ে আরিফ বিল্লাহর সঙ্গে ২৮শে মার্চসকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা করতে কলাভবনে যান। আরিফ ওই ছাত্রীর জন্য কলাভবনের গেইটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি দুই ছাত্রীকে নিয়ে ৪০২৮ নম্বর কক্ষেযান। গিয়ে দেখেন বিভাগের আরেক শিক্ষক আবুল কালাম সরকার টিউটোরিয়াল ক্লাস নিচ্ছেন।। আরিফ বিল্লাহ দু’ছাত্রীকে নিয়ে কলাভবনের চতুর্থ তলার ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ান। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা কথাবার্তা বলেন। এক পর্যায়ে এক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দেন। এ দৃশ্য দেখে অপর ছাত্রী দৌড়ে বিভাগে গিয়ে বিষয়টিজানায়। বিভাগের অপর শিক্ষার্থীরা কলাভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখেন ওই ছাত্রী কেঁদে কেঁদে কলাভবনের চতুর্থ তলা থেকে নামছে। ওই ছাত্রী আর ক্লাসে ফিরে যায়নি। চলে যায় বাসায়। পরে বিভাগে গিয়ে চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ড. আবু মুসা আরিফ বিল্লাহর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে বিচার দাবি করে। সেসঙ্গে বিভাগের অন্য ছাত্রীরাও আরিফ বিল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। আরিফ বিল্লাহকে বিভাগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে ছাত্রীরা চেয়ারম্যান ড. মো. মুহসীন উদ্দীনমিয়াকে অবরুদ্ধ করে। চেয়ারম্যান সুষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলে ছাত্রীরা অবরোধ তুলে নেয়। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২রা এপ্রিল একাডেমিক কমিটির জরুরি বৈঠকে ওই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটির আবেদন করানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে থাকলে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, ছাত্রীর কোন অভিযোগ থাকলে আমার কাছে অভিযোগ করতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটি রয়েছে। ছাত্রীর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আরও কয়েকটি ঘটনা: ওই ছাত্রীর অভিযোগই শুধু নয়। বিশ্ববিদ্যায়ে এখন যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আলোচিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকঅধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ড.এমরাইন হুসাইন, মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. কামাল উদ্দিনকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে। তাদের বিরুদ্ধে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটিও। একই অভিযোগে আন্দেলোনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন ট্যুরিজম বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফজাল হোসেন।পরিসংখ্যানের শিক্ষক এহসান উদ্দীনকেও বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছিল ছাত্রদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে।
ছাত্রীর অভিযোগ: চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগে ছাত্রী জানায়, “বিনীত নিবেদন এই যে, গত ২৮শে মার্চ সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় আমি ও আমার বান্ধবী মো. আরিফ বিল্লাহ স্যারের রুমের সামনে তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। একপর্যায়ে তিনি হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে ও আমার গালে চুমো দেন।এই ঘটনায় আমি ভেঙে পড়ি ও মানসিকভাবে খুবই মর্মাহত হই। অতএব, বিনীত নিবেদন এই যে, একজন শিক্ষকের এরূপ আচরণের প্রতিকার ও বিচার প্রার্থনা করছি।” by www.mzamin.com

কোন মন্তব্য নেই :