চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে চিঠি, ১৩ বছর বয়সেই মেয়ের বিয়ে দিতে চায় পরিবারটি
কোন মন্তব্য নেই
মহিউদ্দীন জুয়েল, চট্টগ্রাম থেকে: মেয়েটি পড়ালেখায় অনেক ভাল। তার স্কুলের স্যাররা জানালেন, সে যা পড়ে তা হুবহ লিখতে পারে। বোঝার শক্তিও বেশি।অথচ যে মেয়েটিকে নিয়ে কথা হচ্ছে তার বাবা-মার আশঙ্কা যেন কমছেই না। কি হতে কি হয়ে যায়!
ঘরের বাইরে তাদের অনেক শত্রু। তাই ১৩ বছর বয়সেই মেয়ের বিয়ে দিতে চান পরিবারটি। আর এজন্য বর্তমানে তার পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। গোপনে এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ের দিনক্ষণও মোটামুটি চূড়ান্ত করেছেন। মেয়েটির পিতা ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। ওদিকে মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করে তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা মাদরাসায়। বর্তমানে এ মাদরাসার ৮ম শ্রেণীতে (দাখিল) পড়ছে আলেয়া ইয়াসমিন নামের ওই ছাত্রী। পড়ালেখায় সে যেমন মেধাবী, তেমনি তার চেহারা ও লাবণ্য অনেক বেশি উজ্জ্বল। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। মেয়েটির গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ির আমতলীতে। পিতা আবুল কাশেম দীর্ঘদিন বিদেশ থাকেন।
মাদরাসার শিক্ষকরা জানান, ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী আলেয়ার বয়স মাত্র ১৩ বছর ৮ মাস। পড়ালেখায় রয়েছে তার তীব্র আগ্রহ। এবারের জেডিসি পরীক্ষায় তার অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এর আগে আলেয়া স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষায় ৮টি বিষয়ে অংশগ্রহণ করে সবগুলোতে উত্তীর্ণ হয়েছে। বাকি দু’টি পরীক্ষায় তাকে অংশ নিতে দেয়নি পরিবার। তার পরিবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেয়েটিকে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। পারিবারিক অবস্থা খুব বেশি ভাল না হওয়ায় তারাও পড়ালেখা চালাতে আর আগ্রহী নন। বিয়ের খবর জানার পরপরই মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এরপর কান্নাকাটি করতে করতে স্কুলের স্যারদের কাছে ঘটনাটি জানায়। এক পর্যায়ে বিষয়টি টের পেয়ে তার পরিবার স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়।এ প্রসঙ্গে পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করার পর তারা কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।
মেয়েটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট সারোয়ারউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। জানতে চাইলে তিনিমানবজমিনকে বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পর পরই আমরা গত রোববার মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় পাঁচলাইশ থানার ওসির কাছে লিখিত আবেদন করেছি। এতে মেয়েটির বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য তাদের জোর অনুরোধ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে মেয়েটির পরিবারকে নিয়ে। এ মেয়েটিকে নিয়ে কিছুতেই তাদের ভয়কাটছে না। তাই তারা সহজে আমাদের কথাও শুনছেন না।’
মেয়েটির পড়ালেখা নিশ্চিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এখনও আমাদের দেশের অনেক পরিবারকে অকালেই মেয়েদের বিয়ে দেয়ার কথা চিন্তা করতে হয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
রিপোর্ট,Manobzamin.com
এই সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত দিন ?

কোন মন্তব্য নেই :